সংক্ষিপ্ত
- ক্ষমতায় থাকার মোহ রয়েছে ট্রাম্পে
- যাওয়ার আগে সেই বার্তাই দিয়ে যাচ্ছেন
- ট্রাম্প ভক্তদের আচরণ গণতন্ত্র পরিণত হল পরিহাসে
- হার মানলেও ট্রাম্পের মনোভাই দায়ি বলে অভিযোগ
আর মাত্র বারো দিন। তারপরেই শেষ হয়ে যাবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে থাকার মেয়াদ। যদিও তিনি ৩ নভেম্বরের ভোটে সম্পূর্ণভাবে পরাজত হয়েছেন। কিন্তু সেই পরাজয় তিনি কিছুতেই মানে নিতে পারছেন না। যে কারণে তিনি কারচুপির অভিযোগ তুলেছিলেন। তাঁর সমর্থকরা আদালত পর্যন্ত ছুটেছিল। কিন্তু আদালতে প্রায় কোনও ক্ষেত্রেই ট্রাম্প সমর্থকেরা নির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি। ফলে তাঁদের অভিযোগ ধোপে টেকেনি। কিন্তু কিছুতেই ট্রাম্প নিজের বক্তব্য থেকে সরতে চাইছেন না। যত দিন যাচ্ছে তিনি ও তাঁর সমর্থকরা তাঁর প্ররোচনায় উত্তেজিত হচ্ছে; যার চরম পরিণতি দেখা গেল বুধবার। গত মঙ্গলবারও একটি সভায় ট্রাম্প নতুন করে ঘোষণা করেছিলেন যে তিনি হার স্বীকার করছেন না। তার সমর্থকদেরও তিনি তাঁর পাশে থাকতে বলেন। কিন্তু ঘটনা হল আগামী ২০ জানুয়ারি বাইডেনের হাতে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার দিয়ে তাঁকে বিদায় নিতে হবে।
কিন্তু তার আগে আমেরিকার কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটলে ঢুকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সশস্ত্র সমর্থকরা যে ঘটনা ঘটাললো তা বিগত ২০৬ বছরে আমেরিকা দেখেনি। ট্রাম্প–সমর্থকদের হামলা নিয়ে এখন নিন্দার ঝড় বইছে বিশ্বজুড়ে। হামলার পর ইউএস ক্যাপিটল হিস্ট্রি সোসাইটি বলেছে, মার্কিন ক্যাপিটল শুধু একটি ভবন নয়, এটি মার্কিন গণতন্ত্রের প্রতিমূর্তি। আমেরিকার সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্রের ঐতিহ্য হল শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর। সেই ক্ষমতা হস্তান্তরটাই মেনে নিতে পারছেন না ট্রাম্প। যতদিন তার হাতে ক্ষমতা ছিল তিনি ইচ্ছে মতো ক্ষমতা ব্যবহার করেছেন। বলা ভাল ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। গণতন্ত্রের টুঁটি টিপে ধরেছেন। এবার যে সময় এসেছে সেই ক্ষমতা হারানোর। এরপর যে তিনি সব ক্ষমতার বাইরে। এটা তিনি আর মেনে নিটে পারছেন না। কোনও স্বৈরশাসক সেটা মানতে পারে না। কোনও মিথ্যাবাদী ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত স্রিষ্টিকারী শাসক ক্ষমতার বলয় থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না।
একদিনে ৫০০ বার মিথ্যা বলে নিজের রেকর্ডই নিজে ভেঙেছেন ট্রাম্প। এই তথ্য দিয়েছে মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট। ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প গত ২ নভেম্বর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগের দিন ট্রাম্প মোট ৫০৪ বার মিথ্যা বলেছেন। ওই দৈনিকের ‘ট্রুথ টেস্টার’ শীর্ষক একটি কলামে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের ৫ নভেম্বর পর্যন্ত ডোনাল্ড ট্রাম্প ২৯ হাজার ৫০৮ বার মিথ্যা বলেছেন ও বিভ্রান্তিকর তথ্য তুলে ধরেছেন। বিদায়ী আমেরিকার প্রেসিডেন্ট যেসব বিষয়ে সবচেয়ে বেশি মিথ্যা বলেছেন সেগুলোর মধ্যে করোনা ভাইরাস অন্যতম। এই ভাইরাসকে প্রথমদিকে গুরুত্ব না দিয়ে তিনি যে ভুল করেছেন তা ধামাচাপা দিতে তাঁকে ঝুড়ি ঝুড়ি মিথ্যা আওড়াতে হয়েছে।
আমেরিকার কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটলে ট্রাম্পের সমর্থকরা হামলা চালানোর পর ওই নিয়ে ট্রাম্প টুইট করতে থাকায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এবং ইউটিউব ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়। টুইটার জানায়, ট্রাম্প তার তিনটি টুইটে ‘সিভিক ইনটেগ্রিটি পলিসি গুরুতরভাবে লঙ্ঘন’ করেছেন। এর আগেও টুইটারের নীতি লঙ্ঘন করেছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
অ্যামেরিকার ক্যাপিটলে ট্রাম্প সমর্থকদের তাণ্ডবের প্রতিবাদে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে গোটা বিশ্ব। কারও মতে, এই আক্রমণ আসলে গণতন্ত্রের ওপর। কেউ বলছেন, গণতন্ত্রের পক্ষে মর্যাদাহানিকর কাজ, কেউ বলছেন, এই ঘটনায় গণতন্ত্রের শত্রুরাই শুধু উল্লসিত হবে। এককথায় বিশ্ব নেতারা কেউই অ্যামেরিকার ক্যাপিটলে ট্রাম্প সমর্থকদের আচরণ মেনে নিতে পারছেন না। সকলেই প্রতিবাদ করছেন এবং তাঁরা ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ হস্তান্তর চান। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হার নিশ্চিত হওয়ার পর থেকেই একের পর এক নাটক তৈরি করেই চলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ আমেরিকার ইতিহাসে এর আগে তেমন নাটকের কথা কেউ মনে করতে পারছেন না। শেষমেষ নির্বাচনের ফলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশের এমন ডাক ডাক দিলেন যাতে নতুন ইতিহাস রচনা হয়ে গেল৷
আমেরিকার ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ে হামলার ঘটনায় বেশ কড়া ভাষাতেই প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বেআইনি প্রতিরধের মধ্যে দিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বিকল করে দেওয়া যায় না। সেই সঙ্গে শান্তিপূর্ণ ভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া শেষ করারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার সকালে এক টুইটে মোদী লেখেন, ‘ওয়াশিংটন ডিসিতে দাঙ্গা এবং সংঘর্ষে ঘটনাটি দেখে খুবই বেদনাহত। ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া সব নিয়ম মেনে শান্তিপূর্ণ ভাবে হওয়া উচিত। বেআইনি প্রতিরধের মধ্যে দিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বিকল করে দেওয়া যায় না।”
তবে শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী ট্রাম্প নিজের পরাজয় মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন। জানা যাচ্ছে, ট্রাম্প এক বার্তায় বলেছেন, তিনি যদিও নির্বাচনের ফলাফলের সঙ্গে একমত নন… তবুও আগামী ২০ জানুয়ারি নিয়ম অনুযায়ী ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে। বোঝা মুশকিল এও তার আরেক চাল কিনা।