সংক্ষিপ্ত
যুদ্ধে বিধ্বস্ত ইউক্রেন। এখনও হামলা বন্ধ করেনি রুশ সেনা। যতদিন যাচ্ছে ততই নৃশংস হচ্ছে রুশ সেনাবাহিনী। একের পর এক সাধারণ মানুষকে হত্যা করছে নির্মমভাবে- তেমনই অভিযোগ ইউক্রেনের।
কিয়েভে প্রায় ১২০০টি দেহ উদ্ধার হয়েছে। রাশিয়ান সেনাবাহিনীর নৃশংসতার প্রমান সেই দেহগুলি। গত সপ্তাহের শেষদিকে এই এলাকায় ব্যপক বোমা হামলা চালিয়েছিল রাশিয়ার সেনা বাহিনীর। সেই কারণেই মৃত্যু হয়েছে ইউক্রেনের সাধারণ মানুষের। যদিও দেশের অধিকাংশ মানুষই দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। কিন্তু যাঁরা যেতে পারেননি তাদের বেছে বেছে হত্যা করছে রুশ সেনারা। এমনটাই অভিযোগ করেছে জেনেনস্কি প্রশাসন।
বুচা- এই শহরে আগেই রাশিয়ান সেনা বাহিনী কয়েক হাজার সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে। বুচা শহরে রুশ বাহিনী নির্মমভাবে হত্যা লীলা চালিয়েছে। সাধারণ নিরস্ত্র মানুষকে এই এলাকায় যেভাবে হত্যা করা হয়েছে তা বর্বরতা ছাড়া আর কিছুই নয় বলেও মন্তব্য করেন ইউক্রেনের প্রসিকিউটর। তিনি বলেন ম্যানহোলের ভিতর থেকেও উদ্ধার হয়েছে নিথর দেহ। বোমার আঘাতে যাদের মৃত্যু হয়নি তাদের হাত পা বেঁধে রুশ সেনারা হত্যা করেছে । রাষ্ট্রসংঘের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ইউক্রেনে এখনও পর্যন্ত ৪ হাজার ২৩২ জন সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
রবিবার সকালে উত্তর-পূর্ব খারকিভে বোমা হামলায় দুই জনের মৃত্যু হয়েছিল বলে জানিয়েছেন গভর্নর ওলেগ সিনেগুভব। তিনি বলেছেন, আগেই এই শহরের দক্ষিণ-পূর্বে বোমার হামলায় একটি শিশুসহ ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে জয় হাসিল করতে না পেরে রুশ বাহিনী এবার টার্গেট করছে দেশের সাধারণ মানুষকে।
একটা সময় প্রায় ১ কোটি মানুষ বসবাস করত ডিনিপ্রোতে। কিন্তু গত কয়েক দিনে এই শহরকে টার্গেট করেছে রুশ বাহিনী। ক্রমাহত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালান হচ্ছে। ধ্বংশ করে দেওয়া হয়েছে বিমানবন্দর। তবে এই শহরে হতাহতের সংখ্যা এখনও স্পষ্ট করে জানা যাচ্ছে না।
ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি জেলেনস্কি আবারও রুশ সেনাবাহিনীর তীব্র নিন্দা করেছেন। তিনি বলেছেন, রাশিয়ান বাহিনী ইচ্ছেকৃতভাবে ইউক্রেনের সাধারণ মানুষদের হত্যা করছে। জার্মান ট্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজের সঙ্গে কথা বলার পর তিনি আরও বলেছেন যুদ্ধাপরাধী সকল মানুষকে চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়া হবে। ইউক্রেনেপ প্রসিকিউটর জেনারেল ইরিনা ভেনেডিক্টোভা বলেছেন তাঁরা রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনসহ ৫০০জন রুশ শীর্ষকর্তাকে ইতিমধ্যেই দোষী সাব্যস্ত করেছে।
হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্ট জ্যাক সুলিভান বলছেন, এজাতীয় গণহত্যার জবাবদিহি করতে হবে রাশিয়াকে। অন্যদিকে ভ্যাটিকানের পোপ ফ্রান্সিস শান্তির জন্য ইস্টারে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের তীব্র নিন্দা করেছেন তিনি। সাধারণ নাগরিকদের গণহত্যার প্রসঙ্গ তুলে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
অন্যদিকে জেলেনস্কি এখনও পর্যন্ত হার স্বীকার করতে রাজি নন। তিনি বলেছেন ইউক্রেন সেনা রুশ বাহিনীকে যোগ্য জবাব দেবে। ইউক্রেন সেনা আরও বড় যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতিত নিচ্ছে। ইউক্রেন প্রশাসন এখনও স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য কাজ করছে। প্রতিদিনই আড়াই হাজার মানুষকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। ইউক্রেনের প্রশাসন অসুস্থদেরও সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। অসুস্থদের জন্য বিশেষ ট্রেন চালু করা হয়েছে।
রাশিয়ার এই জাতীয় হামলার নিন্দার পাশাপাশি ইউক্রেন রুশ সংবাদ মাধ্যমকেও একহাত নিয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় এখনও ইউক্রেন প্রশাসন তৈরি রয়েছে। কিন্তু রুশ মিডিয়া নিজের দেশের শ্রষ্টত্ব প্রচার করছে। যা দুই দেশের আলোচনায় অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা।