সংক্ষিপ্ত
ভারতে এবার মহাকাশ থেকে আসছে ইন্টারনেট পরিষেবা। নতুন বছরের মার্চ মাস থেকেই শুরু হবে স্পেস ইন্টারনেট পরিষেবা।
স্মার্টফোন, ইন্টারনেটের যুগেও এখনও পিছিয়ে রয়েছে অনেক শহর ও গ্রাম। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ইন্টারনেট পরিষেবা(Internet Service) পৌঁছে গেলেও অনেক সময়ই ইন্টারনেটের স্পিড(Internet speed) নিয়ে রীতিমতো বেগ পেতে হয় ইউজারদের। মেট্রোপলিটান শহরে হাই স্পিড ইন্টারনেট পরিষেবা বেশ ভালোই কিন্তু বেশ কিছু প্রত্যন্ত এলাকায় প্রায়ই ইন্টারনেট পরিষেবা নিয়ে তৈরি হয় সমস্যা। আর গ্রামগঞ্জে তা এখনও বহু দূর কি বাত। সেখানে তো ইন্টারনেট পরিষেবা সমস্যা প্রতিনিয়তই প্রকট হয়ে উঠছে। যত দিন না পর্যন্ত দেশের গ্রাম থেকে মফঃস্বলে ফাইবার বা সেলুলার কানেকশন পাঠানো হচ্ছে, তত দিন হাই-স্পিড ইন্টারনেট নাগালের বাইরেই থেকে যাবে। আর ঠিক সেই জায়গার বিকল্প হিসেবে কাজ করতে পারে ব্রডব্যান্ড ফ্রম স্পেস (Broadband From Space) এবার সরাসরি মহাকাশ থেকে পাওয়া যাবে ইন্টারনেট সার্ভিস। তাই নিঃসন্দেহে বলাই যায় নতুন বছরে ভারতের ঐতিহাসিক পদক্ষেপ, উপগ্রহের মাধ্যমে বদলে যাচ্ছে তথ্য প্রযুক্তি শিল্প। নতুন এই পরিষেবাটি কী সেটা সম্বন্ধে একটা সম্যক ধারনা তৈরি হওয়া দরকার। তাই জেনে নিন ব্রডব্যান্ড ফ্রম স্পেস বা BFS সার্ভিস কী?
এটি একটি হাই-স্পিড ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন, যা গ্রাহকের বাড়িতে বা অফিসে, মহাকাশের স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ইন্টারনেট ট্রাফিক পাঠিয়ে দেওয়ার যে পরিষেবা তার নাম ব্রডব্যান্ড ফ্রম স্পেস বা BFS। স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ড ডেটার স্পিড ৩০০ Mbps-এরও বেশি হতে পারে। কিন্তু প্রাথমিক ভাবে সেই স্পিড ১০০ Mbps-এর আশপাশেই থাকবে। একটি স্যাটেলাইট নেটওয়ার্কে রয়েছে জিওস্টেশনারি (GEO) বা লো-আর্থ অরবিট (LEO)স্যাটেলাইট। কোনও স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক অপারেশন হল আদতে একটি আর্থ স্টেশন গেটওয়ে, যা একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে অবস্থিত। স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ককে নেটে লিঙ্ক করার কাজটি করে গেটওয়ে। এই বিএফএস পরিষেবার সুবিধা উপভোগ করতে গ্রাহকের একটি ডিভাইসের প্রয়োজন হবে, যার পোশাকি নাম ইউজার অ্যাকসেস টার্মিনাল (UT) এবং একটি অ্যান্টেনা, যা স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ককে কানেক্ট করবে।
আরও পড়ুন-Samsung-শীঘ্রই হাতের মুঠোয় আসছে Samsung Galaxy A13,লঞ্চের আগেই ফাঁস হল তথ্য
এবার আলোকপাত করা যাক ভারতে এই স্পেস ইন্টারনেট পরিষেবা কারা চালু করছে তার ওপর। ভারতী এয়ারটেলের ওয়ানওয়েব এবং এলন মাস্কের স্পে এক্স ভারতে স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ড লঞ্চ করবে। লিও স্যাটেলাইটের মাধ্যমেই ভারতে ২০২২ সালে পৌঁছে যাবে এই ব্রডব্যান্ড পরিষেবা। পাশাপাশি কানাডার টেলস্যাট এবং অ্যামাজন-এর প্রজেক্ট কুইপার-ও ভারতে এই পরিষেবা নিয়ে হাজির হবে। এই সংস্থাগুলি ভারতে বিটুবি (বিজ়নেস টু বিজ়নেস) মডেল নিয়ে কাজ করবে। আর সেই সুবাদে গ্রাহকরা একেবারে দুয়ারে স্পেস ইন্টারনেট পৌঁছে দিতে দেশের একাধিক টেলিকম সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধতে চলেছে এই পরিষেবা প্রদানকারী। আমেরিকান সংস্থা হিউজেস ভারতে জিও স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক তৈরি করতে ৫০০ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করছে।
বলা বাহুল্য, স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ড পরিষেবার খরচ বেশ অনেকটাই। ভারতীয় মূল্যে প্রায় ১,৫০০ টাকা খরচ হতে পারে ১জিবি ইন্টারনেটের জন্য। স্যাটকম প্লেয়াররা কখনই সরাসরি বিদেশি স্যাটেলাইট ক্যাপাসিটি লিজ় নিতে পারে না। ভায়া হিসেবে তাদের কাজ করতে হয়। আর সেই ভায়া হিসেবে কাজ করতে গিয়েই খরচটা দ্বিগুণ হয়ে যায়। প্রসঙ্গত, লিজ়িংয়ের খরচা বিশ্বব্যাপী গড় খরচের প্রায় ১০ গুণ বেশি। ইউটিএস অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ার ফলে হাই-থ্রুপুট স্যাটেলাইটের নাগাল পাওয়া যায় না, যার বেস মডেলের জন্যই খরচ হতে পারে অন্তত ১০০০ মার্কিন ডলার। এখন পলিসি যদি পরিবর্তন করা যায় এবং ইউটি প্রাইস যদি ক্র্যাশ করে, তাহলে একমাত্র তখনই স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ডের প্রতি জিবি-র দাম ১০০ টাকা হতে পারে। তার ফলে ইউজার ভলিউমও একলাফে অনেকটাই বেড়ে যাবে। সেই সঙ্গে লিও স্যাটেলাইট প্রযুক্তিরও উন্নতি হওয়া প্রয়োজন, যাতে স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ডের খরচ একটু কম হয়।
দেশের নতুন স্পেসকম পলিসি চালু হতে চলেছে নতুন বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের মার্চ মাস থেকে। লিও স্যাটেলাইট অপারেটরদের জন্য লাইসেন্সের নিয়ম সংক্রান্ত স্বচ্ছতার একান্ত প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। ২৮ গিগাহার্টজ স্যাটেলাইট স্পেকট্রামের কোয়ান্টাম ৫জি পরিষেবার জন্যও ব্লক করার বিষয়ে স্বচ্ছতা দরকার। স্যাটেলাইট ইউটিএস-এর জন্য স্পেকট্রাম ব্র্যান্ড ও স্যাটেলাইট গেটওয়ের ক্ষেত্রেও স্বচ্ছতা আবশ্যিক। বর্তমানে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ড রেভিনিউ-র সুযোগ তৈরি হয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে ভারতের স্যাটেলাইট পরিষেবার মার্কেট ৪.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কাছাকাছি হতে চলেছে এবং CAGR হতে চলেছে ৪.৩ শতাংশ।