সংক্ষিপ্ত

  • তিন তালাক বিল পাশ হয়েছে রাজ্যসভায়
  • বেআইনি হচ্ছে তিন তালাক প্রথা
  • নতুন করে আশার আলো দেখছেন মুর্শিদাবাদের সংখ্যালঘু মহিলারা
  • স্বামীর ঘরে ফেরার আশায় দিন গুণছেন তাঁরা
     

রাজ্যসভায় 'তালাক-ই-বিদ্দত’-কে বেআইনি ঘোষণা করে বিল পাশ হয়েছে। আর তার পর থেকেই আশার আলো দেখতে শুরু করেছেন গোলেনুর বিবি, হাসনা বিবিরা।  সংখ্যালঘু অধ্যুষিত মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর, রানিতলার মতো বিভিন্ন এলাকায় তিন তালাক প্রথার বলি এই স্বামী পরিত্যক্তা মহিলারা। সন্তান সমেত কেউ বাপের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন, কারও সেই সৌভাগ্য না হওয়ায় কার্যত রাস্তাতেই দিন কাটাতে হচ্ছে। তিন তালাক প্রথা বেআইনি ঘোষণার পরে তাঁদের আশা, এবার  ঘরে ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হবেন স্বামী। 

জঙ্গিপুর থানার জোতকোমল গ্রামের বাসিন্দা গোলেনূর বিবি বা লালগোলা থানার ফতেপুরের বাসিন্দা রূপালী বেগমদের কারও কোলে একটি, আবার কারও কোলে দু'টি সন্তান। আইনের কঠিন মারপ্যাঁচ নিয়ে সেভাবে ধারণা নেই তাঁদের। কিন্তু তিন তালাক বিল যে তাঁদের স্বামীর ঘরে ফিরিয়ে দিতে পারে, এটুকু বুঝেছেন গোলেনূর, রূপালিরা। গোলেনূর বিবি তো বলেই ফেললেন , এভাবে বেঁচে থাকাই দুঃসহ হয়ে উঠছে, এবার তাহলে কবে স্বামীর ঘরে ফিরতে পারব?'

আরও পড়ুন- তিন তালাক দিয়ে বউকে খুন! বিল পাশের পরেও এই ঘটনায় চাঞ্চল্য এলাকায়

জন ঘণত্বের বিচারে মুর্শিদাবাদই দেশের সবথেকে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত জেলা। রাজ্য সভায় বিল পাশের ঘোষণার পর থেকেই জেলার মুসলিম মহিলাদের মধ্যে সর্বত্র খুশির হওয়া। অধিকাংশ শিক্ষিত মুসলিম মহিলাই এই বিলকে সমর্থন জানিয়ে বলছেন,তিন তালাক বেআইনি ঘোষণা হওয়ার ফলে শুধুমাত্র মুসলিম মহিলাদের নয়,গোটা মুসলমান সমাজের উপকার হবে। তিন তালাক বিরোধী এই বিল পাশ হওয়াকে নারী সমাজের সার্বিক জয় বলেই মনে করছেন তাঁরা। 

জেলার বিশিষ্ট কবি  হাসি খাতুন বলেন, 'এতদিন একটা ভুল পদ্ধতিকে অবলম্বন করে মহিলাদের দমন করে রাখা হত।'  শিক্ষিকা রাফিনা ইয়াসমিন এক ধাপ এগিয়ে বলেন , 'তালাকের অপব্যাখ্যা করে একশ্রেণির মুসলিম ধর্মী গুরু সমাজে পুরুষ শাসন কায়েম করেছেন। এর ফলে মহিলাদের প্রতীবাদের ভাষা অনেক সময় মৃত্যুতে পরিণত হয়েছে । বাকিদের কী অবস্থা, গ্রামেগঞ্জে একটু নজর দিলে তা চোখে পড়বে। স্বাভাবিকভাবেই এই রায়ে মহিলা হিসেবে গর্ব বোধ করছি।'

অন্যদিকে জেলার বিশিষ্ট মুসলিম নেতা তায়েদুল ইসলাম বলেন,'ইসলামের রীতি অনুযায়ী বিবাহ একটি সামাজিক চুক্তি। যে কোনও কারণে এত দিন মুসলিম পুরুষরা ওই চুক্তি তিন তালাকের মাধ্যমে ভঙ্গ করতে পারতেন। মহিলাদের সেই ক্ষমতা ছিল না। তবে শুধু আইনের পথেই নয়, মুসলিম সমাজে বিষয়টি নিয়ে সমাজ সচেতনতার কাজ হলে আরও ভাল হত।'

সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অনেক প্রতিনিধিই এই আইনকে স্বাগত জানালেও তার ব্যতিক্রমও রয়েছে। জমিয়ত উলেমায়ে হিন্দের মুর্শিদাবাদ জেলার সাধারণ সম্পাদক মুফতি মহম্মদ নাজমুল হক বলেন,'আমরা দেশের  আইন, সুপ্রিম কোর্টকে সম্মান করি । তাঁই সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত নিয়ে কিছু বলছি না। তবে সংসদীয় ব্যাবস্থার মধ্য দিয়েই আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামব।'