সংক্ষিপ্ত
ঘোষণা মতই ক্যাম্পাস খুলতেই পথে নামেন পড়ুয়ারা। শ’য়ে শ’য়ে পড়ুয়া ঘেরাও করেন জনসংযোগ আধিকারিককে। কবে হস্টেল খোলা হবে, স্পষ্ট উত্তর জানতে চান ক্ষুব্ধ পড়ুয়ারা।
বিশ্বভারতীতে ( Visva Bharati ) ঘোষণা মতই ক্যাম্পাস খুলতেই পথে নামেন পড়ুয়ারা। শ’য়ে শ’য়ে পড়ুয়া তাদের দাবির স্বপক্ষে স্পষ্ট স্লোগান তুলে ছড়িয়ে পড়েন ক্যাম্পাস জুড়ে। পড়ুয়াদের ক্ষোভের আঁচ ছড়িয়ে পড়ে একের পর এক ভবনে, বিভাগে। মেসে থেকে বিশ্বভারতীতে পড়াশুনা করা দ্বিজীতা শিকদার একরাশ ক্ষোভ নিয়ে বলেন, “বাইরে থেকে যারা পড়তে এসেছে তাদের কীভাবে দিন কাটছে খবর রেখেছেন উপাচার্য। ভাড়া পাওয়া বাড়ির সংখ্যা কমছে। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ভাড়া। পড়ুয়াদের মাথায় কাছে পড়াশুনার থেকে ঢের বেশি চাপ পড়েছে ভাড়া গুণতে। কি করে সাধারন বাড়ির ছেলেমেয়েরা পড়াশুনা করবে। পড়ুয়ারা কি বাজারে, স্টেশনে থাকবে। সেই কুড়ি সালের শেষ থেকে শুনছি হস্টেল (Hostel) খুলবে। এখনও তা হল না”। তাই তো হস্টেল খোলার দাবিতে ছাত্র বিক্ষোভ চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে সোমবার।
পাঠভবন থেকে কলাভবন, সঙ্গীত ভবন থেকে শিক্ষাভবন, একের পর এক বিভাগে এদিন পৌছে যান বিক্ষোভরত পড়ুয়ারা। বন্ধ করে দেন স্বাভাবিক কাজকর্ম। ক্লাস শামিল হওয়া পড়ুয়াদের ক্লাস বয়কটের ডাক দিলে তারাও স্বতস্ফূর্তভাবে বয়কট করেন ক্লাস। তালা মেরে দেওয়া হয় বিভাগে বিভাগে। এরপরই ক্ষোভে আঁচে জমাট বাঁধা ছাত্রদের ভীড় চলে আসে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের উদ্দেশ্যে। স্বাভাবিকভাবেই বাধা আসে। নিরাপত্তারক্ষীদের সাথে হয় বচসা, ধ্বস্তাধ্বস্তি। অনেক পড়ুয়ার সেই ধ্বস্তধস্তিতে চোট লাগে, জামা ছিঁড়ে যায় বলে অভিযোগ।
সমস্ত বাধা অতিক্রম করে ছাত্রছাত্রীরা শুরু করেন গেট টপকানো। গেট টপকে নিরাপত্তারক্ষীদের ব্যারিকেড উড়িয়ে সোজা বিক্ষোভের ঠিকানা হয় খোদ কর্মসচিবের দপ্তর। ঘেরাও করেন কর্মসচিবকে। ঘেরাও করেন জনসংযোগ আধিকারিককে। কবে হস্টেল খোলা হবে, স্পষ্ট উত্তর জানতে চান ক্ষুব্ধ পড়ুয়ারা। সেই সাথে আওয়াজ ওঠে, ‘ভিসি গো ব্যাক’, ‘ভিসির দালালরা গো ব্যাক’। প্রায় দুপুর বারোটা থেকে কর্মসচিবের অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ শুরু করেন। বিক্ষোভে শামিল দেবনিতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মেস মিলছে না। মিললেও অধিকাংশ তার ভাড়া গুনতে পারছে না। হস্টেলের সাথে ক্যান্টিনও বন্ধ থাকায় খাওয়া খরচও বেড়ে গেছে কয়েকগুন। তাই কবে হস্টেল, ক্যান্টিন খুলবে তার উত্তর না নিয়ে ফিরব না।“
ক্ষোভ একদিনে হয়নি। বহদিন থেকেই পড়ুয়ারা হস্টেল খোলার দাবি করে আসছে। প্রথমে শান্তিপূর্ন ভাবে স্মারকলিপি দিয়েছেন। সাড়া মেলেনি। অবস্থান করেছেন। কানে যায়নি কর্তৃপক্ষের। তারপর বারংবার বিক্ষোভ করেছেন, কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জোর ঢুকেছেন দাবি জানাতে। তাও কোনও সদুত্তর মেলেনি। বরং জুটেছে হেনস্থা, দুষ্কৃতী তকমা, থানায় অভিযোগ। তাই শেষমেশ দাবি আদায়ে তারা ক্যাম্পাস বন্ধের ডাক দিতে বাধ্য হন। আর সেই ডাকে হওয়া উত্তাল ছাত্র আন্দোলনের নমুনা ফের একবার দেখেছে শান্তিনিকেতন ক্যাম্পাস। ধর্মঘটের রূপ নিয়েছে। স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে ক্যাম্পাস।
বিশ্বভারতীর ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা সোমনাথ সৌ, সাগ্নিক লাহা বলেন, “প্রথম বর্ষের ছেলেমেয়েরা বাইরে থেকে এসে ঘর পাচ্ছে না। এক দূ্র্বিসহ অবস্থা তাদের। আবার মঙ্গলবার থেকে চালু হচ্ছে দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের অফলাইন পঠনপাঠান। আরও পাঁচ-ছ হাজার ছেলেমেয়ে আসবে ক্যাম্পাসে। কোথায় থাকবে তারা। তাই আমরা দীর্ঘদিন থেকে দাবি করে আসছি হস্টেল খোলার। কিন্তু তাতে কর্ণপাত করেনি কর্তৃপক্ষ। তাই বাধ্য হয়ে আমাদের ক্যাম্পাস বন্ধ করতে হয়েছে।“ হস্টেল খোলা ছাড়াও এই সেমিস্টারের পরীক্ষা অনলাইনে নেওয়া এবং মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিকক পরীক্ষার দিন পেছনোর দাবিও সমান ভাবে তুলেছেন পড়ুয়ারা। কারন এই সেমিস্টারের সিলেবাসের অধিকাংশইটাই পড়ানো হয়েছে অনলাইনে এবং মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিকের সিলেবাস বাড়ানো হয়েছে প্রায় শেষবেলায়। এনিয়ে বিশ্বভারতীর কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।