সংক্ষিপ্ত
সাবিত্রী ওঁরাও প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার প্রথম কিস্তির ৬০ হাজার টাকা পেয়েছিলেন। তাঁর অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকতেই বাড়িতে হাজির হয় এলাকার তিন তৃণমূল নেতা রফিক আলম, নারায়ণ কর্মকার এবং সোনু ভাস্কর।
জোর করে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ উঠল তিন যুব তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। অভিযোগ, মারধরের পর বৃদ্ধার থেকে জোর করে আবাস যোজনার টাকা হাতিয়ে নেন তাঁরা। তিন অভিযুক্ত নেতার বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাইশা গ্রামে। তবে ওই তিন নেতার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছে তৃণমূল নেতৃত্ব। যদিও এই বিষয় নিয়ে তৃণমূলকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি।
এই গ্রামের বাসিন্দা সাবিত্রী ওঁরাও প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার প্রথম কিস্তির ৬০ হাজার টাকা পেয়েছেন। তাঁর অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকতেই বাড়িতে হাজির হন এলাকার তিন তৃণমূল নেতা রফিক আলম, নারায়ণ কর্মকার এবং সোনু ভাস্কর। অভিযোগ, তাঁরা হুমকির সুরে জানান তাঁদের সাহায্যে এই টাকা বৃদ্ধার অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে। তাই প্রতি কিস্তিতে তাঁদের ভাগ দিতে হবে। বিষয়টি নিয়ে বৃদ্ধা প্রতিবাদ করলে তাঁরা হুমকি দিয়ে চলে যায়। দুদিন পরে ফের বৃদ্ধার বাড়িতে হাজির হন অভিযুক্তরা। ঘর থেকে তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় রফিক আলমের বাড়িতে। সেখানেই তাঁকে গলা চেপে ধরে তিনজন মারধর করে। এরপর জোর করে আঙুলের ছাপ নিয়ে অ্যাকাউন্ট থেকে ১২ হাজার টাকা তুলে নেন বলে অভিযোগ।
জখম অবস্থায় কোনও ক্রমে বাড়ি ফিরলে বৃদ্ধার ছেলে তাঁকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে এখনও পর্যন্ত অসুস্থ রয়েছেন বৃদ্ধা। পরিবারের অভিযোগ, তাঁদের গ্রাম ছাড়া করানোর হুমকিও দিয়েছে অভিযুক্ত যুব তৃণমূল নেতারা। এরপরই হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় ওই তিন যুব তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন তাঁরা। এদিকে অভিযোগ দায়ের করার পরই এনিয়ে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়ে গিয়েছে। এই ঘটনায় তৃণমূলের সমালোচনা করেছে বিজেপি। যদিও জেলা তৃণমূলও এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ। ওই তিন যুব নেতার বিরুদ্ধে দলগতভাবে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ যাতে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেয় সেই দিকেও নজর দিচ্ছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। তবে, এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সোনু ভাস্কর।
আরও পড়ুন- ফের বাড়ল রান্নার গ্যাসের দাম, কলকাতায় ভর্তুকিহীন সিলিন্ডারের দাম ২৫ টাকা বেড়েছে
আক্রান্ত সাবিত্রী ওঁরাও বলেন, "আবাস যোজনার প্রথম কিস্তির ৬০ হাজার টাকা অ্যাকাউন্টে ঢুকেছিল। গলা টিপে ধরে জোর করে আমার আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে ১২ হাজার টাকা তুলে নিয়ে চলে যায়। বলে ওদের জন্যই টাকা পেয়েছি তাই ওদেরকে দিতেই হবে। আমি বয়স্ক মানুষ তাই কিছু করতে পারিনি।" বৃদ্ধার ছেলে রামপ্রসাদ ওঁরাও বলেন, "আমরা কেউ বাড়িতে ছিলাম না। সেই সময় ওই তিনজন তৃণমূল নেতা বাড়িতে আসে। আমার মাকে গালিগালাজ করে মারধর করে। জোর করে টাকা তুলে নিয়ে চলে যায়। আমরা ওদের শাস্তি চাই এবং টাকা ফেরত চাই।"
এ প্রসঙ্গে জেলা তৃণমূল সাধারণ সম্পাদক বুলবুল খান বলেন, "অভিযোগ জানতে পেরেছি। আগামীকাল এলাকায় যাব। সব বিষয়টা খতিয়ে দেখব। দল এসব বরদাস্ত করে না। যারা জড়িত আছে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।" তবে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা সোনু ভাস্কর বলেন, "সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন। ওই বুথ বিজেপির। সব চক্রান্ত করা হয়েছে।"
আরও পড়ুন- যুবনেতৃত্বে জোর, তৃণমূলের জেলা সংগঠনে বড়সড় রদবদল
এদিকে বিজেপি জেলা সম্পাদক কিষাণ কেডিয়া বলেন, "একজন বৃদ্ধ মহিলাকেও ছাড়ছে না এরা। এই ঘটনা প্রমাণ করে দেয় তৃণমূল কাটমানির দল। সারা হরিশ্চন্দ্রপুরে এইসব কাটমানির খেলা হচ্ছে। তৃণমূল প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি, এইভাবে সরকার চলতে পারে না। মানুষ সব দেখছে। একটা চরম অরাজকতা হচ্ছে।" এ প্রসঙ্গে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার আইসি সঞ্জয় কুমার দাস বলেন, "আমরা অভিযোগ পেয়েছি, পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।"