ক্যাপিটাল হিলের হামলা নিয়ে সরগরম মার্কিন রাজনীতি ট্রাম্পের প্ররোচনাতেই হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ হার মানতে না পেরেই এই কাজ করেছেন বলে দাবি বাইডেনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানেও হাজির থাকবেন না
তপন মল্লিক
আমেরিকার ক্যাপিটল হিলে অবস্থিত ক্যাপিটল ভবনটি শু্ধুমাত্র আমেরিকার প্রশাসনিক ভবন নয়। ওটি তাদের আভিজাত্যের প্রতীক, গর্বের সঙ্গে উচ্চারিত একটি নাম। গোটা ওয়াশিংটনে ক্যাপিটল ভবনের থেকে মাথায় উঁচু কোনও ভবন আর নেই। কিন্তু সেই সেই গর্ব আর আভিজাত্যের গায়ে বেশ কিছুটা ধুলোবালি মাখিয়ে দিল তাদের দেশেরই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্র্যাম্প ও তাঁরই কিছু উন্মত্ত সমর্থক।
এ কথা বলতে কোনও আপত্তি নেই যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্ররোচনাতেই তার কয়েক হাজার সমর্থক ক্যাপিটল ভবনে হামলা চালিয়েছে। সদ্য পেরনো বছরের ৪ নভেম্বর নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভরাডুবি ঘটে। ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন ৩০৬টি ইলেকটোরাল ভোট পাওয়ায় হোয়াইট হাউজে যাওয়ার পথ প্রসস্ত হয়ে যায়। কারণ সেখানে পৌঁছতে ২৭০টি ভোটই যথেষ্ট। শুধু ইলেকটোরাল ভোট নয়, পপুলার ভোটেও এগিয়ে বাইডেন, ট্রাম্পের চেয়ে ৭০ লাখ ভোট বেশি পেয়েছেন তিনি। তবে এটা ঘটনা নির্বাচনের আগে থেকেই ট্রাম্প কিন্তু বলে আসছিলেন যে তিনি ভোটে না জিতলে তিনি নির্বাচনের ফল মানবেন না। অর্থাৎ তিনি যে ক্ষমতা ভোগ করতে চান এবং তার জন্য তিনি গণতন্ত্রের তোয়াক্কা করেন না, সেকথা তার কথাতেই স্পষ্ট। শুধু তাই নয় তিনি সৌজন্যতা বা শিষ্ঠাচারেরও তোয়াক্কা করেন না।
নির্বাচনের পর তিনি তার কথা রেখেছেন, হেরে গিয়েছেন বলেই তিনি ফলাফল কিছুতেই মানেননি। একের পর এক মামলা করে কিছু প্রমান করতে পারেন নি। শেষ পর্যন্ত তাঁর পাশে কাউকে পাননি। এরপরই ট্রাম্প চূড়ান্ত হামলা চালালেন ইউএস ক্যাপিটলে। ট্রাম্পের উস্কানিতে তার সমর্থকরা উন্মত্ত হয়ে রীতিমত তাণ্ডব চালালো। হামলায় চারজনের মৃত্যুর হল। তাদের মধ্যে একজন মহিলাও আছেন। সবাই দেখল শুনল বিশ্বের গণতন্ত্রের হেফাজতকারী, মানবাধিকারের প্রবক্তা, সভ্যতার মুরুব্বি আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র-এর ঘটনা কোনও সভ্য দেশে ঘটে না। এই ঘটনা গণতন্ত্রকে লজ্জা দেয়। এই ঘটনা সব দিক থেকেই অনাকাঙ্ক্ষিত, অনভিপ্রেত।

প্রসঙ্গত; প্রায় ২০০ বছর আগে আমেরিকা -ব্রিটেন যুদ্ধের সময় ক্যাপিটল হিলে হামলা হয়েছিল। তবে সেই হামলা ছিল অন্য দেশের তরফে। আর এই ঘটনা ঘটালোয়ামেরিকায় থাকা মানুষরাই। যারা কেবল নিজের দেশের শত্রু নয়, গণতন্ত্রের শত্রু, সভ্যতার শত্রু। আর এদের নেতৃত্ব দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, এখন বাকি আছে শুধু ঘাড় ধাক্কা। ট্রাম্প হয়ত ইতিমধ্যে জেনে গিয়েছেন যে হোয়াউট হাউজ থেকে তাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়াওয়ার আয়োজন চলছে। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ছিল য়ামেরিকার অর্থনৈতিক ক্ষমতার প্রতীক। ২০০১ সালে আত্মঘাতী বিমান হামলায় সেই ট্রেড সেন্টারের টুইন টাওয়ার ধ্বংস করে দিয়েছিল জঙ্গীরা। সেই আঘাতও ছিল আমেরিকার গর্বের ওপরই। কিন্তু ক্যাপিটল ভবন হল আমেরিকার গণতন্ত্রের প্রতীক। যে গণতন্ত্রের জন্য আমেরিকার অহংকারের সীমা নেই এবারের হামলাটিতে সেই অহংকারও চূর্ণ হল।
অনেকেই প্রশ্ন করেছেন ট্রেড সেন্টারের ওপর আঘাত আমেরিকার পাওনা ছিল, এই হামলাটিও কই সেই একইভাবে পাওনা ছিল? ২০১৬ সালের পেসিডেন্ট নির্বাচনে আমেরিকার গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষ ভোট দিয়েই ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো এক স্বৈরাচারী, কট্টর বর্ণবাদী, স্বেচ্ছাচারী, প্রায়োন্মাদকে প্রেসিডেন্ট বানিয়েছিল। সেই পাপের শাস্তি তো তাদের পেতেই হবে। গত চার বছর ধরে ট্রাম্প বারবার নিজেকে প্রমাণ করেছেন, তিনি গণতন্ত্রের কত বড় শত্রু, তিনি উন্মাদ নন ওটা তার ভান। কার্যত মিথ্যার পর মিথ্যা বলে তিনি সত্য-মিথ্যার ফারাক ঘুচিয়ে দিতে চান।কিন্তু হায় ক্যাপিটলে হামলার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও তাকে লক করে দেয়।

