সংক্ষিপ্ত
মালবাজারের হড়পা বানের ঘটনায় সকলেই দুঃখপ্রকাশ করছেন। যেভাবে দশমীর দিনে প্রতিমা নিরঞ্জনে এমন এক প্রাকৃতিক বিপর্যয় তাতে ব্যাখ্যা করার ভাষা নেই বলেই অনেকে মন্তব্য করেছেন। যদিও, স্বজন হারানোর দল ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন হাসপাতালের উপরে।
মালবাজারে হড়পা বান বিপর্যয়ে মৃতের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এখনও বহু মানুষ নিখোঁজ। মৃতদের মধ্যে রয়েছে এক শিশুকন্যাও। এমন এক শোকের পরিস্থিতিতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছেন জলপাইগুড়ির মালবাজারের মানুষ। যার ক্ষোভ আঁছড়ে পড়েছে মালবাজার সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে কয়েক জন হাসপাতালে ভোররাতে ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ।
জানা গিয়েছে, মালবাজার সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে চিকিৎসা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন একদল উত্তেজিত জনতা। তাঁদের অভিযোগ, হাসপাতালে চিকিৎসা পরিকাঠোমার অভাবে বেশ কয়েকজনকে বাঁচানো যায়নি। এমনকী এদের আরও অভিযোগ, যে সব আহতদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসাতেও ঘোর গাফিলতি দেখা গিয়েছে। একের পর এক মানুষকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হলেও সেভাবে চিকিৎসাকর্মীদের দেখা পাওয়া যাচ্ছিল না বলে অভিযোগ। এই উন্মত্ত জনতাদের আরও অভিযোগ, এমন একটি ঘটনায় যে পরিমাণ তৎপরতা চিকিৎসার ক্ষেত্রে দেখাতে হত তা দেখা যায়নি। যার জেরে ক্ষোভের আগুনের প্রকাশ ঘটে। এমনকী, স্থানীয় প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ কর্তা থেকে রাজনৈতিক জনপ্রতিনিধিদেরও ঘটনাস্থলে দেখা মেলেনি বলে অভিযোগ।
Subscribe to get breaking news alerts
দশমীর দিনে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য মানুষ জড়ো হয়েছিল। সেখানে হড়পা বান এসে যেভাবে মানুষ-প্রতিমাকে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে তার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। মানুষ এমন এক ভয়ানক দৃশ্য দেখে হাহাকার করছে। অথচ, স্থানীয় উচ্চপদস্থ প্রশাসনিক কর্তা থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধিদের দেখাই পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। সংবাদমাধ্যমের টেলিভিশনের পর্দায় এইসব উচ্চপদস্থ-গণমান্যদের গলা শোনা গেলেও ঘটনাস্থলে এরা কেউ-ই আসেননি বলে অভিযোগ।
এই সমস্ত অভিযোগ নিয়ে হাসপাতালে থাকা একদল মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েন। যার ক্ষোভ আঁছড়ে পরে হাসপাতালের পরিকাঠামোর উপরে। ভেঙে দেওয়া হয় জানলার কাঁচ, কেবিন। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। কোনও চিকিৎসাকর্মী নিগৃহীত হননি বলে এখন পর্যন্ত খবর।
দশমীর বিসর্জন উপলক্ষে মালবাজারের মাল নদীতের পাড়ে জমা হয়েছিলেন হাজার হাজার মানুষ। মাল বাজার শহর এবং তার লাগোয়া বিভিন্ন চা-বাগানের দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনের জন্য মাল নদীর পারে আনা হয়েছিল। বিসর্জন চলাকালীন রাত সাড়ে ৮টায় হড়পা বান ব্যাপক আকার নেয়। আর তাতে মুহূর্তে ভেসে যান অসংখ্য মানুষ। ভোর রাত পর্যন্ত ৮ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে। যদিও বেসরকারি মতে মৃতের সংখ্যা ১৬। ৫০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। এরমধ্যে ৪০ জন নদীর মাঝে একটি উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছিল। হাসপাতালে ১৫ জন ভর্তি রয়েছেন। এরা জলে ভেসে আসা পাথরের ধাক্কায় জখম হয়েছেন। মৃতদের দেহ ময়নাতদন্তের জন্য বৃহস্পতিবার জলপাইগুড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে। এরপরই তা পরিবার পরিজনের হাতে তুলে দেওয়া হবে। মালবাজারের ঘটনায় রাতেই টুইট করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মৃতদের পরিবারকে সমবেদনা জানান তিনি।
আরও পড়ুন-
২০ মিনিট ধরে বাড়ছিল জল, দড়ি নিয়ে বিপর্যয় মোকাবিলা ছিল অসম্ভব, মালবাজার হড়পা বানে চাঞ্চল্যকর তথ্য
মাল নদীর 'রাক্ষুসে' জল স্রোত গিলে খেল দাদুকে, প্রৌঢ়ের তৎপরতায় বাঁচল ছোট্ট নাতি
বিসর্জনে বিষাদ! হড়পা বানে তলিয়ে মৃত ৭, শোক প্রকাশ প্রধানমন্ত্রী মোদীর