সংক্ষিপ্ত
আসন্ন মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ পৌরসভা দখলের লড়াইয়ে নিজেদের হারানো জমি ফিরে পেতে কোমর বেঁধে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ছে তৃণমূল নেতৃত্ব। এক্ষেত্রে 'মাইক্রো' স্তরে দলীয় সংগঠন চাঙ্গা করার কৌশল গ্রহণ করছে তৃণমূল বলেই সূত্রের খবর।
মুর্শিদাবাদে (Murshidabad) যেন ঠিক হিসেব মিলছে না। রাজ্যের সর্বত্র যখন ডানপন্থী কংগ্রেস (Congress) এলাকার পুরভোটে থাবা বসাচ্ছে শাসক দল (TMC), তখন মুর্শিদাবাদের ঐতিহাসিক শহর জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ পুরসভায় ঘাস ফুলের 'কাঁটা' হয়ে দাঁড়াচ্ছে গেরুয়া (BJP)। তাই আসন্ন মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ পৌরসভা দখলের লড়াইয়ে নিজেদের হারানো জমি ফিরে পেতে কোমর বেঁধে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ছে তৃণমূল নেতৃত্ব। এক্ষেত্রে 'মাইক্রো' স্তরে দলীয় সংগঠন চাঙ্গা করার কৌশল গ্রহণ করছে তৃণমূল বলেই সূত্রের খবর।
ভোটারদের মন বোঝার পাশাপাশি জনসংযোগ বাড়াতে পাড়া কমিটির সদস্যরা দু’বেলা নিজেদের এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাসিন্দাদের অভাব-অভিযোগ শুনে তাদের শাসকদল পন্থী করে তোলার চেষ্টা চলছে। তাই নানান ধরনের সরকারি সুযোগ-সুবিধার 'প্রলোভন' পর্যন্ত দেওয়া ক্ষেত্রে টোপ হিসেবে বলেই বিরোধীদের অভিযোগ।একইসঙ্গে এখনও যাঁরা বিভিন্ন সরকারি পরিষেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন বা পাননি তাদের সেইসব পরিষেবা পাইয়ে দিতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন।
শাসকদলের নেতৃত্বের দাবি, সামগ্রিক রাজ্য ও জেলার উন্নয়ন ও পরিষেবার নিরিখে পুরসভা ভোটে ১৭টি ওয়ার্ডের বাসিন্দারা ভোট দেবেন। উন্নয়নের নিরিখেই ভোট চাওয়া হবে। যদিও বিরোধীদের দাবি, ১৭টি ওয়ার্ডেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।মুর্শিদাবাদ জেলায় যে সাতটি পুরসভায় ভোট হতে চলেছে সেগুলির মধ্যে অন্যতম জিয়াগঞ্জ - আজিমগঞ্জ পুরসভা। ২০১৬ সালে বাম সমর্থিত নির্দলরা বোর্ড গঠন করেছিল।
দু’বছর যেতে না যেতেই বাম, কংগ্রেস ও নির্দল সদস্যরা দলবদলের ফলে শাসকদল ক্ষমতা দখল করে। তা সত্ত্বেও লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে শাসকদলের ভরাডুবি হয়। গত দু’টি নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের নিরিখে ১৭টি ওয়ার্ডেই শাসকদল গেরুয়া শিবিরের চেয়ে পিছিয়ে যায়। গত বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের ভিত্তিতে জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ এলাকায় গেরুয়া শিবির সাড়ে এগিয়ে রয়েছে। ভোটের এই ফল স্থানীয় নেতৃত্বের পাশাপাশি জেলা নেতৃত্বের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ ফেলেছিল। কাজেই হারানো জমি ফিরে পেতে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে তৃণমূল নেতৃত্ব।
যদিও বিধানসভা ভোট মিটতেই বাম, কংগ্রেস ও বিজেপি থেকে ধারাবাহিকভাবে নেতা-কর্মীরা শাসকদলে যোগ দেওয়ায় বিরোধীদের অস্তিত্ব কার্যত সঙ্কটে। তৃণমূল সূত্রের খবর, পুরসভা ভোটকে পাখির চোখ করে ময়দানে নেমেছে নেতা-কর্মীরা। ইতিমধ্যেই দেওয়াল দখলের কাজ শেষ হয়েছে। বুথে বুথে পাড়া কমিটি গঠনের কাজ শেষ পর্যায়ে।
জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ পুরসভার প্রশাসক প্রসেনজিৎ ঘোষ বলেন, বাড়ি বাড়ি জনসংযোগে প্রতিটি বুথে পাড়া কমিটি গঠন করার কাজ চলছে। বুথ অনুযায়ী কোথাও চারটি আবার কোথাও পাঁচটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি পাড়া কমিটিতে সদস্য রয়েছেন। এলাকার বাসিন্দারা কোনও সরকারি পরিষেবা পেতে বা এলাকার সমস্যা সমাধানে পাড়া কমিটিকে জানাতে পারবেন।
গত কয়েক বছরে দুয়ারে সরকার, পাড়ায় সমাধান থেকে সম্প্রতি লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের সুবিধা মানুষ পেয়েছেন এবং পাচ্ছেন। তাই আশা করছি লোকসভা ও বিধানসভা ভোটের ভুল আর মানুষ করবে না। ১৭টি ওয়ার্ডেই আমাদের প্রার্থীরা জয়লাভ করবেন।
মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল সাংসদ আবু তাহের খান বলেন, রাজ্য সরকারের একাধিক জনমুখী প্রকল্প চালু রয়েছে। প্রতিটি পরিবার কোনও না কোনও সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছেন। তা সত্ত্বেও হয়তো বিরোধীরা নানা ভাবে জন মানুষকে ভুল বুঝেছেন যে কারণে আমরা পিছিয়ে রয়েছি। অতীতের ভুল শুধরে নিয়ে আমাদের নেতা-কর্মীরা মানুষের দুয়ারে দুয়ারে যাচ্ছেন"।
যদিও দক্ষিণ মুর্শিদাবাদ জেলা বিজেপির সভাপতি তথা বিধায়ক গৌরীশংকর ঘোষ বলেন, মানুষ তৃণমূলের নানান ধরনের অত্যাচার শোষণ দেখেছে এলাকায়। সেই কারণে তারা আমাদের সঙ্গে গত নির্বাচনে আমাদের সঙ্গে থেকে যে আগামী দিনেও থাকবে।কবে তৃণমূল নিশ্চিত মানুষকে ভয় পাওয়া তে তাদের মনে সন্ত্রাস তৈরি করতে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করবে ভোটের গণতান্ত্রিক পরিবেশ নষ্ট করার জন্য। এটাই তৃণমূলের কালচার"।