সংক্ষিপ্ত

কাতার যথেষ্টই তীব্র উষ্ণ তাপমাত্রার দেশগুলির মধ্যে অন্যতম। মরুভূমির উপরে এই দেশের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের নিচে আসে না। যার ফলে তীব্র দাবদাহের হাত থেকে বাঁচতে এই দেশে এসি-তে থাকাটা সকলেরই বাধ্যতামূলক। সেখানে একটি এয়ারটাইট বাসের মধ্যে এসি ছাড়া ৪ ঘণ্টা বন্দি হয়ে থাকা মানে হার্টফেল হওয়া ছাড়া কোনও গতি থাকে না। 

টানা ৪ ঘণ্টা। একটা স্কুল বাস। যেখানে চালু ছিল না কোনও বাতানুকূল যন্ত্র। বলতে গেলে একটা এয়ার-টাইট কন্টেনারের মধ্যে ফেঁসে থাকা। তারমধ্যে বাইরের তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গিয়েছে। এমনভাবে বন্দিদের কপালে যা লেখা থাকে সেটাই হয়েছে। চার বছরের মিনশা মারিয়াম জ্যাকব-ও একই পরিণতিতে পৌঁছেছে। ৪ ঘণ্টা পরে বাস থেকে মিনশার অচৈতন্য শরীরটা উদ্ধার করা হয়। হাসপাতালে নিয়ে গেলেও শেষরক্ষা আর হয়নি। কাতারের আল ওয়াকরা-র এই ঘটনা সেইখানকার সরকারকেও নাড়িয়ে দিয়েছে। মিনশার মৃত্যুতে যেমন তার কিন্ডারগার্ডেন স্কুলকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, তেমনি গ্রেফতার করা হয়েছে বাসের তিন কর্মীকে। 

মিনশার বাবা-মা-র বাড়ি কেরলে। বাবার নাম অভিলাশ চাকো। মা সৌমিয়া। তিনি আবার কাতার বিশ্বকাপ ফুটবলে সিনিয়র গ্রাফিক ডিজাইনার হিসাবে কাজ করছেন। জানা গিয়েছে, রবিবার সকালে স্কুলের গাড়িতে করে বেরিয়ে গিয়েছিল মিনশা। গাড়িতেই সে ঘুমিয়ে পড়েছিল। কিন্তু, মিনশাকে খেয়াল করেনি গাড়ির কর্মীরা। সব বাচ্চা নেমে গিয়েছে ধরে নিয়ে তারা এসি বন্ধ করে নেমে যায় এবং গাড়িতে তালা লাগিয়ে দেয়। গাড়ির মধ্যে কোনও ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থাও ছিল না। 

বিকেলে গাড়ির কাছে ফিরে আসে কর্মীরা। দরজা খুলে তারা মিনশাকে অচৈতন্য অবস্থায় গাড়ির ভিতরে পরে থাকতে দেখে। তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়েও যাওয়া হয়।  কিন্তু চিকিৎসকরা মিনশাকে মৃত বলে ঘোষণা করে। গাড়ির ভিতরে তীব্র দমবন্ধ পরিস্থিতি মিনশার প্রাণ কেড়ে নিয়েছে বলে জানান চিকিৎসক। ঘটনার খবর পৌঁছতেই নড়ে চড়ে বসে কাতার সরকারের শিক্ষা মন্ত্রক। এই ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রক। শিশু মৃত্যুদের গাফিলতির প্রমাণ পেলে কড়া পদক্ষেপের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে সর্বোচ্চ শাস্তির জন্য আবেদন জানাতে বলা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তেই প্রকাশ যে স্কুল বাস থেকে পড়ুয়াদের আনার বিষয়ে যে গাইডলাইন রয়েছে তা মিনশার স্কুল অনুসরণ করেনি। এই কারণে, আপাতত মিনশার স্কুলকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে গাড়ির তিন কর্মীকেও। তারা ভুল হয়ে গিয়েছে মতোর বয়ান দিলেও কাতার সরকার একে অতি গুরুতর অপরাধ বলে মনে করছে। এছাড়াও স্কুলের বিরুদ্ধে আরও কড়া পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, মিনশার নিথর শরীর কোচিতে পৌঁছেছে। সেখানেই তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। দুই বোনের মধ্যে মিনশা ছোট। তার দিদি কাতারেই এমইএস ইন্ডিয়ান স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। মিনশার মৃত্যু পরিবারের কেউ মেনে নিতে পারছেন না। স্কুল বাস-এর লোকজন কেন বাসটা চেক করে দেখলো না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা। ছোট্ট মিনশার পরিবারের কাছে খুবই আদরের ছিল। যার জন্য পুরো পরিবারই এখন শোকে বাকরুদ্ধ।