সংক্ষিপ্ত
- স্বাস্থ্য সাথী কার্ড থাকা সত্ত্বেও মিলল না পরিষেবা
- অপারেশন টেবিলেই মৃত্যু তরতাজা যুবকের
- বহরমপুরের বেসরকারি হাসপাতালের ঘটনা
- চিকিৎসকের গাফিলতিতে মৃত্যু বলে অভিযোগ
চরম অমানবিক! সরকারি 'স্বাস্থ্য সাথী কার্ড' ফেরালো চিকিৎসক থেকে শুরু করে বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, অপারেশন টেবিলেই যুবকের মর্মান্তিক মৃত্যুর সাক্ষী রইল পরিবার। এমনই ঘটনা ঘটল মুর্শিদাবাদে। সরকার অনুমোদিত স্বাস্থ্য সাথী কার্ড থাকার পরেও অসহায় বাবাকে ছেলের অপারেশনের জন্য ফেরত পাঠালো চিকিৎসক ও বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ফলে চিকিৎসক গোলাম সারোয়ার ও বহরমপুরে অবস্থিত রবীন্দ্রনাথ টেগোর ডায়াগনস্টিক এন্ড মেডিকেল কেয়ার সেন্টারের চরম অবহেলায় মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটলো বছর কুড়ির এক তরতাজা যুবকের।
জানা গিয়েছে মৃত ওই যুবকের নাম মোশারফ সেখ। এই ঘটনায় মঙ্গলবার ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ালো বহরমপুর বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন বেসরকারী হাসপাতাল চত্বরে। পেশায় দিনমজুর বাবা আবেদ আলী শেখ ওই বেসরকারি নার্সিং হোমের বাইরে বসে ছেলের মর্মান্তিক মৃত্যুতে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কান্দি মহকুমার অন্তর্গত বদুয়া এলাকার বাসিন্দা আবেদ আলী তার অসুস্থ ছেলে মোশারফকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক গোলাম সারওয়ারের শরণাপন্ন হন।
মোশারফের শারীরিক অবস্থা সঙ্গীন দেখে চিকিৎসক দ্রুত তাকে ওই বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি হয়ে অপারেশনের পরামর্শ দেন। এই সময় ওই অসহায় বাবা আবেদালি ছেলের চিকিৎসার জন্য বিপুল পরিমাণ টাকা খরচের কথা ভেবে সরকার প্রদত্ত স্বাস্থ্য সাথীর কার্ড চিকিৎসক ও বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দেখায়। অভিযোগ, চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সরকারি স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের বিনিময়ে মোশারফের অপারেশন করতে অস্বীকার করে।
কার্যত চিকিৎসক জানিয়ে দেয় এই কার্ডের বিনিময় কোনমতেই আবেদের ছেলের চিকিৎসা করা বিনামূল্যে সম্ভব নয়। উল্টে ওই চিকিৎসক আবেদ সাহেবকে পরামর্শ দেন তিনি দ্রুত ছেলের চিকিৎসার জন্য নগদ ৭০ হাজার টাকা ব্যবস্থা করে বেসরকারি নার্সিংহোমে জমা দিন। সরকারি স্বাস্থ্য সাথীর কার্ড থাকার পরেও কেন সেই কার্ডের সুবিধা মিলবে না এই বিষয়ে চিকিৎসককে আবেদালি বারংবার জিজ্ঞেস করলে তাকে চিকিৎসকের ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয়।
বাধ্য হয়ে ছেলের চিকিৎসার কথা ভেবে আবেদালি গয়না, টোটো বিক্রি করে দেন ওই টাকা জোগাড় করার জন্য। এখানেই শেষ নয়, মোশারফের অপারেশন চলাকালীন তার জন্য দ্রুত রক্ত ব্যবস্থা করতে বলা হয় আবেদ আলীকে। আবেদালি সেই মতো তার ছেলের বন্ধু বান্ধবের মাধ্যমে রক্তদাতা খুঁজে নিয়ে আসেন।
চাঞ্চল্যকর অভিযোগ, ওই চিকিৎসক গোলাম সানোয়ার আবেদালিকে নতুন করে পরামর্শ দিয়ে বলেন, বাইরে থেকে কোন রক্ত দাতার মাধ্যমে রক্ত নেওয়া যাবে না, ৫০০০ হাজার টাকার বিনিময়ে নার্সিংহোমের কাছ থেকে রক্ত কিনতে হবে। ছেলের প্রাণের বিনিময়ে অসহায় বাবা সেই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়। এত কিছুর পরেও শেষ পর্যন্ত চিকিৎসার চরম গাফিলতির মধ্যে দিয়ে মোশারফের মৃত্যু হয়। চিকিৎসক ও বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে সুবিচার পাওয়ার দাবিতে সরব হয়েছেন হতভাগ্য আবেদ আলী ও তার স্ত্রী।
এখন দেখার সরকারি স্বাস্থ্য সাথী কার্ড অমান্য ও অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে রক্ত কেনা সহ যাবতীয় অভিযোগের সুবিচার পায় কিনা মৃত মোশারফের পরিবার।