সংক্ষিপ্ত
যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে বাড়ি ফিরলেন বালি বাসিন্দা ডাক্তারি পড়ুয়া অন্বেষা দাস । নবীনের মৃত্যুর খবরে যখন কর্ণাটকে আকণ্ঠ যন্ত্রনায় ডুবে শেখরাপ্পার পরিবার, ঠিক তখনই বেলুড়ের দাস পরিবারে ফিরল মুক্ত ঝরানো হাসি।
যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে বাড়ি ফিরলেন বালি বাসিন্দা ডাক্তারি পড়ুয়া অন্বেষা দাস ( Medical student Annesha Das)। নবীনের মৃত্যুর খবরে যখন কর্ণাটকে আকণ্ঠ যন্ত্রনায় ডুবে শেখরাপ্পার পরিবার, ঠিক তখনই বেলুড়ের দাস পরিবারে ফিরল মুক্ত ঝরানো হাসি। শুধু ফের হল না নবীনের। ইউক্রেন-রাশিয়ার সামরিক অভিযান এবার প্রকৃত ভারতের বুক কাঁপালো। ইউক্রেন থেকে ভারত সরকারের বিমানে (Indian Government Plane ) পাড়ি দিয়ে বাড়ি ফিরল বাংলা মেয়ে। হাওড়ার বেলুড়ের প্যায়ারী মোহন মুখার্জি রোডের বাসিন্দা অন্বেষা দাস(২১)। উইক্রেনের টার্নপিল মেডিকেল ইউনিভার্সিটি তে চিকিৎসা স্বাস্থ্যের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী সে । আতঙ্কের সেই কাহিনী এখনো স্পষ্ট তাঁর চোখে মুখে। চোখ বুজলে এখনো যুদ্ধের সেই ভয়াল চিত্র ভাসছে চোখে সামনে।
ঘরের মেয়েকে ফিরে পেয়ে উৎকণ্ঠা কাটলো বালির দাস পরিবারের। তবু নিজের পরিবারে ফিরে এখনো কাটছে না আতঙ্কের সেই রাতগুলো। যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে ফিরে বালির অন্বেষা শোনালেন সেই ভয়ের কাহিনী। ঠিক কী ঘটেছিল দিলেন তার বিস্তারিত বিবরণ। অন্বেষা জানান, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ভয়ে ভয়ে দিন কাটতো। অন্ধকার নামলেই কালো আঁধারে গোটা শহরকে গ্রাস করতো। ঘরের ভিতরে সব আলো নিভিয়ে রাখতে হতো। এমনটাই ছিল নির্দেশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে। রোজ বিকেলের পরে সন্ধ্যেবার রাত্রি কাটতো যথেষ্ট উদ্বেগ আর ভয় নিয়ে। তখন ভয়টা আরও বাড়তো। এই বুঝি সাইরেন বেজে ওঠে। সাইরেন বাজলেই ওই অন্ধকারের মধ্যেই ছুটে ঢুকতে হবে বাঙ্কারে। এভাবেই কাটছিল সেখানে। এরপর যখন ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষণা ও ইউক্রেনে ভারতীয় দূতাবাসের সক্রিয়তার কথা জেনে আশা জাগে মনে। অন্বেষা জানায় মাঝে আশাহত হয়ে উঠলেও মনের কোণে আশা জেগেছিল যে দেশে ফিরতে পারবে সে। তার পরিবারের কাছে আসতে পারবে। এরপর যখন ভারতীয়দের ইউক্রেন থেকে বের করে আনার প্রচেষ্টা শুরু করে কেন্দ্রীয় সরকার। তখন বুকে বল ফিরে পায় সে । হ্যাঁ আসতে কষ্ট হলেও অবশেষে এই ভয়ের পরিবেশ থেকে ফিরে আসতে পারবে পরিবারের কাছে। তবে খাওয়াদাওয়া নিয়ে সমস্যাতে পড়েছিলেন তারা। অন্বেষা জানান যুদ্ধের শুরু হওয়ার পরই বন্ধ হয়েছিল ইউক্রেন মেস। তখন ভারতীয় মেসই একমাত্র ভরসা ছিল। যদিও তারা একবেলার খাবার দিত। এছাড়া সুপার মার্কেটগুলোতে সেভাবে খাবার ছিল না বলে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
