সংক্ষিপ্ত

  • পৃথিবীতে এমন অনেক ঘটনাই ঘটেছে
  • যেগুলি ঘটনার আগেই লেখকেরা কল্পনা করেছেন
  • শুধু কল্পনা নয় রূপ দিয়েছিলেন বইয়ের পাতায় 
  • পরবর্তীতে সেগুলি সত্যি সত্যিই পৃথিবীতে ঘটেছিল 

পৃথিবীতে এমন অনেক ঘটনাই ঘটেছে যেগুলি ঘটার আগেই লেখকেরা সে সব ঘটনার কল্পনা করেছেন। অনেকটা রাম জন্মানোর আগেই রামায়নের মতো। রামায়ন তো তাও প্রথমে লেখা হয়নি তা লোকমুখেই প্রচলিত ছিল। কিন্তু এখানে এমন কতগুলি ঘটনার কথা আসবে যা শুধুমাত্র লেখকের কল্পনাতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি তা বইয়ের পাতায় যেমন পেয়েছিল প্রাণ এবং পরবর্তীতে সেগুলি  একসময় সত্যি সত্যিই ঘটে।   

১৯১২ সালে আটলান্টিক মহাসাগরে ভাসমান আইসবার্গের সঙ্গে সংঘর্ষে দুই টুকরো হয়ে ডুবে যাওয়া টাইটানিকের ইতিহাস নিয়ে রচিত হয়েছে সাহিত্য, তৈরি করা হয়েছে সিনেমা। বিস্ময়কর ঘটনা হল, টাইটানিকের সলিলসমাধির প্রায় ১৪ বছর আগেই ব্রিটিশ সাহিত্যিক মরগান রবার্টসন একটি কাহিনি লিখেছিলেন ‘ফুটিলিটি, অর দ্য রেক অফ দ্য টাইটান’। সেই কাহিনিটি ছিল আইসবার্গের আঘাতে টাইটান নামে একটি জাহাজের ডুবে যাওয়ার ঘটনা। আরও বিস্ময়কর হচ্ছে, টাইটানিকের মতো মরগানের টাইটানও উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরেই ডুবে গিয়েছিল। ১৮৯৮ সালে প্রকাশিত তাঁর বই-এর কাহিনি অনুযায়ী টাইটান ছিল তখন পর্যন্ত তৈরি সবচেয়ে বড় যাত্রীবাহী জাহাজ।  যার ডুবে যাওয়া ছিল অসম্ভব ব্যাপার। একইভাবে ১৯১২ সালে টাইটানিক জাহাজ তৈরির পর বলা হয়েছিল, টাইটানিক তখন পর্যন্ত তৈরি সবচেয়ে বড় জাহাজ এবং টাইটানিকের ডুবে যাওয়াও অসম্ভব ব্যাপার। কিন্তু সেই অসম্ভব সম্ভব হয়েছিল। 

সায়েন্স ফিকসান বা কল্পকাহিনির দুনিয়ায় বহুল পরিচিত নাম আর্থার সি ক্লার্ক। তাঁর ‘২০০১: আ স্পেস ওডিসি’ কাহিনিতে একধরনের নিউজপ্যাডের কথা উল্লেখ করেছিলেন। ১৯৬৮ সালে প্রকাশিত সেই বই অনুসারে নিউজপ্যাড হচ্ছে এমন একটি যন্ত্র, যা সহজে যেখানে খুশি সেখানেই বহন করা যায়। সেখানে চাওয়ামাত্রই বিশ্বের যে কোনো তথ্য কিংবা সংবাদ এসে হাজির হয়। স্ট্যানলি কুব্রিক ১৯৬৮ সালে ‘২০০১: আ স্পেস ওডিসি’ নামে যে ছবিটি বানিয়েছিলেন তা আসলে লেখকের ছোটগল্প ‘দ্য সেনটিনেল’-এর অনুপ্রেরনায়। লেখক এবং পরিচালক মিলে সেই ছবির চিত্রনাট্য লিখেছিলেন। পরে ১৩০ পাতার চিত্রনাট্য থীকেই তার উপন্যস খাড়া করেছিলেন। অবাক ঘটনা হল আর্থার সি ক্লার্ক-এর সেই উপন্যাস প্রকাশের ৪২ বছর পর এক কাকতালীয় ঘটনা ঘটে। ২০১০ সালে, স্টিভ জবস যখন তাঁর আইপ্যাড নিয়ে এলেন, দেখা গেল, আর্থার সি ক্লার্কের নিউজপ্যাডের বর্ণনার সঙ্গে তা হুবহু মিলে যাচ্ছে।

মার্কিন লেখক এডওয়ার্ড বেলামির লেখা লুকিং ব্যাকওয়ার্ড ১৮৮৮ সালে প্রকাশিত হয়। সে সময় বিশ্বজুড়ে চলছিল অর্থনৈতিক মন্দা। সেই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র জুলিয়ান ওয়েস্ট ১৮৮৭ সালের কোনও একদিন গভীর ঘুমে ঢলে পড়েন। সেই ঘুম থেকে তিনি যখন ওঠেন, তখন ২০০০ সাল। আমেরিকা তত দিনে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হয়ে গিয়েছে। জুলিয়ান ওয়েস্ট একদিন আধুনিক বাজারে যান এবং জিনিসপত্র কেনেন তার বিনিময়ে তিনি টাকা পয়সার বদলে একটি  কার্ড দেন। এবং সেই কার্ড পাঞ্চ করে য়ে তার কেনাকাটা করা জিনিসের দাম নেওয়া হয়। আজকে যে ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড ব্যবহার করা হয় এডওয়ার্ড বেলামি সেতা ১৮৮৭ সালে কল্পনা করেছিলেন। 
উল্লেখ করা যায় জুলভার্নের ১৮৬৫ সালে লেখা ‘ফ্রম দ্য আর্থ টু দ্য মুন’, এর প্রায় ১০০ বছর পরে ১৯৬৯ সালে নিল আর্মস্ট্রং ও এডউইন অলড্রিন চাঁদে পা রাখে। টম ক্ল্যান্সি তাঁর ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত ডেবট অব অনার কল্পনায় যে বিমান হামলার কথা লিখেছিলেন তার সঙ্গে ২০০১ সালের টুইন টাওয়ারে হামলার অনেকটাই মিল রয়েছে।