দেখতে দেখতে কেটে গেল ১০ টা বছর
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি নেতাই গ্রামে ৯ গ্রামবাসীকে গুলি করে হত্যার অভিযোগ উঠেছিল সিপিএম-এর বিরুদ্ধে
সেটাই ছিল সিপিএম সরকারের কফিনে শেষ পেরেক
ঠিক কী ঘটেছিল সেই সেইদিন, ফিরে দেখা যা
২০১১ সালের জানুয়ারি মাস। সামনেই বিধানসভা ভোট। তার আগে সিঙ্গুর, নন্দিগ্রাম, বুদ্ধিজীবীদের প্রতিবাদ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আন্দোলন, মাওবাদী সমস্যা - সব নিয়ে জেরবার ৩৫ বছরের বাম সরকার। সেই টলমল বুদ্ধদেব ভট্টাচর্য সরকারের কফিনে শেষ পরেরেকটা পুঁতে দিয়েছিল নেতাই হত্যাকাণ্ড। নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ৯ জন গ্রামবাসীকে হত্যার অভিযোগ উঠেছিল সিপিএম-এর বিরুদ্ধে।
নেতাই গ্রামের ওইদিন শহিদ হওয়া গ্রামবাসীদের পরিবারের দাবি, ক্ষমতায় থাকা সিপিএম-এর স্থানীয় নেতারা হাবেভাবে ছিলেন জমিদারদের মতো। জোর করে বেশ কিছু কাজকর্ম করিয়ে নিলেও গ্রামবাসীরা শাসক দলের বিরুদ্ধে কিছু বলেননি। কিন্তু এরপরই এসেছিল এক অদ্ভূত নির্দেশ। প্রত্যেক বাড়ি থেকে একজন করে ছেলে দিতে হবে। তাদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ দিয়ে হার্মাদ বাহিনী তৈরি হবে মাওবাদীদের মোকাবিলার জন্য।
ঘরের ছেলেদের সেই বিপদের মুখে ঠেলে দিতে রাজি হয়নি নেতাই গ্রাম। গর্জে উঠেছিল প্রতিবাদে। ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি মিছিল করে গ্রামবাসীরা প্রতিবাদ জানাতে গিয়েছিলেন স্থানীয় সিপিএম নেতা রথীন দণ্ডপাটের বাড়িতে। বাড়িটি ঘিরে ফেলতেই সেই বাড়ির ছাদ থেকে বাড়ি ভিতর লুকিয়ে থাকা সিপিএম-এর হার্মাদ বাহিনী গ্রামবাসীদের লক্ষ্য করে নির্বিচারে গুলি চালায় বলে অভিযোগ। মুহূর্তে লুটিয়ে পড়েছিলেন ৪ মহিলা-সহ ৯ গ্রামবাসী। আহত হয়েছিলেন আরও ২৮ জন।
সরকার বদলের পর ২০১৩ সালে কলকাতা হাইকোর্ট এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তের ভার রাজ্য পুলিশের সিআইডি-র হাত থেকে সিবিআই-এর হাতে দেয়। ২০১৪ সালে ২০ জনের নামে চার্জশিট দায়ের করে সিবিআই। এর মধ্যে সিপিএম বিনপুর জোনাল কমিটির সেক্রেটারি অনুজ পাণ্ডে-সহ ১২ জন সরাসরি সিপিএম-এর সঙ্গে যুক্ত। অবিযুক্ত ২০ জনের মধ্যে ১৯ জনকে এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার করা গিয়েছে। তাদের বিচার চলছে।
তবে, নেতাইয়ের যে বাড়িটি থেকে গুলি চালনার অভিযোগ উঠেছিল, সেই সিপিএম নেতা রথীন দন্ডপাটের বৃদ্ধা মা অবশ্য এখনও দাবি করেন, তাঁর পুত্র নির্দোষ। তাঁর দাবি, ওইদিন রথীন বাড়িতেই ছিলেন না। মাওবাদীরা তাঁকে বারবার মারধর করেছে। প্রাণে মারারও হুমকি দিয়েছিল। শেষে তারাই তাঁর ছেলেকে ফাঁসিয়েছে বলে সন্দেহ করেন তিনি। দীর্ঘদিন বাড়িটি সিবিআই সিল করে রেখেছিল। ২০১৯ আদালতে আবেদন করে বাড়িটি ফেরত পেয়েছে তাঁর পরিবার।
২০১৪ সালে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য স্বীকার করে নিয়েছিলেন, তাঁর দলের কর্মীদের ওই কাজ করা মারাত্মক ভুল হয়েছিল। কিন্তু ভুল স্বীকারের পক্ষে তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। লালগড়ের লালমাটি থেকে সাফ হয়ে গিয়েছে লাল পতাকা। যা আজও ফেরাতে পারেনি সিপিএম। দৃশ্যতই নেতাই-তে ,এখন খুঁজলেও লাল পতাকার দেখা মেলে না। তবে ১০ বছর পর রাজ্য রাজনীতিতে আবার আলোচনায় ফিরেছে সেই নেতাই। তবে লড়াই এখন জোড়া ফুল বনাম ঘাসফুলে। শুভেন্দু অধিকারী না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় - নেতাই তুমি কার?
Read Exclusive COVID-19 Coronavirus News updates, from West Bengal, India and World at Asianet News Bangla.
খেলুন দ্য ভার্চুয়াল বোট রোসিং গেম এবং চ্যালেঞ্জ করুন নিজেকে। கிளிக் செய்து விளையாடுங்கள்
Last Updated Jan 7, 2021, 1:42 PM IST