সংক্ষিপ্ত

তদন্ত যত এগোচ্ছে ততই যেন কেঁচো খুড়তে কেউটে বের হওয়ার জোগাড়। একের পর এক সম্পত্তির হদিশ পাচ্ছে সিবিআই। আর সেই সঙ্গে একের পর এক কুশীলবের নাম জড়াচ্ছে গরু পাচারকাণ্ডে। রবিবার বোলপুরে অনুব্রত ঘনিষ্ঠ বিদ্যুৎবরণ গায়েনের বাড়িতেও তল্লাশি চালায় সিবিআই। 
 

অনুব্রত মণ্ডলের আরও এক চালকলে হানা দিল সিবিআই। বোলপুরের এই চালকলটি রয়েছে রাজা ঘোষ নামে এক ব্যক্তির নামে। সূত্রে খবর এই রাজা ঘোষ আসলে অনুব্রত মণ্ডলের ভাগ্নে। সিবিআই সূত্রে খবর যে চালকলটির নথিপত্র খতিয়ে দেখা গিয়েছে প্রথমে এই শিবশম্ভু রাইস মিলের জমির লিজ নেওয়া হয়েছিল শিবানী ঘোষের নামে। এই মহিলা অনুব্রত মণ্ডলের বোন। তবে, এই রাইসমিলটি-র উৎপাদন বছর খানেক ধরে বন্ধ বলে জানা গিয়েছে। কীভাবে এই রাইস মিলের মালিকানা রাজা ঘোষ এবং শিবানী ঘোষের নামে গেল, তা খতিয়ে দেখছে সিবিআই। 

সোমবার সকালে এফসিআই-এর কয়েক জন আধিকারিককে সঙ্গে নিয়ে শিব শম্ভু চালকলের ভিতরে প্রবেশ করে সিবিআই। বোলে বোম চালকলেও তল্লাশি চালানোর সময় সিবিআই দলের সঙ্গে এফসিআই-এর কয়েকজন অফিসার ছিলেন। আসলে রাইস মিল যথাযথভাবে চলছিল কি না এবং সেখানে কীভাবে কাজকর্ম হচ্ছিল-সেই বিষয়গুলো বোঝার জন্য এফসিআই আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়েছিল সিবিআই। শিব শম্ভু চালকলের ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে। 

জানা গিয়েছে রাজা ঘোষ একটা সময় বীরভূম প্রাথমিক শিক্ষা সাংসদের চেয়ারম্যান ছিলেন। তাঁর সময়কালেই অনুব্রত মণ্ডলের মেয়ে সুকন্যা প্রাথমিক শিক্ষিকা হিসাবে নিয়োগপত্র পেয়েছিলেন। এই নিয়োগেও কোনও গরমিল ছিল কি না তাও এখন সিবিআই-এর স্ক্যানারে এসেছে। আরও জানা গিয়েছে যে শিব শম্ভু চালকে উৎপাদন বন্ধ থাকলেও সেখানে ভিতরে কর্মীরা ছিলেন। তারাই সিবিআই-কে দরজা খুলে দেন। জানা গিয়েছে, এই রাইস মিলের সঙ্গে জেলা রেশন দফতরের চুক্তি ছিল। এই চালকল থেকেই বিভিন্ন রেশনে চাল যেত একটা সময়ে, এমন তথ্যও নাকি সিবিআই-এর হাতে লেগেছে। 

অনুব্রত মণ্ডলের বাড়িতে তল্লাশির সময় বেশকিছু নথি-র হদিশ পায় সিবিআই। সেখানেই একটি নথি-তে রাজা ঘোষের নাম পেয়েছিল তারা। এরপরই রাজা ঘোষ সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজ খবর শুরু হয়েছিল। যদিও সিবিআই এখন অনুব্রত-র সঙ্গে রাজা ঘোষের সম্পর্কের বিষয়টিকে সরকারিভাবে স্বীকার করেনি। তদন্তে আরও সামনে এসেছে যে শিব শম্ভু ছাড়াও রাজা ঘোষের নামে আরও একটি রাইস মিল রয়েছে। এই রাইস মিলটি বোলপুরের রায়পুরে। সেই চালকলের নাম মহানন্দা রাইস মিল। সেখানে অবশ্য এখনও সিবিআই হানা দেয়নি। কিন্তু, সেই মিলেও উৎপাদন বন্ধ থাকলেও কর্মীরা বাস করছেন ভিতরে। সাংবাদিকরা এই নিয়ে খবর করতে মহানন্দা রাইস মিলে গেলেও কর্মীরা দরজা খোলেননি।  

অনুব্রত মণ্ডলের আওতায় যে একাধিক রাইস মিল রয়েছে তা সিবিআই তদন্তে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। যদিও, এখনও পর্যন্ত একটি রাইস মিলের মালিকানায় অনুব্রতর নাম পাওয়া যায়নি। প্রতিটি ক্ষেত্রেই হয় তাঁর স্ত্রী বা মেয়ে অথবা অন্য কোনও আত্মীয় বা বন্ধুর নামে মালিকানা রয়েছে। ভোলে বোম চালকলে তল্লাশি চালানোর সময়ও সিবিআই বেশকিছু নথি বাজেয়াপ্ত করেছিল। এই সব নথিগুলি গরু পাচারকাণ্ডে অতি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। বোলে বোম চালকলের পিছনেও রয়েছে শঙ্কর রাইস মিল নামে আরও একটি চালকল। এটিও মালিকানা নাকি অনুব্রত মণ্ডলের কোনও এক আত্মীয়র নামে। এই শঙ্কর রাইসমিলও বন্ধ। কিন্তু  সেখানে বাস করছেন কর্মীরা। 
আরও পড়ুন- 
অনুব্রত পেয়াদা, মলয় যদি মুখোশ হয় তাহলে পিছনে কারা, চাঞ্চল্যকর দাবি বিশ্বনাথ গোস্বামীর 
এবার সিবিআইের রেডারে অনুব্রত ঘনিষ্ট বিদ্যুৎ বরণ গায়েন, বোলপুরের বাড়িতে তল্লাশি চালায় এই কেন্দ্রীয় সংস্থা 
অনুব্রতকে 'বাবা' ডাকতেন, সিবিআই-এর নজরে হঠাৎ 'বড়লোক হওয়া' পুরসভা কর্মী বিদ্যুৎবরণ গায়েন