সংক্ষিপ্ত
২৩ জুলাই আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন টোকিও অলিম্পিক্সের। টোকিওর জাতীয় স্টেডিয়াম অনুষ্ঠিত হবে ঐতিহাসিক অলিম্পিক মশালের প্রজ্জ্বলনের অনুষ্ঠান। তার আগে জেনে নিন অলিম্পিক মশালের ইতিহাস।
মশাল দৌড় অলিম্পিকের অন্যতম সেরা ঐতিহ্য। রীতি অনুযায়ী প্রতি অলিম্পিক শুরুর আগে ওই মশাল বিশ্বের বিভিন্ন দেশ প্রদক্ষিণ করে পৌছায় যে শহরে অলিম্পিক হবে সেখানে। অলিম্পিকের অমর চেতনার প্রতীক এই শিখার যাত্রা শেষ হয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে, স্টেডিয়ামের চুড়ায় অলিম্পিক মশাল প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে। এর পর ১৪ দিন ধরে তা জ্বলতে থাকে। নেভানো হয় অলিম্পিকের শেষ দিন। পরের অলিম্পিক শুরুর আগে ঠিক একইভাবে শুরু হয় এই যাত্রা।
এই অলিম্পিক মশালের পেছনে রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস ও পৌরানিক কাহিনিও। যা যুগ পরিবর্তনের সঙ্গে আধুনিক হলেও, সেই ঐতিহ্য বহন করে আসছে প্রাচীন থেকে বর্তমান অলিম্পিক। ইতিহাস ও পুরাণ থেকে জানা যায়, পশ্চিম গ্রীসের অলিম্পিয়া নামে একটি জায়গায়, যেখানে প্রায় তিন হাজার বছর আগে প্রাচীন অলিম্পিকের সূচনা হয়েছিল। এখানেই ঘন্টাখানেকের একটি অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে সূর্যের আলো থেকে জ্বালানো হয় সেই অগ্নিশিখা, যা ক্রীড়ানুষ্ঠান শেষ হবার আগে পর্যন্ত কখনোই নেভে না। আগুন জ্বালানো হয় মাটিতে রাখা একটি অবতল আয়না থেকে । এতে সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয়ে এমন তাপের সৃষ্টি করা হয় যা থেকে মশাল জ্বালানো যায়। এগারোজন মহিলার মধ্যে থেকে একজন শিখা প্রজ্জ্বলন করেন।
এরপর তা থেকে জ্বালানো হয় আরেকটি অলিম্পিক মশাল - যা তুলে দেয়া হয় একজন ক্রীড়াবিদের হাতে। এ ছাড়াও তুলে দেয়া হয় একটি জলপাই গাছের শাখা। আরেকজন উড়িয়ে দেন একটি সাদা পায়রা, যা শান্তির প্রতীক। এই অলিম্পিয়াতেই ৭৭৬ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে শুরু হয়েছিল প্রাচীন যুগের অলিম্পিক - যা অনুষ্ঠিত হতো প্রতি চার বছর পর পর। সেখানে ছিল গ্রীক দেবতাদের রাজা জিউসের মন্দির, এবং তার সম্মানেই অনুষ্ঠিত হতো ক্রীড়ানুষ্ঠান। আজ সে মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ ছাড়া আর কিছুই নেই।
প্রাচীন অলিম্পিকে মশাল দৌড়ের প্রচলন থাকলেও,আধুনিক অলিম্পিকের শুরুতেই সেই সংস্কৃতি উধাও হয়ে যায়। ১৯২৮ সাল থেকে অলিম্পিক মশাল পুনরায় চালু হলেও, ছিলনা মশাল দৌড়ের কোনও ব্যাপারই। এই মশাল দৌড় শুরু হয় নাত্সী জমানায়। উনিশশো ছত্রিশ সালে বার্লিন অলিম্পিকে নাত্সি জোসেফ গোয়েবলসের তত্ত্বাবধানে শুরু হয় অলিম্পিকে মশাল দৌড়। গ্রীস থেকে মশাল বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে পৌঁছয় বার্লিনে।গ্রীস থেকে বার্লিন-দীর্ঘ তিন হাজার একশো সাতাশি কিলোমিটার পথ তিন হাজার তিনশো একত্রিশজন দৌড়বীরের হাত ধরে পৌঁছয় অলিম্পিকের মূল স্টেডিয়ামে।পরবর্তীতে অলিম্পিক মশাল দৌড় শুধুমাত্র স্থলপথে নয়,জলপথে এমনকি আকাশপথেও পৌঁছেছে বিভিন্ন দেশে। প্রথমবার উনিশশো আটচল্লিশ সালে অলিম্পিক মশালকে ইংলিশ চ্যানেল পার করাতে ব্যবহৃত হয়েছিল নৌকা। উনিশশো বাহান্নতে হেলসিঙ্কি অলিম্পিকে আকাশপথে মশাল নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এমনকি ১৯৭৬ সালে রেডিও সিগন্য়ালের মাধ্যে অলিম্পিকের শিখার প্রেরণ করা হয়েছিল ও তা প্রযুক্তির মাধ্য প্রজ্জ্বোলিত হয়েছিল।
অলিম্পিকের রেওয়াজ অনুযায়ী আয়োজক দেশের মূল স্টেডিয়ামে মশাল দৌড়ের শেষে অলিম্পিক কলড্রন বা বিশাল কড়াইয়ের মত অলিম্পিক মশালের আধারে আগুন জ্বালান বিখ্যাত কোনও ক্রীড়াবিদ ।যেমন উনিশশো বাহান্নতে জ্বালিয়েছিলেন পাভো নুরমি।বিরানব্বইয়ে প্লাতিনি,ছিয়ানব্বইয়ে মহম্মদ আলি। ২০১৬ সালে মশাল জ্বালিয়েছিলেন জর্জ গোমেজ। শুক্রবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ২০২০ টোকিও অলিম্পিক্সের। ফলে আর কিছু ক্ষণের অপেক্ষা তারপরই টোকিও জাতীয় স্টেডিয়াম কোনও বিশেষ ব্যক্তিত্বের হাতে সম্পন্ন হবে এই ঐতিহাসিক অনুষ্ঠান। আরও এক ইতিহাসের সাক্ষী তাকতে চলেছে ক্রীড়া বিশ্ব।