সংক্ষিপ্ত

  • ক্যান্সার আক্রান্তদের নিয়ে কাজ করেন দেবাশীষ সরকার
  • নিজেও আক্রান্ত হয়েছিলেন মারণরোগে
  • শিলিগুড়ির বাসিন্দা দেবাশীষ পেশায় সাংবাদিক

কয়েক দশক ধরে সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত। তারই সঙ্গে মহাকাশ গবেষণা নিয়েও চর্চা চলছিল। কিন্তু তিন বছর আগে একটি খবরেই জীবনটা যেন থমকে গিয়েছিল। শিলিগুড়ির বাসিন্দা দেবাশীষ সরকার জানতে পেরেছিলেন, তিনি মারণরোগ ক্যান্সারে আক্রান্ত। 

নিজের অসুখের কথা জানতে পেরে স্বভাবতই ভেঙে পড়েছিলেন। গ্রাস করেছিল একরাশ হতাশা। যদিও, সেই হতাশা কাটিয়ে উঠেই এখন হাসিমুখে অন্যদের ক্যান্সার থেকে বাঁচার পথ বাতলে দিচ্ছেন। তাঁর দেখানো পথেই আশার আলো দেখছেন অনেক ক্যান্সার রোগী। আজ তিনি সফল মোটিভেটর। 

কিন্তু কীভাবে নিজের জীবনে এই বদল এল? দেবাশীষবাবু জানালেন, তাঁকে নতুন করে আশার আলো দেখিয়েছিল এক চিকিৎসকের  প্রেস্ক্রিপসনে লেখা একটি লাইন। ক্যান্সারের চিকিৎসা শুরুর পরেই এক অঙ্কোলজিস্টের প্রেস্ক্রিপসনে 'ক্যান্সার হ্যাজ আন অ্যান্সার'। দেবাশিীষবাবু জানালেন, 'একদিকে রোগ মানুষটাকে নিজের দিকে টানার চেষ্টা করে, অন্যদিকে চিকিৎসকরা তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। এটা একটা লড়াই। এই লড়াইতে জিততে হলে তো লড়তে হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার কথা জানতে পেরেই রোগী হাল ছেড়ে দেন। এখানেই কিন্তু লড়াইটা অর্ধেক শেষ হয়ে যায়। কে জিতবে, কে হারবে, সেটা পুরোটাই অনেকগুলি অজানা বিষয়ের উপরে নির্ভর করে। তাহলে আমরা হাল ছাড়ব কেন? আমাদের কাজই হল এই ধরনের মানুষকে সাহস জোগানো।'

দেবাশীষবাবু স্বীকার করে নিয়েছেন, ক্য়ান্সারে আক্রান্ত হওয়াই একটা বিরাট মানসিক ধাক্কা। সেই ধাক্কা কাটিয়ে ওঠাও সহজ নয়। নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি বলেন, 'অনেক বড় বড় ক্য়ান্সার চিকিৎসকরা নিজেদের প্রেস্কিপসনে ছোট করে লিখে রাখলেন, ক্যান্সার হ্যাজ আন অ্যান্সার। এই ছোট্ট লেখাটাই অজান্তে একজন রোগী লড়াইয়ের সাহস জোগাতে সাহায্য করে। সেই মানুষই ঘুরে দাঁড়ান, হেরে গিয়েছি বলে প্রথমেই হাল ছেড়ে দেন না। ঘটনাচক্রে আমার সঙ্গেও এরকমটাই হয়েছিল।'

সাংবাদিক হওয়ার পাশাপাশি আজ মোটিভেটর হিসেবে বিশেষ ভূমিকা পালন করছেন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের জন্য। শত ব্যস্ততার দেবাশীষবাবু এখন ক্যান্সার আক্রান্তদের জন্য সময় বের করে নেন। তিনি মনীষা নন্দী ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা মণ্ডলীর চেয়ারম্যান। এই সংস্থা মূলত ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের নিয়ে কাজ করে। দেবাশীষবাবু জানান, সারা বছরই তাঁদের এই সংস্থার পক্ষ থেকে কমবেশি নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে এবার চতুর্থ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে তাঁরা বিশেষ কর্মসূচি পালনে উদ্যোগী হয়েছেন। যেখানে বিশিষ্ট চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে ক্যান্সার সচেতনতা ও প্রতিরোধ বিষয়ক খোলামেলা আলোচনা হবে।