সংক্ষিপ্ত

 ছাত্ররা অনেকেই পড়াশোনা ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছেন কাজের সন্ধানে। তার জেরেই স্কুলে পড়ুয়াদের সংখ্যা অনেকটাই কমে গিয়েছে। আর এখন এই ছবি ধরা পড়েছে রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলেই।   

লজ্জায় মাথা নত করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে (Teacher) দ্বাদশ শ্রেণির (Class 12 Student) ছাত্রী সবনম খাতুন , নবম শ্রেণির (Class 9 Student) সাবিনা ইয়াসমিনরা জানিয়ে দিচ্ছে যে, 'স্কুল (School) আর যাওয়া হবে না স্যার'। এখন আমাদের শ্বশুরবাড়ি (In-Law's house) যেতে হবে। এই গল্প অবশ্য নতুন নয়। কারণ করোনা পরিস্থিতির (Corona Situation) মধ্যে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল স্কুল। আর সেই সময়ই পড়াশোনা ছেড়ে অন্য জীবন বেছে নিয়েছে একাধিক পড়ুয়া। বেশিরভাগ ছাত্রীর বিয়ে হয়ে গিয়েছে। আর ছাত্ররা অনেকেই পড়াশোনা (Education) ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছেন কাজের সন্ধানে। তার জেরেই স্কুলে পড়ুয়াদের সংখ্যা অনেকটাই কমে গিয়েছে। আর এখন এই ছবি ধরা পড়েছে রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলেই।   

এই ব্যাপারে জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক অমর কুমার শীল বলেন, “আমরা ওই রকম কোনও পরিসংখ্যান সংগ্রহ করিনি। তবে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফে বলা হয়েছে বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার বাড়াতে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।" করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যালয় খোলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে রাজ্য সরকার। কিন্তু, বিদ্যালয় খোলা হলেও মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকায় পড়ুয়াদের উপস্থিতির  হার দেখে প্রশাসনিক মহলে তো বটেই বিদ্যালয়য়ের শিক্ষকদের কপালেও চিন্তার ভাঁজ পড়তে শুরু করেছে। স্বাভাবিকভাবে শিক্ষা দফতরের নির্দেশের অপেক্ষা না করে সোমবার থেকে 'মুর্শিদাবাদ জেলার টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন'-এর তরফে স্কুল কর্তৃপক্ষ পড়ুয়াদের বিদ্যালয় মুখী করে তুলতে 'স্টুডেন্ট টিচার ইনটেনসিভ অ্যাক্টিভিটি' নামক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

কেউ এলাকায় মাইকিং করে তো কেউ সচেতন অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়ে পড়ুয়াদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের ছেলে মেয়েদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে অনুরোধ করেন। এদিন এই প্রচার অভিযান চালাতে গিয়ে লালগোলা থানার বিরামপুর অভয়া সুন্দরী বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক শৈবাল সাহার চোখ কপালে ওঠে। ওই দিন তিনি শুধুমাত্র বিরামপুর এলাকার ৬০ টি পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। আর সেখানেই দেখতে পান যে এলাকার তিন ছাত্রীর বিয়ে হয়ে গিয়েছে করোনাকালে। আর তারা জানিয়ে দেয় যে তাদের পক্ষে আর স্কুলে যাওয়া সম্ভব নয়। এছাড়াও ওই ৬০ টি পরিবারের মধ্যে বেশ কিছু ছেলে আবার পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ নিয়ে ভিন রাজ্য পাড়ি দিয়েছে। 

এই ব্যাপারে শৈবালবাবুর বক্তব্য, “একটা সংখ্যক পড়ুয়া মোবাইলে বুঁদ হয়ে আর বিদ্যালয় মুখী হতে চাইছে না। তবে এলাকার বেশিরভাগ পড়ুয়া পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ নিয়েছে। সেই সঙ্গে কিছু মেয়ের বিয়ে হয়ে যাওয়ার কারণেই স্কুলে উপস্থিতির হার তলানিতে ঠেকেছে।” তবে পরিযায়ীদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন অভয়া সুন্দরী বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক। একই রকম অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন লস্কুরপুর হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম। তবে আমন ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত থাকার কারণে বেশির ভাগ ছাত্র স্কুলে আসতে পারছে না বলে মন্তব্য করেছেন নবগ্রাম সিঙ্গার হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় মণ্ডল। তাঁর দাবি,  "বিদ্যালয়ে পঠন পাঠনের সঙ্গে শিক্ষকদের রুটিন করে দেওয়া হয়েছে পর্যায় ক্রমে গ্রামে গ্রামে গিয়ে পড়ুয়াদের স্কুলে ধরে আনতে হবে।”