সংক্ষিপ্ত

  • সিনেমা দুনিয়ার সর্বোচ্চ সম্মান অস্কার
  • যে কোনও কুশীলবের কাছে তার মূল্য অপরিসীম
  • সেই সম্মান পেয়েও ফিরিয়ে দিয়েছেন অনেকে
  •  মারলন ব্রান্ডো কেন অস্কার গ্রহণ করেননি

আর কিছুক্ষণের মধ্যেই সিনেমা দুনিয়ার সর্বোচ্চ সম্মান অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডস বা অস্কার দেওয়া হবে আমেরিকার হলিউডের ডলবি থিয়েটারে। অস্কার কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছে পুরস্কারের সব বিভাগের তালিকা। সেই সংক্ষিপ্ত তালিকা নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই জল্পনা তুঙ্গে। কোন সিনেমা এবং কারা কারা পেতে চলেছেন অস্কার। প্রতিবছরই অস্কার ঘোষণার আগে আলোচনা আর ভবিষ্যদ্বাণীর অন্ত থাকে না। এবারের আয়োজন নিয়েও তার কমতি নেই।

অথচ এই ৯২ বছরের অস্কারের ইতিহাসে সেই সম্মান পেয়েও ফিরিয়ে দিয়েছেন অনেকে। প্রথম অস্কার প্রত্যাখ্যান করেছিলেন ডুডলি নিকলস। ১৯৩৫ সাল ‘দি ইনফরমার’ ছবির চিত্রনাট্যের জন্য অস্কার পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আমি লিখে যেতে চাই, এটা আমার দায়িত্ব। সন্মানিত করার কিছু নেই। অস্কারের জন্য প্রায় বারো বার মনোনীত হয়েছিলেন ক্যাথেরিন হেপবার্ন। একটানা ৬০ বছর ধরে হলিউডে রাজত্ব করা এই অভিনেত্রী চারবার অস্কারে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতেছিলেন। কিন্তু তিনি প্রথম পুরস্কারটি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। ৩৪ বছর পর যখন আবার অস্কার জিতেছিলেন তখন বলেছিলেন, ‘আমি কি করছি সেটাই ব্যাপার, পুরস্কার নয়, সময় আমাকে বিবেচনা করবে। জর্জ সি. স্কট ১৯৭০ সালে ‘প্যাট্টন’ ছবির জন্য সেরা অভিনেতা হিসেবে অস্কার পান। জিতেন। কিন্তু খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গে টেলিফোনেই পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেন, ‘এত অল্প সময়ে এরা আমার অভিনয়ের কি বিচার করবে?’।  পরের বছরও স্কট তার অভিনীত ‘দ্য হসপিটাল’ ছবির জন্য অস্কারে মনোনীত হয়েছিলেন। 

১৯৭৩ সালে ‘দ্য গডফাদার’ ছবির জন্য সেরা অভিনেতার খেতাব পেয়েছিলেন মারলন ব্র্যান্ডো।  ১৯৭৩ সালের ৪৫তম একাডেমি অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে লিভ উলমান ও রজার ম্যুর তাঁর নাম ঘোষণা করেন। কিন্তু  মারলন ব্র্যান্ডো-র পরিবর্তে মঞ্চে উঠে আসেন অভিনেত্রী সাচিন লিটলফেদার।

কয়েক মিনিটের মধ্যে অনুষ্ঠানের পুরো পরিস্থিতিটাই ৯০ ডিগ্রি বদলে যায়। সবাই ভাবল মারলন ব্রান্ডোর অনুপস্থিতিতে অভিনেত্রী সাচিন লিটলফেদার অস্কার গ্রহণ করবেন।  কিন্তু অস্কার অভিনেত্রীর হাতে দিতে চাইলে তিনি তা ফিরিয়ে দেন। তিনি কয়েকটি কাগজ সেখান থেকে পড়তে শুরু করেন। কাগজগুলি ছিল মারলনের লেখা ১৫ পৃষ্ঠার একটি চিঠি।

সাচিন এভাবে শুরু করেন, ‘হ্যালো, আমার নাম সাচিন লিটলফেদার। আমি আপাচি ও ন্যাশনাল নেটিভ আমেরিকান এফারমেটিভ ইমেজ কমিটির প্রধান। আমি আজকের সন্ধ্যায় মারলন ব্রান্ডোর প্রতিনিধিত্ব করছি। তিনি আমাকে একটি দীর্ঘ বক্তৃতা আপনাদের পড়ে শোনাতে বলেছেন। কিন্তু সময়ের অভাবে  পুরোটা আমি আপনাদের সামনে পড়তে পারছি না।’

তবে আমি সবাইকে জানাতে চাই যে মারলন অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে এই পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছেন। তার কারণ হিসেবে তিনি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে আমেরিকার ইন্ডিয়ানদের নেতিবাচক উপস্থাপনের কথা বলেছেন। যদিও মারলনের পুরো চিঠিটা পড়া হয়নি, তবু যেটুকু পড়া হয়েছিল সেখানে লেখা ছিল... ‘ যেখানে পৃথিবীর হাজার হাজার মানুষ রোগে-শোকে ভুগে মরছে সেখানে আমি কীভাবে এতগুলো টাকা গ্রহণ করি? 

এক সাক্ষাত্কারে মারলন বলেছিলেন, ‘আমেরিকান ইন্ডিয়ানদের জন্য মোশন পিকচার ইন্ডাস্ট্রি কী করেছে, লোকে তা সত্যিই জানে বলে আমার মনে হয় না। তাদেরকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়, তা দেখে অনেকেই বুঝতে পারেন না। প্রাপ্তবয়স্ক ইন্ডিয়ানরা হয়ত এসব দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছেন কিন্তু ছোটরা এ সব দেখে নিশ্চয় দুঃখ পায়’।