সংক্ষিপ্ত
- মা আসছে তাই শুরু হয়ে গিয়েছে তারই প্রস্তুতি
- এই মা দুর্গা জগৎজননী বলেও খ্যাত
- এই মা দুর্গা আসলে কে তা নিয়ে আছে এক কাহিনী
- মা দুর্গার স্বরূপ নিয়ে বলেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দও
মা আসছে তাই সর্বত্র শুরু হয়ে গিয়েছে তারই প্রস্তুতি। এই মা দুর্গাকে নিয়ে আছে নানান কাহিনী। এই মা দুর্গা আসলে কে বা তার জগৎজননী হয়ে ওঠা পেছনে আছে এক কাহিনী। মা দুর্গার সেই কাহিনী বলতে গেলে উঠে আসে নানা তথ্য। সেই তথ্য জানতে হলে ঘাটতে হবে পুরাণও।
তৈত্তেরীয় আরণ্যকে প্রথম দুর্গা শব্দের উল্লেখ পাওয়া যায়। সেদিক থেকে দেখতে গেলে শব্দটা যে একটি প্রাচীন শব্দ তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। দুর্গা শব্দের অর্থ যিনি সর্ববিধ দুঃখ, দুর্গতি ও ভয় হরণ করেন তিনিই দুর্গা। স্কন্দপুরাণে বলা হয়েছে যে রুরুদৈত্যের পুত্র দুর্গাসুরকে বধ করায় "তত্রৈব চ বধিষ্যামি দুর্গমখ্য মহাসুরম্"। শুধু রুরুকেই নয় তিনি বিভিন্ন সময় বহু অত্যাচারী দৈত্যাদি যেমন মধুকৈটভ, শুম্ভনিশুম্ভ, মহিষাসুর, দুর্গামাসুর ইত্যাদি অত্যাচারী দৈত্যাদিকে বিনাশ করে জগৎবাসীর দুর্গতি নাশ করেছিলেন বলেই তিনি দুর্গা নামে পরিচিত। প্রচলিত ধারণা অনুসারে যিনি বিভিন্ন প্রকার বাধা বিঘ্ন, রোগ-শোক, পাপভয়, শত্রু ও বিপদ থেকে মুক্ত করেন তিনিই দুর্গা।
আরও পড়ুন- তেল-কালিমাখা হাতে স্বপ্নের ক্যানভাসে, রং ধরান মোটর মেকানিক অমর পাল
এই দুর্গা আবার জগতের কল্যাণকারী তাই তিনি জগৎজননী। তিনি ভক্তদের ধর্ম, অর্থ, কাম, মোক্ষ দান করেন বলেই তিনি সর্ব কামার্থদায়িনী। তিনি জগতের অন্নদাতা, তাই তিনি অন্নদা। রুদ্রের ঘরনি তাই তিনি রুদ্রাণী। শত অক্ষির দ্বারা তিনি সকল কিছুই লক্ষ করে থাকেন বলেই তিনি শতাক্ষী। তিনি পরম বৈষ্ণব তাই তিনি বৈষ্ণবী, তার অঙ্গকান্তি গৌরবর্ণা তাই তিনি গৌরী এবং পর্বত দুহিতা তাই পার্বতী। তিনি বহু নামের অধিকারনী। স্বরূপত তিনি এক ও অভিন্ন এবং অনন্য শক্তির রূপে রূপান্তরে প্রকাশ হওয়ায় তিনি মহাশক্তি মহামায়া।
বিভিন্ন দেবতার তেজপুঞ্জে সৃষ্টি হয়েও তিনি সমস্ত তেজের উৎস রূপেই প্রতিভাত তেজময়ী। এই দেবীই মহিষাসুরকে দমন করার পর শাস্ত্রমতে শিবের পায়ে প্রবেশ করে। তাই বলা হয়ে থাকে এই দুর্গা আসলে রুদ্রপন্তী উমা, অম্বিকা, হৈমবতী, দুর্গা , গৌরী, ভবানীর মিলিত দৈব সত্তা। ভাবপ্রবণ বাঙালির কাছে তিনি পরিপূর্ণ ভাবেই শিবপত্নী শিবানী বা দুর্গা। তাই দুর্গা প্রতিমার চালচিত্রে দুর্গার মাথার উপরে শিবের অবস্থান। সেই সঙ্গে তার দুর্গার দুপাশে তাঁর সন্তান সন্ততির অবস্থান। যে রূপে শারদীয়া দুর্গা পুজোতে দুর্গা পুজিত হন।
এই দেবী দুর্গা আমাদের রক্ষাকর্ত্রী তাই চন্ডীতে বলা হয়েছে-
বিসৃষ্টৌ সৃষ্টিরূপাতংস্থিরূপা চপালনে।
তথাসংহৃতি রূপান্তে জগতোহস্য জগন্ময়ে।।
দেবী দুর্গার স্বরূপ প্রসঙ্গে স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন- "ভারতের নারীর সর্ববিধ রবপের মধ্যে মাতৃমূর্তী সবার উপরে। মা সর্বাবস্থায় সন্তানেরম পাশে পাশে থাকেন। স্ত্রী-পুত্র মানুষকে ত্যাগ করতে পারে কিন্তু মা কখনও সন্তানকে ত্যাগ করতে পারেনা। আবার মাতৃশক্তিই পক্ষপাত শূন্য মহাশক্তি। মায়ের কাছে প্রতিনিয়ত অকুন্ঠ শরণাগতিই আমাদের শান্তি দিতে পারে। তাঁহার জন্যই তাহাকে ভালোবাসো ভয়ে নয় বা কিছু পাওয়ার আশায়ও নয়। তাহাকে ভালোবাসো কারণ তুমি সন্তান। যখন তাহাকে আমরা এই রূপে অনুভব করি, তখনই আমাদের মনে আসে সমত্ব ও চিরশান্তি- এটাই মায়ের স্বরূপ।"