এক ঘর শূন্যতা রেখে না ফেরার দেশে নারায়ণ দেবনাথ, বাঙালির শৈশবকে দিয়ে গেলেন বাঁটুল-নন্টে-ফন্টেদের
এক ঘর শূন্যতা। ফাঁকা পড়ে থাকা বিছানা, স্টাডি টেবিল। যার উপর এখন শুধু পড়ে রয়েছে তাঁর চিহ্ন। দেওয়াল জুড়ে থাকা নানা সময়ের ছবি। জানান দিচ্ছে তাঁর উপস্থিতি। অনেকটা যেন স্মরণ করিয়ে দেয় বিশ্বকবির শেষের সেই দিনগুলো।
বাঙালির সাহিত্যের ইতিহাসে কমিকস সেভাবে কোনও দিনই স্থান পায়নি যত দিন না নারায়ণ দেবনাথ বাটুল দি গ্রেট-নন্টে-ফন্টে-হাঁদা-ভোঁদাদের জন্ম দিয়েছিলেন। বাবার দোকানে ব্যবসার তদারকির ফাঁকে গলেই তাঁর পেনসিলের শিষে ফুটে উঠত বাটুল-দি গ্রেট থেকে নন্টে-ফন্টে-কেল্টুদা, হাঁদা-ভোঁদারা। একটা সময় এমন দাবিও উঠেছিল সে বিশ্ব কমিকসের বাজারে বাটুল দি গ্রেট যে জনপ্রিয়তা নিয়ে বছরের পর বছর বিক্রি হয়েছে তা আর কোনও কমিকস করে দেখাতে পারেনি। তাই নারায়ণ দেবনাথের চলে যাওয়াটা শুধু বর্তমান প্রজন্মের কাছে নয়, যে সব মানুষ আজ যৌবন পেরিয়ে বার্দ্ধকে উপনীত হয়েছেন তাঁদের কাছেও এক চরম হতাশার খবর। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর শোকবার্তায় লিখেছেন- বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যশিল্পী ও কার্টুনিস্ট নারায়ণ দেবনাথের প্রয়াণে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। তিনি আজ কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর। বাঁটুল দি গ্রেট, হাঁদা ভোঁদা, নন্টে ফন্টে, বাহাদুর বেড়াল প্রভৃতি চরিত্রের স্রষ্টা নারায়ণ দেবনাথ সব বয়সের পাঠকের মনে চিরস্থায়ী আসন লাভ করেছেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে ২০১৩ সালে 'বঙ্গবিভূষণ' সম্মান প্রদান করে। রাষ্ট্রপতি পুরস্কার, পদ্মশ্রী সম্মান, সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার ছাড়াও তিনি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি লিট ডিগ্রি পান। তাঁর প্রয়াণে কমিকস্ শিল্প জগতের এক অপূরণীয় ক্ষতি হল। আমি নারায়ণ দেবনাথের পরিবার-পরিজন ও অনুরাগীদের আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি। নারায়ণ দেবনাথের অসুস্থতার খবর পেয়ে কিছুদিন আগে তাঁর বাড়ি থেকে ঘুরে এসেছিলেন খোদ রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। প্রায় আধ-ঘণ্টা ধরে শয্যাশায়ী নারায়ণ দেবনাথের সঙ্গে কথা বলে সেখান থেকে বেরিয়েছিলেন রাজ্যপাল।