সংক্ষিপ্ত
বিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় অগ্রগতিগুলির মধ্যে একটি হল জিনোম সিকোয়েন্সিং (Genome Sequencing)। কৃষি থেকে স্বাস্থ্য পরিষেবা, কীভাবে বদলে দিচ্ছে এই প্রযুক্তি?
বিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় অগ্রগতিগুলির মধ্যে একটি হল সমগ্র মানুষের ডিএনএ (DNA) ক্রম, অর্থাৎ আমাদের জিনোমের (Genome) সুনির্দিষ্ট পাঠোদ্ধার করা। ডিএনএ ম্যাপিং (DNA Mapping) বিশ্বব্যাপী জিনোমিক্সের (Genomix) ক্ষেত্রে উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করেছে। কি এই জিনোমিক্স? জিনোমিক্স হল, কোনও জীবের জিনের পরিপূর্ণ অধ্যয়ন - একে অপরের সঙ্গে তাদের মিথস্ক্রিয়া এবং তাদের পরিবেশের সাথে সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জন।
সহজভাবে বলতে গেলে, সমস্ত জীবন্ত প্রাণীর একটি জিনোম থাকে, যা জীবের বৃদ্ধি এবং পরিবেশে টিকে থাকার জন্য একটি নির্দেশিকা হিসাবে কাজ করে। একজন ব্যক্তির জিনোম সিকোয়েন্স করার মাধ্যমে, আমরা সেই ব্যক্তির জেনেটিক পরিচয়ের সূক্ষ্মতা খুঁজে বের করতে পারি। ফলে, ওই ব্যক্তির স্বাস্থ্যের অবস্থার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে আরও ভাল অন্তর্দৃষ্টি পাওয়া যায়। জিনোম সিকোয়েন্সিং, মানব জীববিজ্ঞান, ওষুধ, কৃষি, নির্ভুল ডায়াগনস্টিকস এবং ফার্মাসিউটিক্যালস-এ যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে।
জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের অগ্রগতির ফলে, উদ্ভাবনী কৌশল ব্যবহার করে রোগ নির্ণয়, চিকিত্সা এবং রোগ প্রতিরোধের বিষয়ে উল্লেখযোগ্য উন্নতি করা গিয়েছে। গত দুই বছর ধরে যে কোভিড-১৯ মহামারি চলছে, এই অভূতপূর্ব সময়ে, জিনোম সিকোয়েন্সিং কোভিড-১৯ সৃষ্টিকারী সার্স-কোভ-২ (SARS-CoV-2) ভাইরাসের জীববিজ্ঞান এবং বিবর্তন সম্পর্কে আরও ভাল ধারণা অর্জনে সহায়তা করে চলেছে। বিশ্বজুড়ে ভাইরাসের আরএনএ-এর প্রাথমিক সিকোয়েন্সিং এবং এর জেনেটিক ডেটা শেয়ার করার ফলে দ্রুত রোগ নির্ধারণ এবং ভ্যাকসিনের তৈরি সম্ভব হয়েছে।
ভারতেও সামাজিকভাবে জড়িত গোষ্ঠী এবং সম্প্রদায়গুলির সাথে একটি শক্তিশালী নাগরিক সমাজ রয়েছে, যারা জেনেটিক এডিটিং, বিশেষ করে কৃষি ক্ষেত্রে ব্যবহার করার বিষয়ে আগ্রহী। তবে জানা গিয়েছে, জিন সম্পাদনা প্রযুক্তি হিসাবে কোনও রোগের চিকিত্সা এবং স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে সহজে গ্রহণযোগ্য হলেও, কৃষি ক্ষেত্রে তার উল্টোটাই ঘটে থাকে। এই অবস্থায়, ক্ষেত্র ধরে ধরে প্রযুক্তিগত মূল্যায়ন করেই ভারতকে সতর্কতার সঙ্গে কৃষি ক্ষেত্রে জিনোম সিকোয়েন্সিং ব্যবহার করতে হবে বলে মনে করছেন জিনতাত্ত্বিকরা।
বছরের পর বছর ধরে, ভারত জিনোমিক্স এবং জেনেটিক্সের ক্ষেত্রে করা গবেষণা এবং তার প্রয়োগের তদারকি করার জন্য কঠোর নিয়ন্ত্রক নীতি তৈরি করেছে। গবেষণায় নিয়ন্ত্রক নীতি এবং নৈতিক প্রোটোকল অনুসরণ করা ক্ষেত্রে ভারত এক দুর্দান্ত মান অর্জন করেছে। শুধু তাই নয়, গরীব দেশের জনজাতির আর্থিক দুর্বলতা এবং জীবনযাপনের অনিশ্চয়তার কথাও বিবেচনা করেন ভারতের বিজ্ঞানী এবং গবেষকরা। শুধুমাত্র তাদের জীবনের মানোন্নয়নের কথা ভেবেই বেশ কিছু জিনোমিক্স এবং জেনেটিক্স প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে বৈজ্ঞানিক সমাধান পাওয়ার প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে।