রবি ও সোমবারে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে উত্তপ্ত হয়েছিল ভাঙরতার পরদিন একই দৃশ্য দেখা গেল মুর্শিদাবাদেএবার বিধায়ক গোষ্ঠী বনাম অঞ্চল সভাপতির অনুগামীরাতীব্র সংঘর্ষে জখম অন্তত ১৪ জন 

দুই পক্ষই তৃণমূল। একদল স্থানীয় বিধায়ক আখরু জামান-এর অনুগামী। আরেক দল নেতা মানেন অঞ্চল সভাপতি বাপি ঘোষ-কে। আর এই দুই দলের মধ্যেই দিনভর তীব্র সংঘর্ষে, মঙ্গলবার রণক্ষেত্রের চেহারা নিল মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জ এলাকার জোতকমল। আহত হলেন দুই পক্ষ মিলিয়ে অন্তত ১৪ জন। সাম্প্রতিককালে জেলায় এই পর্যায়ের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ঘটনা আর ঘটেনি বলেই দাবি রাজনৈতিক মহলের।

মঙ্গলবার সকাল খেকেই জোতকমল এলাকায় জড়ো হয়েছিলেন শ'য়ে শ'য়ে তৃণমূল কর্মী সমর্থক। হঠাতই তাদের মধ্যে হিংসাত্মক সংঘর্ষ বাধে। অনেকটা মুশল পর্বে যেমন কৌরবদের নিজেদের মধ্যেই দ্বন্দ্ব বেধেছিল, সেইভাবেই দুই গোষ্ঠীর তৃণমূল কর্মীরা একে অপরের দিকে মারমুখী হয়ে ওঠেন। লাঠি, বাঁশ, লোহার পাইপ, প্লাস্টিকের চেয়ার - হাতের কাছে যা পাওয়া গিয়েছে তাই একে অপরের দিকে ছুড়ে মেরেছেন। নির্বিচারে ভাঙা হয়েছে মোটরবাইক, সাইকেল। মারের চোটে মাথা ফেটেছে একাধিক কর্মী-সমর্থকের। গুরুতর আঘাত নিয়ে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বেশ কয়েকজন। এই ঘটনার জেরে সাধারণ এলাকাবাসী রীতিমতো সন্ত্রাস্ত।

Scroll to load tweet…

কিন্তু, কী নিয়ে এই সংঘর্ষ? জানা গিয়েছে, এর সলতে পাকানোর কাজ চলছিল অনেকদিন ধরেই। কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে য়োগ দিয়ে বিধায়ক হয়েছিলেন আখরু জামান। জেলার তৃণমূলে কার দাপট বেশি, এই নিয়ে আখরু জামান ও তাঁর ঘনিষ্ঠ তৃণমূলের ব্লক প্রেসিডেন্ট সমিরুদ্দিন বিশ্বাসের অনুগামীদের সঙ্গে জোতকমল-এর টিএমসি অঞ্চল সভাপতি বাপি ঘোষের সমর্থকদের মধ্যে চাপা উত্তেজনা ছিল। বিধায়ক গোষ্ঠী বাপি ঘোষকে সরিয়ে তার জায়গায় নতুন অঞ্চল সভাপতি নিয়োগের চেষ্টা চালাচ্ছিল বলে অভিযোগ। এই নিয়ে মঙ্গলবার তারা একটি গোপন মিটিং করছিল।

সেই গোপন বৈঠকের খবর জানতে পারে বাপি ঘোষের অনুগামীরা। আর তারপরই চড়াও হয় জোতকমল এলাকার ওই বৈঠকের স্থানে। তাতেই যেন আগুন লাগে সলতে তে। কথা কাটাকাটি দিয়ে শুরু হয়ে মুহুর্তের মধ্যে রণক্ষেত্র চেহারা নেয় এলাকা। ঘটনার ভিডিও ক্লিপে দেখা গিয়েছে প্রাণভয়ে দুই পক্ষেরই মহিলা-পুরুষ তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা পালাচ্ছেন।

Scroll to load tweet…

এদিনের গোষ্ঠী সংঘর্ষের কথা অঞ্চল সভাপতি বাপি ঘোষ এবং বিধায়ক আখরুজ্জামান দুজনেই মেনে নিয়েছেন। বাপি ঘোষের অভিযোগ আখরুজ্জামান কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে যোগ দিলেও, এখনও গোপনে গোপনে তিনি পুরোনো দলের হয়েই কাজ করছেন। পাশাপাশি তিনি নানান দুর্নীতির সঙ্গেও যুক্ত। এদিনের ঘটনা তাঁর উপর মানুষের ক্ষোভের ফল।

এই অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন বিধায়ক। তাঁর পাল্টা দাবি, বাপি ঘোষ ও তাঁর দলবল তৃণমূলের পতাকা ধরে এলাকায় বিজেপি-র হয়ে কাজ করছে। তারা নানাভাবে এলাকায় দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছে। তাই তাঁকে অঞ্চল সভাপতি দায়িত্ব থেকে সরাতেই হবে।

এদিকে এই দুই গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়ে অসহায় বোধ করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাদের অভিযোগ শাসক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বলে এই বিষয়ে একেবারে নীরব দর্শকের ভূমিকা নিয়েছে পুলিশ। ঘটনার খবর পাওয়ার পরও তাঁরা কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। বিনা বাধায় প্রকাশ্য রাস্তায় ধুন্ধুমার চালিয়েছে টিএমসি-র দুই গোষ্ঠী। অনেক পরে ঝামেলা থিতিয়ে যাওয়ার পর পুলিশ বাহিনী আসে ঘটনাস্থলে।

প্রসঙ্গত গত রবি ও সোমবার একই ভাবে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে উত্তপ্ত হয়েছিল উত্তর চব্বিশ পরগনার ভাঙর এলাকা। কাইজার গোষ্ঠীর সঙ্গে বিরোধ বাধে শওকত মোল্লা গোষ্ঠীর। তারপরদিন একই ঘটনা ঘটল মুর্শিদাবাদে।