সংক্ষিপ্ত
- খবরের কাগজ থেকে এইডস সম্পর্কে প্রথম জানতে পারেন বাসন্তীর সৌমেন দেবনাথ
- স্কুলের পাঠ চুকিয়ে এই রোগের প্রতিরোধ নিয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ নেন তিনি
- বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এইডস নিয়ে সচেতনতার বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন তিনি
- এখন আলাস্কায় রয়েছেন সৌমেন, দেশে ফিরবেন আগামী বছর
'ক্যানসারের থেকে মারাত্বক এইডস'! খবরের কাগজের শিরোনাম দেখে হতবাক হয়ে গিয়েছিল বছর চোদ্দোর এক কিশোর। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছে এই রোগ সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল সে। কিন্তু সংকোচবশত ছাত্রের প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি তাঁরা। নিজের চেষ্টা এইডস সম্পর্কে জানাই শুধু নয়, এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বার্তা দিতে সাইকেল নিয়ে বিশ্ব ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েছেন বাসন্তীর যুবক সৌমেন দেবনাথ। আগামী বছরের ডিসেম্বরে দেশে ফেরা কথা তাঁর।
স্কুলের শিক্ষকরা তাঁর কৌতুহল মেটাতে পারেননি। কিন্তু, তাতে কি! স্কুলের পাঠ শেষ করে এইডস কন্ট্রোল সোসাইটি থেকে বিশেষ প্রশিক্ষণ নেন সৌমেন। যখন কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন, তখন এইডস নিয়ে সচেতনতা বার্তা পৃথিবীর সর্বত্রই পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু মায়ের আপত্তিতে তা করতে পারেননি। সৌমেনের মা শোভারানী মণ্ডল সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, বিএ পাস না করে একাজে নামা যাবে না। অগত্যা অপেক্ষা করতেই হয় সৌমেনকে। ২০০৪ সালে স্নাতকের তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা শেষ হতেই সাইকেল নিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা দেন তিনি। উত্তর-পূর্ব বিভিন্ন জায়গায় তো বটেই, প্রতিবেশি কয়েকটি দেশে ঘুরেও এইডস মানুষকে সচেতন করেন সৌমেন। বাড়ি ফেরেন প্রায় এক বছর পর। কিন্তু রোগ তো আর দেশের সীমানা মানে না! তাই বিশ্ব ভ্রমণের পরিকল্পনা করেন বাসন্তীর ওই যুবক। বাহন সেই সাইকেলই। ২০০৬ সালে ফের বেরিয়ে পড়েন সৌমেন। মাত্র তিন বছরেই এশিয়ার ২৪টি দেশ ও ইউরোপেও চষে ফেলেছেন তিনি। ২০১২ সালে তিন মাসের জন্য গিয়েছিলেন গ্রিনল্যান্ডেও। সেখান একে একে দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল ঘুরে অ্যান্টার্কচিকায় পৌঁছে যান সুন্দরবনে প্রত্যন্ত অঞ্চলের যুবক সৌমেন। এখন তিনি আমেরিকার শেষপ্রান্তে, আলাস্কায়। জাপান, রাশিয়া, সাইবেরিয়া, মঙ্গলিয়া, চিন, কোরিয়া, নিউজিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও মায়ানমার হয়ে সৌমেনের দেশে ফেরার কথা আগামী বছরের ডিসেম্বরে।
বিশ্ব বিভিন্ন দেশে স্কুল, কলেজ ও সমাজসেবী সংগঠনে গিয়ে এইডস নিয়ে সচেতনতামূলক প্রচার চালান সৌমেন দেবনাথ। এমন অভিনব উদ্যোগে বিদেশে সম্মানও কম পাননি তিনি। যখন নামিবিয়ার পা রেখেছিলেন, তখন সৌমেনকে ফোন করে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন ভারতের তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী প্রয়াত সুষমা স্বরাজও। এমনকী, এদেশের ২৫ রাজ্যের রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীও সৌমেনকে বাহবা দিয়েছেন। কিন্তু নিজের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে থেকে কোনও স্বীকৃতিই জোটেনি! আলাস্কা থেকে ফোনে সৌমেন দেবনাথ জানালেন, 'গত পনেরো বছর ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ও বিশ্বের দেড়শোটি দেশে এইডস নিয়ে প্রচার চালিয়েছি। বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রপ্রধান, রাষ্ট্রপ্রধান আমার পাশে থেকেছেন, সাহস জুগিয়েছেন। কিন্তু আমার নিজের রাজ্যের সরকারই কোনও খোঁজ রাখেনি। চেষ্টা করেও সরকারি মহলে কারও সঙ্গে যোগাযোগও করতে পারেনি।'
দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তীতে আদি বাড়ি হলেও, দুই ছেলের সঙ্গে সৌমেনের মা এখন থাকেন সোনারপুরে। বাবা প্রয়াত। সৌমেনের ইচ্ছা, সোনারপুর লাগোয়া সুভাষগ্রামে একটি সংগ্রহশালা ও গ্লোবাল ভিলেজ তৈরি করবেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পাওয়া সামগ্রী থাকবে সেই সংগ্রহশালায়। সেই কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। কাজের দেখভাল করছেন সৌমেনের ভাই। বাসন্তীর সৌমেন দেবনাথ নিয়ে গর্বিত তাঁর পরিবার ও স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও।