সংক্ষিপ্ত
বিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের ফিরিয়ে আনতে অযোধ্যা কালীদাসি বিদ্যানিকেতনের শিক্ষক শিক্ষিকারা গত ৩ ডিসেম্বর পথ নাটক 'ফিরে চলো তোমার স্কুলে' শালগ্রাম মোড়ে করেছিল। শিক্ষকরা সবাই মিলে গ্রামে গ্রামে পথ নাটক করছেন। যার নাম 'ফিরে চলো তোমার স্কুলে'।
থিয়েটারের (Theatre) হাত ধরে ২০০৬ সাল থেকে পথ চলা শুরু করেছিল বালুরঘাট (Balurghat) শহরের কাছে অবস্থিত অযোধ্যা কালীদাসী বিদ্যানিকেতন। নাটক (Play) নিয়ে এর আগেও পড়ুয়াদের (Student) মধ্যে তারা আগ্রহ তৈরি করেছে। এমনকী, শিলিগুড়ি (Siliguri) ও কলকাতায় (Kolkata) নাটক করে এসেছে বিদ্যালয়ের একাধিক ছাত্র-ছাত্রী। এখনও পর্যন্ত জেলায় অযোধ্যা কালীদাসি বিদ্যানিকেতন একটি বিদ্যানিকেতন যেখানে রাজ্য শিশু কিশোর অ্যাকাডেমির নাট্য কর্মশালা হয়েছিল ২০০৮ সালে। পরিবেশের উপর নাটক (Play on Environment), কুসংস্কার বিরোধী পথ নাটক যেমন, 'গাছই জীবন', 'আত্রেয়ীর উপাখ্যান', 'বাঁচো এবং বাঁচতে দাও', 'সাধু সাবধান' ইত্যাদি বহু নাটক তারা মঞ্চস্থ করেছে। আবার কিছু পথনাটিকা (Street Play) করেছে তারা। বর্তমানে ছাত্র-ছাত্রীদের বিদ্যালয়ে টেনে আনতেই 'ফিরে চলো তোমার স্কুলে' পথনাটিকা করছে তারা। আর সেই নাটকের কথা শুনে ফিরে এসেছে দশম শ্রেণির (Class 10) ইমন লোহার।
এখন বিদ্যালয়ে (School) একদিন অন্তর নবম ও দশম শ্রেণির ক্লাস হয়। দিল্লি থেকে ফেরার পরই স্কুলের পোশাক (School Dress) পরে স্কুলে যায় ইমন। কিন্তু, সেদিন নবম শ্রেণির ক্লাস ছিল। তাই তাকে দশম শ্রেণির জন্য নির্ধারিত অ্যাক্টিভিটি টাস্ক দেওয়া হয়। বুধবার থেকে দশম শ্রেণির ক্লাস শুরু করেছে ইমন। সেই উপলক্ষ্যে শিক্ষকরা বিশেষভাবে দিনটি পালন করেন।
আরও পড়ুন- বিয়েবাড়ির বেঁচে যাওয়া খাবার হাতে রানাঘাট স্টেশনে, অভুক্তদের মুখে হাসি ফোটালেন পাপিয়া
উল্লেখ্য, বিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের (School Dropout Student) ফিরিয়ে আনতে অযোধ্যা কালীদাসি বিদ্যানিকেতনের শিক্ষক শিক্ষিকারা (Teacher) গত ৩ ডিসেম্বর পথ নাটক 'ফিরে চলো তোমার স্কুলে' শালগ্রাম মোড়ে করেছিল। শিক্ষকরা সবাই মিলে গ্রামে গ্রামে পথ নাটক করছেন। যার নাম 'ফিরে চলো তোমার স্কুলে'। নাটকটির রচনাকার ও নির্দেশক সেই বিদ্যালয়েরই শিক্ষক ও নাট্য কর্মী তুহিন শুভ্র মণ্ডল। দ্বিতীয়দিন পথ নাটক হয়েছিল লোহার পাড়ায়। সেই পাড়াতেই বাড়ি ইমনের। ইমন লোহার অযোধ্যা কালীদাসি বিদ্যানিকেতনের দশম শ্রেণির ছাত্র। দিল্লিতে কাজের জন্য চলে গিয়েছিল ইমন। পাড়ারই বন্ধু সুদেবের কাছে নাটকটির কথা ইমন জেনেছে। সেখানে বলা আছে স্কুলে ফিরে আসার কথা। এমনকী একটা ডায়লগ আছে 'আপনার কোনও সন্তান ভিন রাজ্যে কাজের খোঁজে গিয়েছে তাদের ফোন করে ডেকে আনুন। কারণ ওদের অন্য ভবিষ্যৎ আছে।'
বন্ধুর কাছ থেকে এই নাটকের কথা শুনেছিল ইমন। আর নাটকের কথাগুলি তার মন ছুঁয়ে গিয়েছিল। তাদের স্কুলে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য শিক্ষকরা যে এই ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে তাতে বেজায় খুশি সে। তার জেরেই তার ফের পড়াশোনা করতে ইচ্ছে করে। মনে পড়ে যায় স্কুলের দিনগুলির কথা। এক শিক্ষক বলেন, 'নাটকের কথাগুলো এভাবে সত্যি হয়েছে জেনে খুব ভালো লাগছে।' আর ইমন বলে, 'নাটকের কথা জেনে আর স্কুলে ফিরে চলার ডাকে আমার পড়ার ইচ্ছে আবার জেগে উঠেছে।' তাই কাজ ছেড়ে দিল্লি থেকে ফিরে আবার স্কুলে পৌঁছে গিয়েছে সে। স্কুলের তরফে ইমনের সঙ্গে কথা বলতে তার বাড়িতে যান শিক্ষক তুহিন শুভ্র মণ্ডল, পলাশ মণ্ডল, অরূপ দেবনাথ, গৌড় চন্দ্র বর্মন। ইমনের মামা রাজীব লোহারের সঙ্গেও কথা বলেন তাঁরা। আর ওই নাটকে অভিনয় করেছেন অর্পিতা হালদার, পিউলি মণ্ডল, মিঠু রায় দত্ত, কল্পনা সরকার, পপি মণ্ডল, গার্গী দাস, উজ্জ্বল পাল, অনিমেষ মালাকার।
২০০৬ সাল থেকে অযোধ্যা গ্রামে অবস্থিত স্কুল অযোধ্যা কালীদাসি বিদ্যানিকেতনে যোগ দেন তুহিন শুভ্র মণ্ডল। বিদ্যালয়ে যোগ দিয়েই তিনি পড়ুয়াদের নিয়ে নাট্য নির্মাণে মন দেন। এর আগে ছিলেন আলিপুরদুয়ার জেলার পূর্ব মাদারীহাটের বিবেকানন্দ বিদ্যাভবনে। সেখানেই প্রথম পড়ুয়াদের নিয়ে এই ধরনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ভারতের অন্যতম গ্রীন এডুকেটর পুরস্কারে সম্মানিত শিক্ষক, পরিবেশ চিন্তক ও নাট্যকর্মী তুহিন বলেন, "আমি মনে করি থিয়েটারের শক্তি অনেক। বিদ্যালয়ে নাট্য শিক্ষার প্রয়োগ অবশ্যই করা উচিত। নাটকের মাধ্যমে এর আগেও পড়ুয়াদের মধ্যে পড়াশোনার আগ্রহ বৃদ্ধিতে কাজ করেছি। তাতে ফলও পেয়েছি। এবারও আমাদের দশম শ্রেণির ছাত্র ইমন লোহার নাটকের মাধ্যমে স্কুলে ফিরেছে। ওর পড়ার ইচ্ছা আবার জেগে উঠেছে। থিয়েটারকে আরও ব্যাপকভাবে শিক্ষায় প্রয়োগ করতে চাই।"