সংক্ষিপ্ত

কানাডার পণ্যের উপর ২৫% শুল্ক আরোপের ট্রাম্পের ঘোষণায় আমেরিকার অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

আমেরিকা-কানাডা বাণিজ্য যুদ্ধ

আমেরিকার নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই নানা চমকপ্রদ পদক্ষেপ নিয়েছেন। বিদেশিদের আমেরিকান নাগরিকত্ব লাভের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ, তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিদের উপর নিষেধাজ্ঞা, শরণার্থীদের প্রবেশে বাধা সৃষ্টি ইত্যাদি।

এরই ধারাবাহিকতায় ফেব্রুয়ারি ১ তারিখ থেকে কানাডা এবং মেক্সিকো থেকে আমদানি করা পণ্যের উপর ২৫% শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। আমেরিকার কানাডার প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করায় দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত হবে আমেরিকা

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ট্রাম্পের এই ঘোষণার তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। “আমেরিকা যদি কানাডার পণ্যের উপর উচ্চহারে শুল্ক আরোপ করে, তাহলে আমরাও পাল্টা ব্যবস্থা নেব। আমেরিকার জনগণের জন্য প্রায় সবকিছুর দাম বেড়ে যাবে। আমি মনে করি না ট্রাম্প এটা চাইবেন।”

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, কানাডার সাথে শত্রুতা করলে আমেরিকারই বেশি ক্ষতি হবে। আমেরিকার প্রতিবেশী দেশ কানাডা এবং মেক্সিকো। ট্রাম্প যদিও বলছেন আমেরিকার কানাডার প্রয়োজন নেই, কিন্তু আমেরিকার প্রতিদিনের তেলের চাহিদার প্রায় এক-চতুর্থাংশ আসে কানাডা থেকে।

কি ধরনের ক্ষতি?

শুধু তেলই নয়, ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম এবং ইউরেনিয়াম সহ ৩৪টি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থের জন্য আমেরিকা কানাডার উপর নির্ভরশীল। ট্রাম্প যদি কানাডার পণ্যের উপর উচ্চহারে শুল্ক আরোপ করেন, তাহলে মোটরগাড়ি, কাঠ শিল্প এবং তেলের বাজারে মূল্যবৃদ্ধির ঝুঁকি তৈরি হবে। এতে আমেরিকার জনগণই সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

এছাড়াও, ট্রাম্প যদি কানাডার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেন, তাহলে কানাডা আমেরিকার কমলালেবুর রস, বাথরুমের সামগ্রী এবং কিছু ইস্পাতজাত পণ্যের উপর শুল্ক আরোপ করতে পারে। ট্রাম্পের কানাডার বিরোধিতা এবারই প্রথম নয়। আগের মেয়াদেও তিনি কানাডার ইস্পাত এবং অ্যালুমিনিয়ামের উপর শুল্ক আরোপ করেছিলেন। এর প্রতিক্রিয়ায় কানাডাও আমেরিকান পণ্যের উপর শুল্ক আরোপ করেছিল।

কানাডাকে এড়িয়ে চলা সম্ভব নয়

ডোনাল্ড ট্রাম্প যদিও কানাডাকে এড়িয়ে যেতে চান, কিন্তু আমেরিকার পক্ষে তা সম্ভব নয়। প্রতিদিন প্রায় ২.৭ বিলিয়ন আমেরিকান ডলার, অর্থাৎ ৩.৬ বিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার মূল্যের পণ্য এবং সেবা আমেরিকা-কানাডা সীমান্ত পার হয়। চীনের পরে আমেরিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম আমদানিকারক দেশ হলো কানাডা।

কানাডা থেকে অবৈধভাবে শরণার্থী এবং মাদকদ্রব্য আমেরিকায় প্রবেশ করছে, যা ডোনাল্ড ট্রাম্প পছন্দ করেন না। এ কারণেই তিনি কানাডার উপর ক্ষুব্ধ এবং এই দেশের উপর নির্ভরতা কমাতে চান বলে মনে করা হচ্ছে।

জাস্টিন ট্রুডোর জবাব

“কানাডার পণ্যের উপর উচ্চহারে শুল্ক আরোপ করলে কানাডার যেমন ক্ষতি হবে, তেমনি আমেরিকারও ক্ষতি হবে। আমেরিকায় প্রবেশ করা অবৈধ মাদকদ্রব্যের এক শতাংশেরও কম এবং অবৈধ অভিবাসীদের এক শতাংশেরও কম আসে কানাডা থেকে। এটা প্রতিরোধ করার জন্য আমরা এক বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করে আমাদের সীমান্তকে শক্তিশালী করছি।” – এই বলে আমেরিকাকে জবাব দিয়েছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো।