সংক্ষিপ্ত
- তাঁর পাঁচ সঙ্গীকে নৃশংসভাবে খুন করেছে জঙ্গিরা
- বরাতজোরে প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন মুর্শিদাবাদে জহিরুদ্দিন সরকার
- গুরুতর আহত হয়ে শ্রীনগরের হাসপাতালে ভর্তি তিনি
- হাসপাতালে শয্যায় শুয়ে শোনালেন সেই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা
দু'পয়সা বেশি রোজগার হবে, পরিবারের লোকেরা ভালো থাকবেন। এই আশাতেই ঘরবাড়ি-স্বজনদের ছেড়ে মুর্শিদাবাদ থেকে কাশ্মীরে শ্রমিকের কাজ করতে গিয়েছিলেন কামিরুদ্দিন, মুরসেলিমরা। কিন্তু জঙ্গিরা যে তাঁদের গুলি করে খুন করবে, তা কেন জানত! আতঙ্ক গ্রাস করেছে সাগরদিঘির ব্রাহ্মণী গ্রামের বাসিন্দাদের। কুলগ্রামে জঙ্গি হত্যালীলায় প্রাণ গিয়েছেন পাঁচজনের। গুরুতর আহত হয়ে শ্রীনগরের হাসপাতালে ভর্তি জহুরুদ্দিন সরকার নামে এক আরও একজন। তিনি জানিয়েছেন, ঘটনার সময়ে তাঁরা সকলে একসঙ্গেই ছিলেন। তাঁদের জঙ্গলে নিয়ে যায় জঙ্গিরা। কিছু বুঝে ওঠার আগে নির্বিচারে গুলি চালাতে শুরু করে। জানা গিয়েছে, জহিরুদ্দিনের শরীরের ছয়টি গুলি লেগেছে। শ্রীনগরে হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করে চারটি গুলি বের করেছেন চিকিৎসকরা।
জনমজুরি বা রাজমিস্ত্রির কাজ করে আর ক'পয়সাই বা রোজগার হয়! কোনওমতে সংসার হয়তো চলে যায়, কিন্তু অভাব মেটে না। মুর্শিদাবাদের মতো প্রান্তিক জেলা ফি বছরই ভিনরাজ্যে কাজ করতে যান বহু মানুষ। সেই তালিকায় আছে কাশ্মীরও। জানা গিয়েছে, থাকা-খাওয়ার খরচ লাগত না। তার উপর এ রাজ্যের থেকে মজুরি অনেক বেশি পাওয়া যায়। তাই কাশ্মীরের আপেল বাগানে ঠিকাশ্রমিক হিসেবে কাজ যান মুর্শিদাবাদে বহু মানুষ। ঠিক যেমনটা গিয়েছিলেন সাগরদিঘির ব্রাহ্মণী গ্রামের মুরসেলিম শেখ, কামিরুদ্দিন শেখ, শেখ মহম্মদ রফিক, শেখ নিজামুদ্দিন, মহম্মদ রফিক শেখ ও জহুরুদ্দিন সরকাররা। সোমবার কুলগ্রামে নৃশংসভাবে পাঁচজনকে খুন করেছে জঙ্গিরা। নেহাতই বরাতজোরে প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন জহিরুদ্দিন শেখ। জানা গিয়েছে, শরীরের ছয়টি গুলির আঘাত নিয়ে গুরুতর আহত হয়ে ঘটনাস্থলে পড়েছিলেন বাংলার ওই শ্রমিক। কিন্তু জঙ্গিরা ভেবেছিল, তিনি মারা গিয়েছেন। এখন গুরুতর আহত অবস্থায় শ্রীনগরের হাসপাতালে ভর্তি জহিরুদ্দিন সরকার।
টস্রেফ ব্রাহ্মণী গ্রামই নয়, কাশ্মীরে এই নৃশংস হত্যালীল আতঙ্কে ছায়া নেমেছে মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘিতে। উদ্বিগ্ন জখম জহিরুদ্দিন সরকারের পরিবারের লোকেরা। তাঁর বাবা সামাদ সরকার বলেন, 'জানিনা, ছেলেটা কেমন আছে? ওর সঙ্গে ঠিক কী ঘটেছে? কবে বাড়ি ফিরবে? আল্লার কাছে দোয়া করছি, ও দ্রুত ফিরে আসুক আর বাইরে কাজে পাঠাবো না। ' সত্যি কথা বলতে, শুধু সামাদ সরকারই নন, ভিন রাজ্যে কাজ করতে যাওয়ার কথা শুনলে এখন আতঙ্কে সিটিয়ে যাচ্ছেন মুর্শিদাবাদের মানুষেরা। সকলের এখন একটাই প্রশ্ন, মুর্শিদাবাদ থেকে আরও যাঁরা কাশ্মীরে কাজ করতে গিয়েছেন, তাঁরা ভালো আছেন তো? বেঁচে আছেন তো?
জানা গিয়েছে, কাশ্মীরের মৃত পাঁচ শ্রমিকদের দেহ আনা হবে কলকাতায়। মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে শেষকৃত্যের সময়ে মৃতদের পরিবারের পাশে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মৃতদের পরিবার পিছু পাঁচ লক্ষ আর্থিক সাহায্য করার কথা ঘোষণা করেছেন তিনি। বুধবার সকালে সাগরদিঘির ব্রাহ্মণী গ্রামে যান বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরিও।