সংক্ষিপ্ত
- সরকার থেকে নেই কোনও সাহায্য
- আজও হাসপাতাল খোলার অপেক্ষায় ডাক্তারবাবু
- বন্ধ হাসপাতালের বারান্দাতেই চলে চিকিৎসা
- বিনামূল্যে ওষুধ পান রোগীরা
হাসপাতাল বন্ধ হয়ে গিয়েছে সেই কবে। তবু তার মায়া ত্যাগ করতে পারেননি পুরুলিয়া গভর্নমেন্ট হোমিওপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজ এন্ড হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডঃ মণীন্দ্র নাথ জানা। আজও সেই বন্ধ হাসপাতালের ভাঙাচোরা বারান্দায় বসে এক মনে রোগী দেখে চলেন তিনি। তবে এই কাহিনীর এখানেই শেষ নয়। বিনামূল্যে গরীব, দুঃস্থ ও আর্থিক ভাবে দুর্বলদের হোমিওপ্যাথির চিকিৎসা পরিষেবা দিয়ে চলেছেন মণীন্দ্রনাথ।
তাঁর একটাই কথা হোমিওপ্যাথি কলেজ বন্ধ হয়ে গেলেও, সরকার থেকে কোন রকম আর্থিক সাহায্য না পেলেও, তিনি যতদিন বাঁচবেন গরীব মানুষের বিনামূল্যে চিকিৎসা করার পাশাপাশি ওষুধ দেওয়ার কাজ করে যাবেন।
১৯৮০ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের আয়ুশ মন্ত্রকের অনুমোদন নিয়ে রাজ্য সরকারের অধীন পুরুলিয়া শহরের উপকণ্ঠ দুলমিতে পথ চলা শুরু হয় পুরুলিয়া গভর্নমেন্ট হোমিওপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের। দীর্ঘ প্রায় ২৮ বছর পুরোদমে কলেজ এবং হাসপাতাল চালু ছিল। পরে পরিকাঠামগত সমস্যার কারণ দেখিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয় পুরুলিয়ার এই হোমিওপ্যাথি হাসপাতাল।
বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এই কলেজের অধ্যক্ষ এবং সেক্রেটারি ডঃ মণীন্দ্র নাথ জানা সহ মোট ২৫ জন শিক্ষক অশিক্ষক কর্মী আজ বেকার। একটা সময় তাঁরা একটা নির্ধারিত মূল্য পেলেও আজ আর কোন রকম সরকারি সাহায্য পাওয়া যায় না। ২০১২ সালে পুরুলিয়ার হুটমুড়ার জনসভা মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন হোমিওপ্যাথি কলেজটি পুনরায় চালু করা হবে। কিন্তু আজও এই কলেজটি চালু হয়নি।
আজ ভাঙাচোরা বাড়ির রূপ নিয়েছে কলেজ। চারিদিকে আগাছা আর জঙ্গল পুরো কলেজ ক্যাম্পাসকে গ্রাস করেছে। ৯ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা পুরুলিয়ার হোমিওপ্যাথি কলেজ দেখলে আজ মনেই হবে না একসময় এখান থেকে দেওয়া হত হোমিওপ্যাথি ডিগ্রী। হাসপাতালে হত কঠিন রোগের চিকিৎসা। তবুও আজও ৬৭ বছর বয়স্ক মণীন্দ্র নাথ জানা দীর্ঘ পনেরো বছর ধরে এলাকার দুস্থ অসহায় মানুষদের বিনামূল্যে হোমিওপ্যাথির চিকিৎসা পরিষেবা দিয়ে চলেছেন।
পয়লা জুলাই চিকিৎসক দিবসের এই চিকিৎসক জানান কলেজ বন্ধ হলেও যতদিন বাঁচবেন এই ভাবেই বিনা পারিশ্রমিকে চিকিৎসার কাজ চালিয়ে যাবেন। মুখ্যমন্ত্রী ২০১২ সালে পুরুলিয়ায় এসে ঘোষণা করেছেন পুরুলিয়ার হোমিওপ্যাথি কলেজটি পুনরায় চালু করা হবে সে আশাতেই তো বুক বেঁধে আছি। হয়তো একদিন মুখ্যমন্ত্রী ঠিক কথা রাখবেন।
নিয়ম করে প্রতিদিন সকাল এবং সন্ধেবেলা বন্ধ হোমিওপ্যাথি কলেজের বারান্দার চেম্বার খুলে বসেন এলাকার সবার পরিচিত জানা ডাক্তার বাবু। বিনামূল্যে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা পরিষেবা সাথে বিনামূল্যে ওষুধ পেয়ে খুশি পুরুলিয়া শহর সহ আশেপাশের গ্রামের মানুষ।