সংক্ষিপ্ত
- আসানসোলে ধর্মীয় সম্প্রীতির নজির
- হিন্দু বন্ধুর শেষ যাত্রায় মুসলিম প্রৌঢ়
- হিন্দু রীতি মেনে করলেন মৃত বন্ধুর সৎকার
- মুসলিমের মুখেই শোনা গেল রাম নাম
আসানসোল শহরে ঢোকার মুখে স্বাগত তোরণে লেখা থাকে 'সিটি অফ ব্রাদারহুড'৷ কিন্তু গত দু'বছরে অনভিপ্রেত কিছু হিংসার ঘটনায় আসানসোলের এই সুনাম নিয়েই প্রশ্ন উঠেছিল। তার মধ্যেও ভ্রাতৃত্ববোধ অক্ষুন্ন রাখতে দাঙ্গায় পুত্র হারিয়েও শহরের বৃদ্ধ ইমামের মুখে শোনা গিয়েছিল সম্প্রীতির বার্তা৷
আবারও অনন্য সম্প্রীতির সাক্ষী থাকল আসানসোল৷ বন্ধু সুরেন্দ্র ভগত আগরওয়ালের শব কাঁধে তুলে নিলেন শাহিদ খান৷ মুখে আওয়াজ তুললেন ‘রাম নাম সত্য হ্যায়’৷ সেই রাম নাম যাকে কেন্দ্র করে হিংসার বাতাবরণ তৈরি হয়েছে গোটা দেশ। যে রাম নাম বলার জন্য সংখ্যালঘুদের পিটিয়ে মারা অভিযোগ উঠছে।
আসানসোলের রাস্তায় এক মুসলিম প্রৌঢ়ের মুখেই সেই রাম নামই উচ্চারিত হল শুক্রবার সন্ধ্যায়। না, কারও চাপে বা হুমকির মুখে নয়। ক্যানসার আক্রান্ত বন্ধুকে সাত মাস নিজের বাড়িতে রেখে চিকিৎসা করিয়ে মৃত্যুর পর হিন্দু রীতি মেনে সৎকার করলেন এক মুসলিম বন্ধু ৷ মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতো এই ঘটনার সাক্ষী থাকল আসানসোলের সীতারামপুর।
জানা গিয়েছে, পঁচিশ বছর আগে মুম্বইয়ে কাজ করতে গিয়ে রাজস্থানের অজমেরের বাসিন্দা সুরেন্দ্রর আগরওয়ালের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় সীতারামপুরের শাহিদ খানের৷ শাহিদ সুরেন্দ্রর থেকে প্রায় বছর কুড়ির ছোট হলেও বন্ধুর মতো সম্পর্ক হয়ে যায় দু' জনের৷ এর পর মুম্বইয়ের কাজ ছেড়ে সীতারামপুরে ফিরে আসেন শাহিদ৷ তবে পরস্পরের বন্ধুত্ব এবং যোগাযোগ থেকেই যায়৷ সুরেন্দ্র ছুটি পেলেই শাহিদের বাড়ি চলে আসতেন৷ শাহিদের স্ত্রীকে সুরেন্দ্র বেটি বলতেন৷ বন্ধু কাম অভিভাবক হিসাবে সুরেন্দ্রকে মানতো শাহিদের পরিবার৷
শাহিদ বলেন, 'উনি একা মানুষ ছিলেন। আত্মীয়, পরিজন কেউ নেই বলেই আমায় জানিয়েছিলেন। মাস সাতেক আগে খবর পাই সুরেন্দ্র অসুস্থ৷ তারপর জানতে পারি সে ক্যানসার আক্রান্ত৷ চিকিৎসা করাতে গিয়ে জানতে পারলাম, ওনার আয়ু মাত্র মাস দেড়েক। তাই বন্ধুকে একা না ফেলে আমি সঙ্গে করে বাড়িতে নিয়ে আসি৷ ওনাকে দুর্গাপুর, কলকাতা ও বেঙ্গালুরুতেও চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাই৷ এই ভাবেই সাতমাস ধরে তাঁর সেবা করার চেষ্টা করেছি।'
শাহিদের স্ত্রী সুরেন্দ্রকে নিরামিষ রান্না করে দিতেন৷ শাহিদের বাড়িতে আলাদা ঘরের ব্যবস্থা করা হয়েছিল সুরেন্দ্রর জন্য৷ যে রুমে সাঁই বাবা, বজরংবলির ছবি রয়েছে৷ সুরেন্দ্রর ধর্মীয় ভাবাবেগকে সম্মান জানাতে চেষ্টার কসুর করেনি শাহিদের পরিবার৷
শেষ পর্যন্ত শনিবার মৃত্যু হয় সুরেন্দ্রর। ধর্মীয় রীতি মেনে তুলসি, চন্দন, ফুল দিয়ে সুরেন্দ্রর মরদেহ সাজায় শাহিদের পরিবার৷ নিজের কাঁধে শাহিদ বন্ধুর দেহ নিয়ে 'রাম নাম সত্য হ্যাঁয়' ধ্বনি তুলে নিয়ে যান বিদায়গড় শ্মশানে৷ সেখানে দাহ করা হয় তাঁকে৷ শাহিদ বলেন, 'ধর্ম দিয়ে জীবন হয় না, কর্ম দিয়ে হয়৷ ঈশ্বর বা আল্লাহ তার উপরেই মানুষের পাপ পুণ্যের বিচার করেন৷'