মাটিকে আকার দেন মুক্তা, কীভাবে খাড়া করলেন শিল্পকলার এক সাম্রাজ্য, জানুন কাহিনি
কথায় বলে মাটির শরীর মাটিতেই মিশে যায়। মাটির সেই রূপকে ফুটিয়ে তোলেন হাওড়ার মুক্তা। নারী দিবসের দিনে উনসানীর মুক্তার কাহিনি একনজরে। অসমে জন্ম হলেও বিয়ের পর বাস হাওড়ায়। নিজেকে সাবলম্বি করতে হাতের কাজ শুরু করেন।
অল্প পরিশ্রমে ফল পাওয়া যায় না,নারী দিবসে কর্মরত মহিলাদের বার্তা এক সফল নারীর। মাটির টানে মাটির রূপকেই অনন্য সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন উনসানীর এক গৃহবধূ। কথায় বলে মাটির শরীর মাটিতেই মিশে যায়। সেই মাটির রূপ, রস গন্ধ চিরকালের অমোঘ আকর্ষণ করেছে শিল্পী, কবি ও সাহিত্যিকদের। মাটির ব্যবহারে মাটির সেই অনন্য রূপকে ফুটিয়ে তুলছেন হাওড়ার উনসানীর এক গৃহবধূ। মাটি দিয়ে বিভিন্ন নজরকাড়া ভাস্কর্য তৈরি শুধু নয়। বিভিন্ন ধরণের ঘর সাজানোর দ্রব্য তৈরি করে ফেলেন মুহূর্তের মধ্যে। আসামে জন্ম হলেও বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ হয়ে চলে আসেন এই রাজ্যে। এখানেই এখন পাকাপাকিভাবে থেকে শুধু নিজের পায়ে অর্থনৈতিক দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছেন তাই নয়। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মহিলাদেরকে অর্থনৈতিক স্বয়ম্বর করে তুলতে দিবারাত্র পরিশ্রম করে চলেছেন মুক্তা দে জানা। নিছক সংস্কৃতি চর্চার টানে এই রাজ্যে এসে নান্দনিক শিক্ষার প্রাণকেন্দ্রে বোলপুরের রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন তিনি। দীর্ঘ দুই বছর ধরে অঙ্কন, ভাস্কর্য বিভিন্ন বিষয়ে হাতে কলমে শিক্ষা নিয়ে বেছে নেন এই মাটির ভাস্কর্যকেই। পাশে পেয়েছেন তার স্বামীর অকুন্ঠ সাহায্য। যা নিজেই স্বীকার করেন মুক্তা। স্বামীও কলকাতা আর্ট কলেজের অধ্যাপক। তাই স্বামীর সাহায্য ও পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে নির্ভয়ে এগিয়েছেন জীবনে নিজের পছন্দের পথ ধরে নিজেকে অর্থনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে। দীর্ঘ পরিশ্রমের পথ অতিক্রান্ত করে আজ তিনি সফল। শুধু নিজের সফলতাতেই থেমে থাকেন নি মুক্তা। এখন তার উদেশ্য সমাজের সর্বস্তরের মহিলাদেরকেও অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা দিতে। তাই তার নিজের তৈরি ওয়ার্কশপে হাতে কলমে কাজ শেখাচ্ছেন অনেক ইচ্ছুক মহিলাদের। সমাজে যে সমস্ত মহিলারা নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে তার পরিবারের পাশে দৃঢ়তার সঙ্গে দাঁড়াতে চান তাদের জন্য মুক্তা তৈরি করছেন একটি টেকনিক্যাল কলেজ। এখানে বহু মহিলা নিজের হাতে কাজ শিখে চাকরির অথবা ব্যবসায়ের দ্বারা নিজের পরিবারের আর্থিক হাল ধরতে পারবেন। কাজ শেখার পর চাকরির দায়িত্বও মুক্তা নেবেন জানালেন তিনি। মুক্তার কথায় ফেসবুক আসার পর বেশিরভাগ মানুষই অল্প পরিশ্রমে দ্রুত সফলতার মুখ দেখতে চান। কিন্তু তাদের সেই ভুল ভাঙিয়ে নারী দিবসের দিনে মুক্তা বলেন সফল হতে হলে দীর্ঘ পরিশ্রমই একমাত্র পথ। তিনি জানান তিনি যখন মাটির তৈরি ভাস্কর্যের রাস্তাকেই বেছে নিয়েছিলেন তখন কিন্তু এর তেমন চাহিদা ছিল না। তবে তিনি পরিশ্রম করেছেন দীর্ঘ বহু বছর। আর আজকে তার তৈরি এই মাটির শিল্পকলা বিক্রির জন্য কোথাও যেতে হয় না। কলকাতা শহরের সব কটি পাঁচ তারা ও সাত তারা হোটেল থেকে অর্ডার পান। তারা নিজেরাই আসেন। এছাড়াও কলকাতা, সল্টলেক সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে বহু মানুষ আসেন তার কর্মশালাতে। কেউ বা নিজের পছন্দের বিষয়গুলি বলে বিশেষভাবে কিছু শিল্প তৈরি করিয়ে নিয়ে যান। আজকে এই মাটির ভাস্কর্যের চাহিদা আকাশছোঁয়া বলেই জানান মুক্তা। সংসারে শুধু উপার্জনশীল পুরুষ নয় মহিলারাও চাইলে নিজে অর্থনৈতিক স্বনির্ভর হতে পারে ও সমাজে নিজেকে দৃঢ়তার সঙ্গে বিশেষ জায়গা করে নিতে পারে আজকের নারী দিবসে সমাজের কাছে বিশেষ করে মহিলাদের বার্তা দিচ্ছেন মুক্ত।