সংক্ষিপ্ত
বিয়ের জন্য কোনো পাত্রকেই মনে ধরেনি তাঁর। এদিকে কনে সাজার ইচ্ছে মারাত্মরকমের। তাহলে উপায়? শেষে নিজের সঙ্গেই বিয়ের পিঁড়িতে বসলেন তরুণী। ঘটনাটি গুজরাটের। আর এই খবর এখন ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। কারণ এটাই ভারতের প্রথম কোনও বিয়ে যেখানে একজন নিজেই নিজেকে বিয়ে করছে।
১১ জুন এক ঐতিহাসিক বিয়ের সাক্ষী থাকতে চলেছে দেশ। গুজরাটের ভাদোদরার তরুণী নিজের সঙ্গেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে চলেছেন। কারণ? মনের মত বর তিনি খুঁজে পাননি। কনে সাজবার অনেক সাধ কোন মেয়ের হয় না। আর বিশেষ করে সেই মহিলা যদি বিবাহযোগ্যা হয়ে থাকেন। পাত্রের অপেক্ষায় আর সময় নষ্ট করতে রাজি নন বছর আঠাশের কশামা বিন্দু। তাই শেষমেশ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নিজেই নিজেকে বিয়ে করবেন। সব আয়োজন প্রায় পাকা। নিজের সঙ্গে নিজের বিয়ে মানে এমনটা নয় যে তাতে কোনও আচার পালন হবে না! কশামা সবকিছুই পালন করতে চান যাতে কোনওভাবেই এই বিয়েকে কেউ ঠাঠ্ঠার ছলে উড়িয়ে দিতে পারে।
বিয়েতে থাকছে কন্যাদান পর্ব থেকে সিঁদুর-দান, অগ্নিকে সাক্ষী রেখে সাতপাক ঘোরা, বিয়ের মন্ত্র- সব কিছুই। বাদ কেবল বর এবং বরযাত্রী। নিজের সঙ্গে সারাজীবনের গাঁটছড়া বাঁধতেই প্রতিজ্ঞা করেছেন কশামা বিন্দু।
নিজের সঙ্গে নিজের বিবাহ এর আগে ভারতবর্ষে হয়েছে বলে কেউ চট করে খেয়াল করতে পারছেন না। এই ধরনের বিয়েকে সোলোগামি সোলো ম্যারেজ বলা হয়। কশামা বিন্দুকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, এমন বিয়ের ভাবনা কেন? তাঁর উত্তর, 'আমরা যদি নিজেরা নিজেদের ভালবাসতে পারি, তাহলে কেন বিয়ে করতে পারবো না?’ কশামা জানিয়েছেন, তিনি নিজেকেই সবচেয়ে বেশি ভালবাসেন। আর তাঁর সেই ভালবাসা জাহির করতে কোনও লজ্জা নেই।
কশামার যুক্তি, ‘বিয়ে দু’টি মানুষ ভালোবেসে একসঙ্গে থাকার কথা বলে। আমি যদি নিজেকে ভালবাসি তা হলে নিজেকে বিয়ে করতে আপত্তি কোথায়?’ কিন্তু সুখ-দুঃখে পরস্পরের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার! নিজের সঙ্গে বিয়েতে কি সেই প্রতিশ্রুতি পালন করা সম্ভব? কশামা জানিয়েছেন, ‘বিয়ের দিন আমি নিজেকে নিঃশর্ত ভালবাসার অঙ্গীকার করব, আমি যেমন সে ভাবে নিজেকে মেনে নেওয়ার অঙ্গীকার করব। এমনকি, প্রয়োজনে নিজের পাশে থাকারও অঙ্গীকার করব।’ কশামার দাবি বিয়েতে আর কি চাওয়ার থাকতে পারে!
কশামার বিয়েতে সম্পূর্ণ সমর্থন রয়েছে তাঁর বাবা-মায়ের। তবে একটি যৌক্তিক উদ্দেশ্যও আছে গুজরাটের কনের। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর এই নিজগামিতার আরও একটি উদ্দেশ্য রয়েছে। তিনি প্রমাণ করতে চান, মেয়েরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। পুরুষের ওপর তারা নির্ভরশীল নয়।
১১ জুন গুজরাতের গোত্রীর এক মন্দিরে নিজেকে বিয়ে করবেন ক্ষমা। বিয়ের জন্য পাঁচটি অঙ্গীকার ভেবে রেখেছেন তিনি। বিয়ের পর ক্ষমা মধুচন্দ্রিমার পরিকল্পনাও করে রেখেছেন। দু’সপ্তাহের মধুচন্দ্রিমায় নিজের সঙ্গে গোয়ায় ঘুরতে যাবেন তিনি।
সমাজবিদ্যায় স্নাতক ক্ষমা আপাতত এক বেসরকারি সংস্থাতে কর্মরত। ক্ষমার বাবা থাকেন দক্ষিণ আফ্রিকায় এবং মা থাকেন আহমেদাবাদে। বাবা-মাকে এই বিয়েতে রাজি করাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে গিয়েছে তাঁর। অবশেষে তাঁরা অবশ্য রাজি হয়েছেন। বন্ধুদের উপস্থিতিতে এক মন্দিরে নিজেকে বিয়ে করবেন তিনি। তার বাবা-মা ভার্চুয়ালি উপস্থিত থাকবেন ভিডিও কলে। কশামা বিয়েতে পরার জন্য নিজের জন্য একটি লেহঙ্গাও কিনেছেন। অনেক কষ্টে এক পুরোহিতকেও তিনি রাজিও করাতে পেরেছেন। ক্ষমার মতন বিয়ে ভারতে এই প্রথমবার হলেও বিদেশে কিন্তু এমন বিয়ের চল গত কয়েক বছর ধরে দেখা গিয়েছে। ২০১৭ তে ব্রাজিলের সুপারমডেল আদ্রিয়ানা লিমা নিজেকে বিয়ে করেন।