Jayrambati Jagadhatri Puja 2021-জয়রামবাটীর জগদ্ধাত্রী পুজোর এক অনন্য কাহিনি

খুব ছোটোবেলায় একবার জগদ্ধাত্রী পুজোর সময় বালিকা সারদা জগদ্ধাত্রী প্রতিমার সামনে ধ্যানমগ্ন হয়ে পড়েন। সেই অবস্থায় রামহৃদয়  ঘোষাল  নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি অনেকক্ষণ দেখেও ঠিক করতে পারছিলেন না - কোনটি 'চিন্ময়ী' আর কোনটি 'মৃন্ময়ী'। 

/ Updated: Nov 14 2021, 01:24 AM IST

Share this Video
  • FB
  • TW
  • Linkdin
  • Email

সারদামা'র জননী শ্যামাসুন্দরী দেবী জয়রামবাটীতে জগদ্ধাত্রী পুজোর সূচনা করেন। শুরুটা তিনি করলেও কার্যত পরের বছর থেকে এই পুজোর ভার সারদামার ওপর বর্তায়। বড় ছেলে প্রসন্নকে শ্যামাসুন্দরী পাঠালেন দক্ষিণেশ্বরে জামাই শ্রীরামকৃষ্ণকে নেমতন্ন করতে। ঠাকুর পৌঁছতে পারেন নি। জগদ্ধাত্রী পুজোর কিছুদিন পরেই সারদা মা'র জন্ম হয়। জানা যায়, স্বপ্নাদেশ পেয়ে জননী শ্যামাসুন্দরী দেবী শুরু করেছিলেন জগদ্ধাত্রী আরাধনা। তাই জগদ্ধাত্রী পুজোয় জয়রামবাটীতেই হাজির থাকতেন সারদা মা। খুব ছোটোবেলায় একবার জগদ্ধাত্রী পুজোর সময় বালিকা সারদা জগদ্ধাত্রী প্রতিমার সামনে ধ্যানমগ্ন হয়ে পড়েন। সেই অবস্থায় রামহৃদয়  ঘোষাল  নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি অনেকক্ষণ দেখেও ঠিক করতে পারছিলেন না - কোনটি 'চিন্ময়ী' আর কোনটি 'মৃন্ময়ী'। তাঁর মনে হয়েছিল মাতৃপ্রতিমার সঙ্গে ছোটো সারদা যেন মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে। জয়রামবাটীতে মা সারদার বাসভবনে জগদ্ধাত্রী পুজোর সূত্রপাত ১২৮৪ বঙ্গাব্দে, ইংরেজির১৮৭৭ সালে। মা সারদার জন্মস্থান জয়রামবাটীতে গ্রামের লোকেরা সবাই মিলে কালীপুজোয় একসাথে বেশ আনন্দ করতেন। প্রতি বছর শ্যামাসুন্দরী দেবী প্রতিবেশী নব মুখুয্যের বাড়ির কালীপূজা উপলক্ষে ‘নৈবেদ্যের চাল’ পাঠাতেন। সে বছর কোনো বিবাদের কারণে ‘নব মুখুজ্যে’ চাল নিতে অস্বীকার করেন। নৈবেদ্যদানে অসমর্থ হয়ে শ্যামাসুন্দরী দেবী অত্যন্ত মর্মাহত হন। নৈবেদ্যর চাল না নেওয়ায় শ্যামাসুন্দরী দেবী পড়লেন মহাবিপদে। তিনি বলতে লাগলেন “কালীর জন্যে চাল দিলাম, আমার চাল নিলে না। এ চাল আমার এবার কে খাবে? এ কালীর চাল তো কেউ খেতে পারবে না।” সেদিন রাতে শ্যামাসুন্দরী স্বপ্ন দেখলেন দেবী জগদ্ধাত্রী এসে তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে বলছেন, “তুমি কাঁদছ কেন? কালীর চাল আমি খাব, তোমার ভাবনা কী?’’ শ্যামাসুন্দরীর ঘুম ভেঙে গেল। পরদিন তিনি আত্মীয়-স্বজন পাড়া -পড়শীদের জানালেন স্বপ্নের কথা। সবাই শুনলেন এবং শ্যামাসুন্দরীকে জগদ্ধাত্রী পুজো করার পরামর্শ দিলেন। কিন্তু পুজো বললেই তো আর পুজো করা যায় না। শ্যামাসুন্দরীর কাছে পুজো মানে যথেষ্ট চিন্তার কারণ ছিল। কারণ তখন মায়ের বাপের বাড়ির আর্থিক অবস্থা এমন ছিল না যে নিজেরাই একটা পুজোর আয়োজন করেন। মায়ের বাবা রামচন্দ্র মুখোপাধ্যায় চাষ-আবাদ করে কোনওরকমে সংসার চালাতেন। প্রায় তিন বছর হল তিনি দেহ রেখেছেন। শ্রীমা তখন থাকেন দক্ষিণেশ্বরে, শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে। আর মায়ের ভাইরা তখন খুবই ছোটো। জমি থেকে যে ধান পাওয়া যেত তাতে সারা বছরের খরচ চলত না। সারদামা'র জননী শ্যামাসুন্দরী দেবী   প্রতিবেশীর বাড়িতে ধান ভেনে দুঃখ কষ্টে দিন কাটাতেন। এরকম অবস্থায় জগদ্ধাত্রী পুজোর আয়োজন করা খুব সহজ কাজ ছিল না তাঁর কাছে। কিন্তু স্বপ্নে দেবী দেখা দিয়েছেন।সেই দেবস্বপ্ন তাঁর মনে খুব গভীর রেখা পাত করেছিল। ঠিক করলেন যে-ভাবেই হোক, যত কষ্টই হোক পুজো করতে হবে।