অভাব-অনাহারের যন্ত্রণাকে দাঁতে-দাঁত চিপে রেখে লড়ে যাচ্ছে ডেকলাপাড়়া, আশায় বেঁচে থাকা হয়তো একেই বলে
২০ বছর আগে মালিক মুম্বই গিয়েছিলেন ডেকলাপাড়া চা-বাগানের শ্রমিকদের জন্য মাইনে নিয়ে আসতে। কিন্তু, ২০ বছর পেরিয়ে গেলেও সেই মালিক আর মুম্বই থেকে ফিরে আসেননি। আস্তে আস্তে চা-বাগানের বাবুরা বিদায় নিয়েছিলেন।
২০ বছর আগে বাগানের মালিক গিয়েছিলেন মুম্বই-তে মাইনের টাকা আনতে। তারপর... আর সেই মালিকের মুখ দেখেনি ডেকলাপাড়া চা-বাগানের কর্মীরা। বাগানের ভগ্নদশায় একে একে বিদায় নিয়েছেন বাগান-বাবুদের দল। কিন্তু, আশার আলো-কে আঁকড়ে ধরে বাগানের বুকেই থেকে গিয়েছে অসংখ্য শ্রমিক পরিবার। যারা বাগানের পাতা তোলা থেকে চা-তৈরির বিভিন্ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জুড়েছিল। ডেকলাপাড়ার জৌলুস কমতে কমতে তা আজ এক হানাবাড়ির মতো চেহারা নিয়েছে। শ্রমিকরা এখন নির্ভর করে রয়েছেন রাজ্য সরকারের দেওয়া সামান্য ভাতার অর্থ, আর বিনামূল্যে রেশনে। এর বাইরে বেঁচে থাকার জন্য অর্থ আয়ের সুযোগ বলতে- বাগানের দুপাশ দিয়ে থাকা নদীতে বালু তোলার কাজ করা অথবা চালিতে বালু ঝেড়ে ডলোমাইট পাথর বের করা। আর না হলে ভাড়াটে শ্রমিক হয়ে অন্য কোনও বাগানে কাজ করা। সে রোজগারও খুব একটা নিয়মিত নয়। ভোর ৪টায় কুলি লাইনে আসা গাড়িতে উঠে পড়েন মেয়েরা। সন্ধে ৬টার সময় সেই গাড়ি আবার এসে ছেড়ে দিয়ে যায়। সারা দিনের এই কাজের মূল্য মাত্র ১৮০ টাকা। তাও খাবার নিজের খরচে। যে বাগানে ভাড়াটে শ্রমিক হয়ে কাজ করতে হয়, সেখানে খাবার দেওয়া হয় না। এভাবেই আপাতত বেঁচে রয়েছে ডেকলাপাড়া চা-বাগান। বর্ষা এলে বাগান থেকে বের হওয়াটা দুষ্কর হয়ে যায়। কারণ ডেকলাপাড়া চা-বাগানকে চারিদিক থেকে ঘিরে রয়েছে দুটি নদী। সেই নদীর জল এতটাই উচ্চতায় পৌঁছয় যে ব্রিজহীন নদীর খরাস্রোতে সাঁতার কাটা মরণের সামিল হয়ে যায়। ফলে বর্ষা মানেই কাজকর্ম বন্ধ করে আধপেটা খেয়ে ৩ মাসের জন্য দিনগুজরান। ২১ শতকে দাঁড়িয়েও এটাই পশ্চিমবঙ্গের একটি এলাকার চেহারা।