সংক্ষিপ্ত
মহিলাদের জন্য প্রায় নরক হয়ে উঠছে তালিবানি শাসনের আফগানিস্তান। আফগানিস্তানের তালিবান সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে একটি কঠোর আইন জারি করেছে শুধুমাত্র মহিলাদের কণ্ঠশ্বর রুখতে। প্রকাশ্যে মহিলাদের আচরণ কী কী হবে তাও সেই আইনে নিশ্চিত করা হয়েছে। ২০২১ সালে আফগানিস্তানের ক্ষমতায় ফেরার পর এটাই মহিলাদের জন্য সবথেকে কঠোর আইন বলেও মনে করেছে অনেকে।
তালিবানের সর্বোচ্চ নেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা নতুন কঠোর আইনের অনুমোদন দিয়েছেন। পাশাপাশি বুধবার নতুন আইন প্রচারের নির্দেশও দিয়েছেন। তাঁর কথায় আইনগুলি দেশের মানুষের দৈনন্দিন জীবন নিয়ন্ত্রণ করবে। আইনগুলি মেনে চলা হচ্ছে কিনা তাও দেখা হবে।
নতুন জারি করা ১৪৪ পৃষ্ঠার নথিতে রয়েছে ৩৫টি ধারা। সেখানে দাবি করা হয়েছে ইসলামিক আইনের ব্যাখ্যা কার্যকর করার জন্য তালিবান সবরকম চেষ্টা করছে। আর সেই কারণে মহিলাদের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। মহিলাদের আচরণ কী হবে আর কী হবে তাও নির্দিষ্ট করে বলা হয়েছে। এই নতুন আইনে বলা হয়েছে, জনসমক্ষে বা প্রকাশ্যে মহিলাদের আচরণ কেমন হবে। এই আইনে বলা হয়েছে প্রকাশ্যে বা জনসমক্ষে এলে মহিলাদের পুরো শরীর ঢেকে রাখতে হবে। মুখ সম্পূর্ণ ঢাকা থাকবে। মহিলারা কখনই আঁটোসাঁটো পোশাক পরতে পারবে না। তাদের সর্বদাই ঢিকেঢালা শরীর ঢাকা পোশাক পরতে হবে। ছোট পোশাক পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে আফগানিস্তানে।
নতুন আইনের ১৩ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, মহিলারা কোনও রকম কার্যকলাপে অংশ নিতে পারবে না। আইনে বলা হয়েছে মহিলাদের কণ্ঠস্বর উত্তেজক। তাই গান গাওয়া, আবৃত্তি করা বা চিৎকার করে বই পড়া- কোনও কিছুই জনসমক্ষে তারা করতে পারবে না। এই আইনে বলা হয়েছে, নারীরা নিজের স্বামী বা রক্তের সম্পর্ক নেই এমন কোনও পুরুষের দিকে তাকাতে পর্যন্ত পারবে না।
আফগানিস্তানের নতুন আইনে ১৭টি জীবন্ত প্রাণীর ছবি প্রকাশ করা নিষিদ্ধ হয়েছে। গানবাজনা করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আর নিষিদ্ধ করা হয়েছে মহিলাদের একক ভ্রমণ। পাবলিক প্লেসে পুরুষ ও মহিলা একত্রে চলাফেরাও নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কোনও একা মহিলার পক্ষ একা সওয়ারি হওয়াও আটকে যাচ্ছে নতুন আইনে।
এই আইনগুলি ভাঙলে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে বলেও বলা হয়েছে নতুন আইনে। গ্রেফতার করা হচে পারে। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মৌলভী আব্দুল গাফর ফারুক নতুন আইনের পক্ষে বক্তব্য রেখে বলেন, "ইনশাআল্লাহ, আমরা আপনাকে আশ্বস্ত করছি যে এই ইসলামী আইনটি পুণ্যের প্রচার এবং পাপ দূরীকরণে অনেক সহায়ক হবে।" মন্ত্রকের ওয়েবসাইটটি ইসলামিক গুণাবলীর প্রচারে এর ভূমিকার রূপরেখা দেয়, যার মধ্যে প্রার্থনাকে উত্সাহিত করা, ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের প্রতি আনুগত্য করা এবং মহিলারা হিজাবের আদেশ মেনে চলা নিশ্চিত করা।
আফগানিস্তানের তালিবান সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে বলে অভিযোগ তুলেছে রাষ্ট্রসংঘ। তাদের রিপোর্টে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করা হয়েছে। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে তালিবানি শাসন বিশেষ করে মহিলাদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অবস্থায় তালিবালিনা রাষ্ট্র সংঘের প্রতিবেদন অস্বীকার করে নিজেদের অবস্থানে অনড় রয়েছে।
আরও খবরের জন্য চোখ রাখুন এশিয়ানেট নিউজ বাংলার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।