যুদ্ধের পরিস্থিতি আরও ভয়াল হতে পারে ভেবে সকলেই আগে থেকে খাবার তুলে রাখতে শুরু করেছিল। তাই নিজেদের সংগ্রহে থাকা ড্রাই ফুড ও বিস্কুট শুধু সঙ্গী ছিল এমনটাই জানাচ্ছেন ইউক্রেন ফেরত অন্বেষা। সকলের চোখে মুখে ছিল আতঙ্কের চাপ স্পষ্ট বলেই দাবি করেন তিনি। পাশাপাশি রোমানিয়ার সীমান্ত অব্দি যাত্রা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। সীমান্তে দাঁড়িয়ে হাঁটা ও সীমান্ত পার করে রোমানিয়ার ভিতরে প্রবেশ করা এটা খুবই উৎকন্ঠার সময় ছিল। কারণ যেকোনো মুহূর্তে কিছু ঘটতে পারে। তবে ভারতীয় বিদেশমন্ত্রক ও সেখানকার এম্বাসি প্রভূত সাহায্য করেছে তাদের এমনটাই দাবি করেন অন্বেষা। তিনি আরো জানান, কলকাতা বিমান বন্দরে নেমে জানতে পারেন তার অন্যান্য বন্ধুরাও সীমান্ত পার করতে সক্ষম হয়েছে। কারণ সে জানায় সীমান্ত এলাকায় তাপমাত্রা মাইনাসে চলে গেছিলো। ওই ঠাণ্ডাতে খোলা আকাশের নিচে দুই রাত্রি কাটাতে হয়েছে তাদেরকে। যা খুবই কষ্টের। তবে দিল্লি বিমান বন্দরে ফিরে মনে হলো বাড়ি ফিরে এসেছি। এরপর সেখান থেকে কলকাতা পৌঁছে মনে হলো একটা স্বপ্ন পূরণ হলো। বাবা মাকে দেখতে পাওয়া একটা আবেগঘন মুহূর্ত ছিল। তখন নিজেকে সম্পূর্ণ সুরক্ষিত মনে হচ্ছিল। তার বাড়ি ফিরে আসায় অবশেষে কাটল উৎকণ্ঠা। আশঙ্কার দোলাচলে থাকা যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে নানা পথ ঘুরে অবশেষে বাড়ি ফেরা।
আরও পড়ুন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের রফাসূত্র না মেলায় ফের বৈঠকের সম্ভাবনা, আলোচনা চলাকালীনই হামলায় মৃত ১১
মেয়ে ফিরে আসায় খুশি চিকিৎসক পিতা অনুপ দাস। তাঁর কথায়, '‘সংবাদমাধ্যমে যুদ্ধ হতে পারে এমন সম্ভাবনার কথা জেনে অবর্ণনীয় উদ্বেগের মধ্যে ছিলাম। আমরা সকলে ভীষণ উদ্বেগে ছিলাম। যা ভাষাতে প্রকাশ করা অসম্ভব। মাঝের ২৪ ঘন্টা কোনো যোগাযোগ হয় নি তখন ওকে আর দেখতে পাবো কিনা তাও অনিশ্চিয়তার মধ্যে ছিল। তবে ও ফিরে আসায় আমরা খুশি।' অন্বেষার মায়ের বক্তব্য, 'মেয়েকে ফিরে পেয়ে খুব খুশি। কেন্দ্রীয় সরকারকে অশেষ ধন্যবাদ জানাই'। উল্লেখ্য ইউক্রেনে আটকে থাকা ভারতীয়দের নির্বিঘ্নে ফিরিয়ে আনতে ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকার বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের সেখানে পাঠিয়ে আটকে পড়া ভারতীয়দের ফিরিয়ে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেছে কেন্দ্র। ইউক্রেনের গোটা পরিস্থিতির উপর বিশেষ নজর রাখছে কেন্দ্রীয় সরকার। উল্লেখ্য, মুদ্রার অপরপাশে ভারতের জন্য খুবই খারাপ এল।
আরও পড়ুন, রাশিয়াকে রুখতে প্রয়োজনে অস্ত্র হাতে তুলে নিতে প্রস্তুত, জানালেন ইউক্রেনের মহিলা সাংসদ
রাশিয়া ইউক্রেনের সামরিক অভিযানে এই প্রথম প্রাণ গেল কোনও ভারতীয়ের। খারকিভে সোমবার টানা শেলিং ও মিসাইল হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া । এই পরিস্থিতিতে খারকিভে উপস্থিত এক ভারতীয় ছাত্রের মিসাইলের আঘাতে মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। গোটা ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেছে ভারতীয় বিদেশমন্ত্রক। ভারতীয় বিদেশমন্ত্রক সূত্রে খবর ওই ছাত্রের নাম নবীন শেখরাপ্পা। তিনি খারকিভ জাতীয় মেডিকাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিবিএস পড়ছিলেন। ২২ বছর বয়েসী নবীনের সঙ্গে ছিলেন তাঁর এক বন্ধু। তিনি স্টুডেন্ট কন্ট্রাক্টটর ছিলেন ।জানা গিয়েছে, তাঁরা কিছু জিনিস কিনতে দোকানে গিয়েছিলেন। তখনই রাশিয়ান সেনা মিসাইল হামলা চালায়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় নবীন ও তাঁর বন্ধুর।