সংক্ষিপ্ত
বন দফতরের তরফে জানা গিয়েছে, একসময় সুন্দরবন থেকে শুরু করে মায়নমার, থাইল্যান্ড হয়ে মালয়েশিয়া উপকূল পর্যন্ত এই বিশেষ ধরনের কচ্ছপের বসতি ছিল। কিন্তু, বর্তমানে এই প্রজাতির কচ্ছপ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।
বাঘের (Tiger) পর এবার কচ্ছপের (Turtle) শরীরে জিপিএস ট্রান্সমিটার (GPS transmitter) নামক একপ্রকার ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্র (Electronics instruments) ব্যবহার করেছে সুন্দরবন (Sundarbans) ব্যাঘ্র প্রকল্প। বাটাগুড় বাসকা (Northern River Terrapin) বা পোড়া কাঠা নামক এক বিশেষ ও বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির কচ্ছপের (Rare Species of Turtle) শরীরে এই রেডিও ট্রান্সমিটার বসিয়ে বুধবার সুন্দরবনের নদী খাঁড়িতে ছাড়া হয় তাদের। বিলুপ্ত প্রায় এই প্রজাতির কচ্ছপের গতিবিধি, তাদের বংশ বিস্তার এবং পরিবেশের সঙ্গে তারা কীভাবে সামঞ্জস্য রক্ষা করছে সে বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতেই এদের গতিবিধির উপর নজরদারি চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প।
বন দফতরের তরফে জানা গিয়েছে, একসময় সুন্দরবন থেকে শুরু করে মায়ানমার (Myanmar), থাইল্যান্ড (Thailand) হয়ে মালয়েশিয়া উপকূল পর্যন্ত এই বিশেষ ধরনের কচ্ছপের বসতি ছিল। কিন্তু, বর্তমানে এই প্রজাতির কচ্ছপ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। বেশ কিছু বছর আগে, প্রায় ১৯৯৫-৯৬ সালে বন দফতরের তরফে সমুদ্র তীর থেকে অলিভ রিডলে বা সামুদ্রিক কাঠা প্রজাতির কচ্ছপের ডিম সংগ্রহ করে তা ফোটানো হয়। কিন্তু, সেই নবজাতক কচ্ছপগুলির মধ্যে বাটাগুড় বাসকা (Batagur Baska) প্রজাতির কচ্ছপের সন্ধান পায় বন দফতর। সেই থেকেই এই বাটাগুড় বাসকা প্রজাতির কচ্ছপের সংরক্ষণ শুরু করে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প।
আরও পড়ুন- শীতের লুকোচুরি, আজ একাধিক জেলায় বৃষ্টির সম্ভাবনা
সুন্দরবনের সজনেখালিতে আলাদা একটি পুকুর তৈরি করে সেখানেই বেশ কিছু বছর ধরে এই কচ্ছপ সংরক্ষণ ও তার প্রজনন করা হচ্ছে। মাত্র ১২টি কচ্ছপ থেকে বংশবৃদ্ধি হয়ে বর্তমানে ৩৭০ টি বাটাগুড় বাসকা প্রজাতির কচ্ছপ রয়েছে ব্যঘ্র প্রকল্পের কাছে। বর্তমানে সজনেখালির পাশাপাশি দোবাঁকি, খাটোয়াঝুড়ি ও হরিখালিতে এদের সংরক্ষণ ও প্রজননের ব্যাবস্থা করেছে বন দফতর। সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, প্রজননে সক্ষম এইরকম বেশ কিছু বাটাগুড় বাসকা প্রজাতির দশটা কচ্ছপকে সুন্দরবনের নদীতে ছাড়া হয়েছে। যার মধ্যে ৭ টি স্ত্রী ও ৩ টি পুরুষ কচ্ছপ রয়েছে। এদের গতি প্রকৃতির উপর নজরদারি চালাতে দশটি কচ্ছপের শরীরেই জিপিএস ট্রান্সমিটার বসানো হয়েছে। এরফলে বিলুপ্ত প্রায় এই প্রজাতির কচ্ছপ সম্পর্কে আরও অনেক তথ্য জানা যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন- পেট্রল-ডিজেলের দাম কি বাড়ল, দেখে নিন আজকের জ্বালানির দর
আরও পড়ুন- মাটি খুঁড়তেই বেরল প্রচুর বন্দুক, কার্তুজ- হতবাক গ্রামবাসী
বাটাগুর বাসকা কী?
নর্দার্ন রিভার টেরাপিনকে (বাটাগুর বাসকা) ভারতের উপকূলীয় ম্যানগ্রোভ জলাভূমি, নদী এবং ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মোহনায় পাওয়া যেত। যদিও ওড়িশার উপকূলে এই প্রজাতির কচ্ছপ আর নেই বলেই অনুমান। ২০০৮ সালে, একটি টার্টল সারভাইভাল অ্যালায়েন্স ইন্ডিয়া প্রোগ্রাম/সুন্দরবন টাইগার রিজার্ভ (এসটিআর) দলের যৌথ অনুসন্ধানে সজনেখালি ইন্টারপ্রিটেশন সেন্টার থেকে একটি পুকুরে বসবাসকারী আটটি পুরুষ, তিনজন মহিলা এবং একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক বাটাগুর বাসকার খোঁজ পাওয়া যায়। ধীরে ধীরে বিলুপ্ত প্রায় প্রাণীতে পরিণত হয়েছে এই প্রজাতির কচ্ছপ। আর সেই কারণেই এই পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পেরে পশ্চিমবঙ্গ বন বিভাগ এদের সংরক্ষণে তৎপর হয়।