সংক্ষিপ্ত
১৯৫০-এর দশকে ভারতের বিহার রাজ্যের মানভূম জেলায় বাংলা ভাষা আন্দোলন ঘটে। ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দের ভারতের অসম রাজ্যের বরাক উপত্যকায় একইরকম ভাবে বাংলা ভাষা আন্দোলন সংঘ ভাষা বঙ্গ অঞ্চলের বাঙালি অধিবাসীর মাতৃভাষা।
দেশভাগের সময়, ১৯৪৭ সাল। পূর্ব বাংলায় বাংলা ভাষাভাষী প্রায় ৪ কোটি ৪০ লাখ মানুষ। পাকিস্তান পাবলিক সার্ভিস কমিশন অনুমোদিত বিষয় তালিকা থেকে বাংলাকে বাদ দেয় এবং একই সঙ্গে মুদ্রার নোট এবং স্ট্যাম্প থেকে বাংলা-ভাষাকে মুছে ফেলা হয়। পাকিস্তানের সরকার, করাচিতে জাতীয় শিক্ষা সম্মেলনে শুধুমাত্র উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা এবং স্কুল ও মিডিয়াতে ব্যবহার করার প্রস্তাব করা হয়। সঙ্গে সঙ্গে পূর্ব প্রান্তে এর প্রতিবাদ দেখা দেয়। রাতারাতি দুভাগে ভাগ হয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যবর্তী অংশে পড়ে কাঁটা তারের বেড়াজাল। ঢাকায় ছাত্ররা তমদ্দুন মজলিসের প্রতিষ্ঠাতা আবুল কাসেমের নেতৃত্বে র্যালি বের করে। বৈঠকে বাংলাকে পাকিস্তানের একটি সরকারি ভাষা এবং পূর্ব বাংলার শিক্ষার মাধ্যম করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে,
পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রী ফজলুর রহমান উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেন। এতে বাঙালি জনগণ বিক্ষুব্ধ হয় এবং ছাত্রদের একটি বড় অংশ আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাকে একটি সরকারী ভাষা করার দাবিতে ১৯৪৭ সালের ৮ ডিসেম্বর ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জমায়েত হয়।
এর জন্য ছাত্ররা ঢাকায় মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে। এরপর ১৯৫৪ সালের ৭ মে গণপরিষদে মুসলিম লীগের সমর্থনে বাংলা আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা লাভ করে। ১৯৫৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি বাংলা পাকিস্তানের দ্বিতীয় জাতীয় ভাষা হিসাবে স্বীকৃতি পায় এবং সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২১৪ (১) পুনর্লিখিত হয় এভাবে "পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু এবং বাংলা"। আইয়ুব খানের নেতৃত্বে গঠিত সামরিক সরকার উর্দুকে একমাত্র জাতীয় ভাষা হিসেবে পুনরস্থাপনের চেষ্টা চালায়। ৬ জানুয়ারি ১৯৫৯-এ সরকার একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে ১৯৫৬ সালের সংবিধানের দুই রাষ্ট্র ভাষা নীতি সমর্থনের সরকারি অবস্থান পুনর্বহাল করে। এই আন্দোলন স্মৃতিরক্ষায় গণহত্যার স্থানে একটি আনুষ্ঠানিক এবং প্রতীক ভাস্কর্য শহীদ মিনার স্থাপন করা হয়। দিনটি বাংলাদেশে এবং পরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে শহীদ দিবস হিসাবে পালিত হয়। এই দিনটি বাংলাদেশে সরকারী ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। ইউনেস্কো ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়।
ইউনেস্কোর ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বরের সাধারণ অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে বাংলাদেশের জমা দেয়া এবং অন্যান্য ২৮ টি দেশের সমর্থনে জমা দেওয়া খসড়া প্রস্তাবটি গ্রহণ করে। ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সহ পশ্চিমবঙ্গ তথা সমস্ত বাংলা ভাষা ব্যবহারকারী জনগণের গৌরবোজ্জ্বল একটি দিন। এটি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবেও সুপরিচিত। বাঙালি জনগণের ভাষা আন্দোলনের গৌরবোজ্জ্বল স্মৃতি-বিজড়িত একটি দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। ১৯৫২ সালের এই দিনে (৮ ফাল্গুন, ১৩৫৮, বৃহস্পতিবার) বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণে কয়েকজন তরুণ শহীদ হন। শহীদদের মধ্যে অন্যতম হল রফিক, জব্বার, শফিউল, সালাম, বরকত সহ অনেকেই। তাই এ দিনটি শহীদ দিবস হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়।
বাংলাদেশ ছাড়াও ১৯৫০-এর দশকে ভারতের বিহার রাজ্যের মানভূম জেলায় বাংলা ভাষা আন্দোলন ঘটে। ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দের ভারতের অসম রাজ্যের বরাক উপত্যকায় একইরকম ভাবে বাংলা ভাষা আন্দোলন সংঘ ভাষা বঙ্গ অঞ্চলের বাঙালি অধিবাসীর মাতৃভাষা। স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ এবং ভারতের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা নিয়ে এই অঞ্চল গঠিত। এছাড়া ভারতের অসম রাজ্যের দক্ষিণাংশেও এই ভাষা বহুল প্রচলিত। ভারতের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের অধিকাংশ অধিবাসী বাংলা ভাষায় কথা বলে থাকেন।