সংক্ষিপ্ত
- 'শুঁটিয়ে লাল করে দেব, চড়াম-চড়াম, নকুল দানা'
- অনুব্রতের এই মন্তব্যগুলি শোরগোল ফেলেছে রাজ্য
- এখন কোথায় আছেন বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি
- বুথ সভাপতিকে ধমক দিয়ে নিজেই বিপাকে
আশিস মণ্ডল, বীরভূম-তাঁর নাম শুনলেই সবাই থরথরি কম্প। তৃণমূলের বিভিন্ন রাজনৈতিক মিটিংয়ে নিজস্ব ভঙ্গিমায় মাইক্রোফোন ধরে দলীয় নেতাদের থেকে কৈফিয়ত চাইতেন। শুধু ঘাড় নেড়ে তাঁর প্রশ্নের উত্তর দিতেন বীরভূমের দলীয় নেতাকর্মীরা। কিন্তু, লোকসভা ভোটের পর কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে বীরভূমের রাজনৈতিক মানচিত্রে। সম্প্রতি দলীয় সভায় এক বুথ সভাপতিকে তৃণমূলের ভোট কমে যাওয়ার কারন জানতে চেয়ে বিড়ম্বনায় পড়লেন অনুব্রত। চুপ করে সব প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে অনুব্রতর চোখে চোখ রেখে কড়া উত্তর দিলেন ওই বুথ সভাপতি।
এই উলটপুরান ঘটেছে গত ২ সেপ্টেম্বর। দলীয় নেতা কর্মীদের নিয়ে একটি বৈঠকে নিজস্ব ভঙ্গিমায় বুথে বুথে তৃণমূলের ভোট কমে যাওয়ার কারণ নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছিলেন অনুব্রত। বুথ ধরে ধরে এলাকার উন্নয়ন ও অনুন্নয়নের ফিরিস্তি নিচ্ছিলেন। যেসব বুথে তৃণমূলের বুথ কমেছে সেখানকার বুথ সভাপতিকে তিরস্কার করছিলেন অনুব্রত। কিন্তু হঠাৎ তাল কাটল সিউড়ি ২ নম্বর ব্লকের দমদমা অঞ্চলের মাঝিগ্রামের বুথ সভাপতি গণেশ রায়কে প্রশ্ন করে। গণেশবাবু অনুব্রতর প্রশ্নের উত্তর দৃঢ়কণ্ঠে উত্তর দিলেন। তাঁর বুথে ভোট কমল কেন? প্রশ্নের উত্তরে গণেশ রায় বলেন, '' বাম আমলে ওই এলাকার রাস্তায় সাইকেল নিয়ে যাতায়াত করা যেত, কিন্তু এখন ওই রাস্তায় হাঁটা যায় না। গ্রামের মানুষ রসিকতা করে বলছেন রাস্তায় মাছ চাষ করবেন নাকি।'' এই উত্তর শুনে অসন্তুষ্ট হয়ে অনুব্রত বলেন '' যতই দিই আপনাদের পেট ভরবে না''। গণেশ রায়ের পালটা উত্তর, ''এমন কি দিলেন, যে পেট ভরবে না''।
গণেশ রায়ের সঙ্গে অনুব্রত মণ্ডলের বাগবিতণ্ডা দেখে দলীয় সভায় সবাই অবাক হয়ে যান। তীব্র অস্বস্তিতে পড়েন অনুব্ত মণ্ডল নিজেও। ক্ষুব্ধ হয়ে গণেশ রায়কে বুথ সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন অনুব্রত মণ্ডল। সভা ছেড়ে বেরিয়ে যান গণেশ রায় ও তাঁর অনুগামীরা। পরে অবশ্য গণেশবাবুকে বুথ সভাপতির পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়নি। ঢোক গিলতে হয়েছিল অনুব্রত মণ্ডলকে।
এরপর, জেলা তৃণমূলে গুঞ্জন শুরু হয় অনুব্রতর দাপটি কী জেলা তৃণমূলে কমতে শুরু করেছে। কেননা, প্রধান বিরোধী দল বিজেপি অনুব্রত সব ভয়কে উপেক্ষা করে জেলার বিভিন্ন জায়গায় মিটিং মিছিল করছেন। প্রকাশ্য সভায় অনুব্রতকে কড়া সুরে হুমকি দিচ্ছেন বিজেপি নেতারাও। এমনকি, নিজের গড় বোলপুরেও তাঁর শক্তি কমতে শুরু করেছে। আগের তুলনায় অনেকটাই ভোট কমেছে তৃণমূলের। এছাড়াও, ময়ূরেশ্বর, রামপুর, সিউড়ি, রামপুরহাট,সাঁইথিয়া এলাকায় বিজেপির শক্তি বৃদ্ধি করছে। লালমাটিতে শিকড় শক্ত করছে গেরুয়া শিবির।
অন্যদিকে, বর্ধমানে তিনটি বিধানসভার দায়িত্ব থেকে অনুব্রত মণ্ডলকে অব্যাহতি দিয়েছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। একদিকে দলীয় কর্মীদের থেকে বিড়ম্বনার উত্তর শুন নিজেই বিভ্রান্ত অনুব্রত। তাছাড়া, এখন তাঁকে বিস্ফোরক মন্তব্য করতে সেভাবে শোনা যায় না। তাহলে ডানা ছাঁটা হচ্ছে অনুব্রত মণ্ডলের? প্রশ্ন তুলছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।