সংক্ষিপ্ত
সুপার স্কুপারের ডানাগুলি হয় ৯৩ ফুট দৈর্ঘে। প্রস্তে ৬৫ ফুট। এর একটি সিস্টেম রয়েছে যার মাধ্যমে আরও কার্যকর অগ্নিনির্বাপণের জন্য ফোম ঘনীভূত জল মিশ্রিত করা যেতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার দাবানলের তাণ্ডব এখনও অব্যাহত রয়েছে। ধ্বংস হচ্ছে ঘরবাড়ি, গাছপালা। মৃত্যু হচ্ছে মানুষের। নিজের মাথাগোঁজার স্থান ছেড়ে পালিয়ে যেতে হচ্ছে মানুষক। সেই ভয়ঙ্কর দাবানলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মার্কিন প্রশাসনের ত্রাতার ভূমিকা নিয়েছে সুপার স্কুপার (Super Scooper)। প্রশাসন থেকে শুরু করে ক্যালিফোর্নিয়ার বাসিন্দাদের ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে Super Scooper।
Super Scooper কি?
এটি একটি উভচর বিমান। এটি তৈরির মূল উদ্দেশ্যই বল দাবানলের মোকাবিলা করা। CL-415 বিমানটি জল সংগ্রহ করতে পারে। প্রয়োজনে ফোমের মাধ্যমে আগুনে স্প্রে করতে পারে। আমেরিকার বিধ্বংসী দাবানলে যখন আগুন নেভানোই মার্কিন প্রশাসনের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ সেখানে এই সুপার স্কুপার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছে।
এফবিআই-এর পক্ষ থেকে জানান হয়েছে, এফবিআই কানাডার সুপার স্কুপার বিমানে অপারেটাকরে খুঁজে বার করার জন্য তদন্ত শুরু করেছে। যা লস অ্যাঞ্জেলেসের আগুন নেভাতে কাজ করছে। বিমানটি প্রথম গ্রাউন্ডেড ছিল। পরে দ্যা ওয়ারজোন অনুসারে আরও দুটি সুপার স্কুপার আসছে। FBI-এর পক্ষ থেকে কনিল রাগ আরও বলেছেন, 'আমি জোর দিয়ে বলতে চাই এই ধরনের আগুন নেভআবে আমাদের সবথেকে কার্যকর কৌশল হল সুপার স্কুপার বিমান ব্যবহার করা। ' তিনি আরও বলেছেন এই বিমান ব্যবহার করে আগুন নেভালে জীবনের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
আসলে সুপার স্কুপার বিমানটি জলের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় জল সংগ্রহ করতে পারে। আর প্রয়োজনীয় স্থানে গিয়ে জল ঢেলে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে।
ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে কীভাবে সুপার স্কুপার বিমানগুলি কাজ করে তা তুলে ধরা হয়েছে। এটি বালতি ও এয়ার ট্যাঙ্কার দিয়ে সজ্জিত একটি হেলিকপ্টারের থেকেও আগুন নেভাতে অনেক বেশি কার্যকর। এই বিমানগুলিতে একবারে ১৬০০ গ্যালন জল সংরক্ষণ করতে পারে। এটির আরও সুবিধে রয়েছে এই বিমানগুলিতে এয়ার ট্যাঙ্কারের মত জল সংগ্রহ করার জন্য অবতরণ করতে হয় না। সুপার স্কুপার বিমনের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার। তাই কাছাকাছি থাকা জলাশয় থেকে এই বিমান দ্রুত জলল সংগ্রহ করতে ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিভিয়ে দিতে পারে। এই বিমানটিতে আগুন নেভানোর কাজে দ্রুত একাধিকবার ব্যবহার করা হয়।
সুপার স্কুপারের গঠন
সুপার স্কুপারের ডানাগুলি হয় ৯৩ ফুট দৈর্ঘে। প্রস্তে ৬৫ ফুট। এর একটি সিস্টেম রয়েছে যার মাধ্যমে আরও কার্যকর অগ্নিনির্বাপণের জন্য ফোম ঘনীভূত জল মিশ্রিত করা যেতে পারে। যখন এর পানির ট্যাঙ্ক ভর্তি করার প্রয়োজন হয়, তখন পাইলট জলাশয়ের উপরিভাগ থেকে সরে যাওয়ার জন্য বিমানটি উড়ান। একটি প্রোবের মাধ্যমে ট্যাঙ্কে জল ঢোকানো হয় এবং ট্যাঙ্কটি পূর্ণ হতে প্রায় ১২ সেকেন্ড সময় লাগে। বিকল্পভাবে, একটি সুপার স্কুপার পানির ট্যাঙ্ক হোস ব্যবহার করে ভরা যায়। একবার পূর্ণ হয়ে গেলে, বিমানটি প্রতি ঘন্টায় ৩৫০ কিলোমিটার বেগে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় যেতে পারে। পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, পাইলট একবারে জল ঢেলে দিতে পারেন। অথবা চারটি দরজা ব্যবহার করে বৃহত্তর এলাকায় জল ঢালতে পারেন।
লস অ্যাঞ্জেলেসের কাউন্টি ফায়ার ডিপার্টমেন্ট ৩০ বছরের লিজে কুইবেক সরকারের কাছ থেকে দুটি সুপার স্কুপার ধার নিয়েছে। এর মধ্যে, অগ্নিনির্বাপণ অভিযানের সময় একটি অবৈধ ড্রোনের সঙ্গে সংঘর্ষের পর বর্তমানে কেবল একটি চালু আছে। এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিমানটিতে সামান্য আঘাত লেগেছে। পাইলটরা সংঘর্ষের কথা জানতেন না এবং নিরাপদে অবতরণ করেন, লস অ্যাঞ্জেলেস কান্ট্রি ফায়ার চিফ অ্যান্থনি ম্যারোন সাংবাদিকদের এই কথা জানান। বিমানটি গ্রাউন্ডেড ছিল এবং মেরামতের পর কাজে ফিরে আসতে পারে। সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কানাডিয়ান অলাভজনক সংস্থা SOPFEU, যারা কুইবেক সরকারের সহযোগিতায় সুপার স্কুপার সরবরাহ করে, তারা লস অ্যাঞ্জেলেসকে আরও দুটি CL-415 সরবরাহ করার কথা জানিয়েছে।
দাবানলের কারণে কমপক্ষে ২৪ জন মারা গেছেন, ১২,০০০ এরও বেশি কাঠামো ধ্বংস হয়েছে এবং এক লক্ষেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে হলিউডের কিছু শীর্ষস্থানীয় সেলিব্রিটিও রয়েছেন। অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৫০ বিলিয়ন ডলার বলে অনুমান করা হচ্ছে।
আরও খবরের জন্য চোখ রাখুন এশিয়ানেট নিউজ বাংলার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।