সংক্ষিপ্ত
রাজ্যে যখনই ভোট হচ্ছে তখনই এই সব ছবি বারবার সামনে আসছে। নির্বিঘ্নে এবং সমস্ত নিয়ম মেনে ভোটদান বোধহয় এখন সোনার পাথরবাটির মতোই স্বপ্ন। বালিগঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচনের জেরে এই প্রশ্ন ফের সামনে উঠে এল। ভোটদান তাহলে কি সত্যি সত্যি দূর্বৃত্তায়ণের দুষ্টুচক্রের বশবর্তী হয়ে গেল। না প্রশাসন, না রাজনৈতিক পার্টি কেউ কোনও উত্তর দিচ্ছে না।
সকাল থেকেই বারবার উত্তেজনা ছড়ায় বালিগঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচনে। কখনও অভিযোগ ওঠে যে শাসকদল বিরোধী দলের রাজনৈতিক দলের এজেন্টকে বুথে বসতে দেয়নি। আবার কোনও বুথ থেকে অভিযোগ আসে যে ভোটগ্রহণ রুমের ভিতরে খোদ পুলিশ দাঁড়িয়ে রয়েছেন। এই নিয়েও বারবার প্রশ্ন ওঠে। আবার কোনও কোনও কেন্দ্রে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস অভিযোগ করে, সিআরপিএফ জওয়ানরা ভোটদাতাদের সঙ্গে মোবাইল থাকলে বুথে ঢুকতে দিচ্ছেন না। এইভাবেই অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগকে ঘিরে সকাল থেকেই উত্তাপ ছড়ায় বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে।
বিজেপি-র পক্ষ থেকে আবার বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের ৫৫ থেকে ৬০ নম্বর বুথ পর্যন্ত ব্যাপক রিগিং-এর অভিযোগ করা হয়। অনেক ভোটাদাতাও বুথের মধ্যে পুলিশ দেখে প্রশ্ন তোলেন। এমন কোনও নিয়ম নির্বাচন কমিশনের রয়েছে কি না তাও জানতে চান। কিন্তু, পুলিশ কোনওভাবেই এই নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি। এমনকী, কোনও জবাবও দেয়নি। বিজেপি-র পক্ষ থেকে যে সব বুথে ব্যাপক রিগিং-এর অভিযোগ তোলা হয়, তারমধ্যে ছিল- সেন্ট অগাস্টিন ডে স্কুল, মুল্লা জন মেমোরিয়াল স্কুল, লরেটো ডেজ স্কুল সিনিয়র, কেএমসিপি উর্দু স্কুল, প্রগ্রেসিভ ডে স্কুল। রিগিং-এর যাবতীয় অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করে তৃণমূল কংগ্রেস।
অশোকা হল বুথে আবার তৃণমূল কংগ্রেস অভিযোগ করে যে বৈধ ভোটদাতাদের ভোট দিতে দিচ্ছে না আধা সেনা। তারা অভিযোগ করে যে ভোটদাতাদের সঙ্গে মোবাইল থাকলে তাদের ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। ভোটদাতারা যদি মোবাইল সুইচ অফ করে দেন, তাহলেও তাদের ভোট দিতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করতে থাকে তৃণমূল কংগ্রেস। এই নিয়ে উত্তেজনা ছড়ায়। পরে এই নিয়ে জটিলতা দূর হয়। যদিও বিজেপি অভিযোগ করে যে কলকাতা পুরসভার ৬৫ নম্বর ওয়ার্ডের ১৭২ নম্বর পার্টের বুথে থাকা তাদের এজেন্ট সুমিত ঘোষকে তৃণমূল কংগ্রেস হুমকি দিয়েছে।
বুথে বুথে পুলিশ থাকা নিয়ে সকাল থেকেই সরব ছিলেন বালিগঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী কেয়া ঘোষ। তিনি সেন্ট লরেন্স স্কুলে ভোটদান পরিদর্শন করতে গিয়ে সেখানে ভোটদান কক্ষে পুলিশ দেখতে পান। এই নিয়ে প্রিসাইডিং অফিসারের কাছে নালিশও করেন। অভিযোগ, প্রিসাইডিং অফিসার সাহায্য না করায় কেয়া এবং কংগ্রেস প্রার্থী কামরুজ্জামান পুলিশকে জোর করে ভোটদান কক্ষ থেকে বের করেন। একটি ভিডিও ক্লিপে দেখা যায় যে পুলিশকর্মী কেয়া অথবা কামরুজ্জামান-এর প্রশ্নের কোনও উত্তর না দিয়েই সেখান থেকে দৌঁড়ে বেরিয়ে যান। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার অভিযোগ করেন পুলিশকে দিয়ে ছাপ্পা ভোট দেওয়া হচ্ছে। আর সেই কারণে পুলিশ বুথের ভিতরে রয়েছে।
এদিকে, বালিগঞ্জের একটি কেন্দ্র এক মহিলা ভোটদাতার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সিপিএম প্রার্থী সায়রা হালিম। তিনি ওই মহিলা ভোটারের কাছে কিছু তথ্য জানতে চাইলে তিনি কোনও সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। এমনকী তাঁর দেওয়া তথ্যের সঙ্গে ওই মহিলার দেওয়া তথ্য মিলছিল না। বিজেপি অভিযোগ করতে থাকে ওই মহিলা আসলে একজন ভুয়ো ভোটার। এমনকী ওই মহিলা বিভিন্ন বুথে বুথে ঘুরে ভোট দিয়েছিল বলে অভিযোগ। সংবাদমাধ্যমকে দেখে এবং বিরোধী দলের কড়া নজরদারির সামনে পড়ে ওই মহিলা শেষমেশ পালিয়ে যান।