সংক্ষিপ্ত
কলকাতা ডার্বিতে কোনও দলকে এগিয়ে রাখা যায় না। যে পরিস্থিতিই হোক না কেন, বাঙালির আবেগ-উত্তেজনার বড় ম্যাচ সবসময় ৫০-৫০। শনিবার সেটা ফের প্রমাণ হয়ে গেল।
'অতি দর্পে হত লঙ্কা', এই প্রবাদ বোধহয় খেয়াল ছিল না মোহনবাগান সচিব দেবাশিস দত্তর। ম্যাচের আগেই তিনি সদর্পে ঘোষণা করে দিয়েছিলেন, 'ইস্টবেঙ্গল হেরে যাবে।' লাল-হলুদ কর্তাদের ব্যঙ্গও করেছিলেন সবুজ-মেরুন সচিব। অতীতে প্রয়াত কোচ অমল দত্ত, মোহনবাগান সভাপতি স্বপনসাধন বসুও ইস্টবেঙ্গলকে ব্যঙ্গ করার ফল পেয়েছিলেন হাতেনাতে। সেই ইতিহাসেরই পুনরাবৃত্তি হল শনিবার। গড়ের মাঠের প্রবাদ, 'পিছিয়ে থাকা ইস্টবেঙ্গল খোঁচা খাওয়া বাঘ।' পরপর ৮টি ডার্বি জিতে সবুজ-মেরুন শিবির আত্মতুষ্ট হয়ে পড়েছিল। মোহনবাগান কোচ-ফুটবলাররাও ধরে নিয়েছিলেন, গত কয়েকটি ডার্বির মতো এবারও তাঁরা সহজ জয় পাবেন। কিন্তু কলকাতা ডার্বিতে সাধারণত সহজ জয় পাওয়া যায় না। লড়াই করেই জয় ছিনিয়ে নিতে হয়। শনিবার সেই লড়াইয়েরই সুফল পেল ইস্টবেঙ্গল। উল্লাসের আকাশ থেকে বাস্তবের রুক্ষ মাটিতে আছড়ে পড়ল মোহনবাগান।
ম্যাচের আগে মোহনবাগান কোচ হুয়ান ফেরান্দো নিজেদের দলকে এগিয়ে রেখেছিলেন। তাঁর দলের অস্ট্রেলিয়ান স্ট্রাইকার দিমিত্রিওস পেট্রাটসও বলেছিলেন, তাঁরাই এগিয়ে। অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপার জেসন কামিংস, আলবানিয়ার হয়ে ইউরো কাপে গোল করা আর্মান্দো সাদিকু, আইএসএল জেতানো পেট্রাটস, হুগো বুমোস, মনবীর সিং, লিস্টন কোলাসো, আশিস রাই, আশিক কুরুনিয়ান, জাতীয় দলের তারকা আনোয়ার আলি, অনিরুদ্ধ থাপা, সাহাল আবদুল সামাদকে নিয়ে সহজ জয়ের আশায় ছিল সবুজ-মেরুন শিবির।
অন্যদিকে, ইস্টবেঙ্গল কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাত জানতেন, এই ম্যাচ তাঁকে কলকাতা ময়দানে প্রতিষ্ঠা দিতে পারে। সেই কারণে তিনি সতর্ক ছিলেন। মোহনবাগানকে সমীহ করেও বলেছিলেন, 'আমি এমন একটা দলের কোচ যারা হারার আগে হারে না।' হেভিয়ের সিভেরিও, বোরহা হেরেরা, জর্ডন এলসে, সল ক্রেসপো, নন্দকুমার, নাওরেম মহেশ সিং, মন্দার রাও দেশাই, হরমনজ্যোত সিং খাবরা, প্রভসুখন গিলের মতো ফুটবলার যে দলে আছেন, সেই দলকে খাটো করে দেখা যায় না। লাল-হলুদ জার্সিতে শুরুতেই ডার্বিতে জয়সূচক গোল করে নায়ক হয়ে গেলেন নন্দকুমার।
মোহনবাগানের বিশ্বকাপার কামিংসকে নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। লিওনেল মেসির সঙ্গে তাঁর ছবিতে ছেয়ে গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া। কিন্তু অন্তত শনিবারের ম্যাচে দেখা গেল, যতটা ভালো বলা হচ্ছিল এই স্ট্রাইকারকে, ততটা গুরুত্ব পাওয়ার মতো ফুটবলার তিনি নন। ৬৯ মিনিটে ম্যাচের সহজতম সুযোগ নষ্ট করেন কামিংস। বক্সের মধ্যে ফাঁকায় বল পেয়েও তিনি তেকাঠিতে বল রাখতে ব্যর্থ হন। ইস্টবেঙ্গলের সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার লালচুংনুঙ্গার সঙ্গে টক্কর দিতে না পেরে তাঁর জার্সি ধরে টেনে ফেলে দেন বিশ্বকাপার। মেজাজ হারিয়ে খাবরাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেন সাহাল। ২টি ক্ষেত্রেই কার্ড দেখাননি রেফারি। এদিন মোহনবাগানের হয়ে সবচেয়ে ভালো পারফরম্যান্স দেখান আনোয়ার। সাদিকুর খেলাও চোখে পড়েছে। কিন্তু দলগতভাবে অসাধারণ লড়াই করে জয় পেল ইস্টবেঙ্গল।
আরও পড়ুন-
নন্দকুমারের অসাধারণ গোল, ১৬৫৮ দিন পর কলকাতা ডার্বি জয় ইস্টবেঙ্গলের
Lionel Messi : ৫ ম্যাচে ৮ গোল! লিগস কাপে ইন্টার মায়ামির সুপারহিরো লিওনেল মেসি
অভিনব উদ্বোধন! ডুরান্ড কাপের ট্রফি নিয়ে ৬৫ তলা থেকে ঝাঁপ দুই সেনাকর্তার