সংক্ষিপ্ত
- বিজেপিকে ভোট দেওয়ার শাস্তি
- কাজ বন্ধ করে রেখেছে তৃণমূল
- বিস্ফোরক দাবি এলাকাবাসীর
- জলবন্দী শতাধিক পরিবার
বিজেপিকে ভোট দেওয়ার শাস্তি। জলের মধ্যেই তিন দিন ধরে দিন কাটাচ্ছে শতাধিক পরিবার। টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন গোটা এলাকা। এমনকি ঘরে ঘরে জল ঢুকে পড়েছে, সঙ্গে পোকা-মাকড় সাপের আতঙ্ক, ঘরের বাইরে বুক পর্যন্ত, আবার কোথাও হাঁটুপর্যন্ত জল জমে রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা রীতিমত আতঙ্কে কারণ বাড়িতে শিশুরা রয়েছে। সেই জলে যাতে তাদের কোনও বিপদ না হয় সেদিকে নজর রাখতে হচ্ছে সবাইকে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ জল নিকাশের ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। এলাকার মানুষরা বিজেপির সমর্থক বলে, ওই এলাকায় কাজ করতে চাইছে না শাসক দল তৃণণূল কংগ্রেস। এমনটাই অভিযোগ করেছেন মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর গোলাবাগান,পুরাতন শিব মন্দির পাড়া এলাকার বাসিন্দারা। বৃহস্পতিবার পোস্টার প্ল্যাকার্ড হাতে হরিশ্চন্দ্রপুর-১ নম্বর ব্লক অফিসের সামনে বিক্ষোভে নামেন তাঁরা। ভোটের ঠিক আগেই এলাকার জল নিকাশের জন্যে একটি বড় ড্রেন করা হচ্ছিল। যেহেতু এই এলাকায় জল নিকাশি ব্যবস্থা ভালো নেই তাই ভোটের ঠিক আগে এটাকে নির্বাচনে ইস্যুও করে তৃণমূল। স্থানীয় বাসিন্দাদের দীর্ঘ-দিনের দাবিও ছিল জল নিকাশি ব্যবস্থার। স্বাভাবিক ভাবেই ভোটের ঠিক আগে বড় ড্রেন তৈরির প্রাথমিক কাজ শুরু হয়। কিন্তু ভোটের পরেই শুরু হয় অন্য গল্প।
হরিশ্চন্দ্রপুর ৪৬ বিধানসভায় তৃণমূল জিতলেও দেখা যায় এই এলাকায় অধিকাংশ ভোট বিজেপি পেয়েছে। তাছাড়া গত পঞ্চায়েত নির্বাচনেও এই এলাকায় বিজেপি জেতে। আর এতেই ক্ষুব্ধ শাসক দল। যে ড্রেনের ব্যবস্থার কাজ চলছিল, বরাদ্দ করা হয়েছিল ৩৬ লক্ষ ৩৯ হাজার। তা মাঝপথে বন্ধ করে দেওয়া হয়। যার ফলে বৃষ্টির জল তো জমছেই, উলটে ড্রেনের জল উল্টো পথে এলাকায় ঢুকে পড়ছে। জল বেরোনোর পথ নেই। বার বার বলা সত্বেও কোনও ফল হয় নি। বরং বিজেপিকে ভোট দেওয়ার শাস্তি পাওয়ার কথা শুনতে হয়েছে স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের কাছ থেকে।
তাই বাধ্য হয়ে বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ শুরু করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। যদিও এলাকাবাসীদের অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল। আদুরী দাস নামের ওই এলাকার এক বাসিন্দা বলেন," আমাদের এলাকায় ড্রেন নেই। ড্রেনের কাজ শুরু হলেও সেই কাজ আটকে রয়েছে। বৃষ্টির ফলে জল জমে গেছে পুরো এলাকায়। ফলে প্রচন্ড অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। আমরা বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলাম। বিজেপির পঞ্চায়েত সদস্যও এলাকায় আসেন না। আমাদেরকে মনে হয় বিজেপিকে ভোট দেওয়ার শাস্তি পেতে হচ্ছে। আমরা চাই অতি দ্রুত এই ড্রেনের কাজ শেষ হোক।"
আরেক স্থানীয় বাসিন্দা মর্তুজা বলেন,"আমরা ৫-৭ বছর ধরে এই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। কিছুদিন আগে ড্রেনের কাজ শুরু হলেও সেই কাজ বন্ধ রয়েছে।এদিকে বৃষ্টিতে জলমগ্ন পুরো এলাকা। মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে সকলের।পঞ্চায়েত- প্রধানকে বারবার অভিযোগ জানিয়েও কোনো সুরাহা হয়নি। তাই আমরা আজ ব্লকে এসে বিক্ষোভ দেখাচ্ছি। আমরা জানতে চাই কেন আমাদের এই কাজ আটকে আছে।"
হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নং ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি মানিক দাস বলেন," ওই এলাকাগুলিতে নিকাশি ব্যবস্থার সমস্যা ছিল। পাড়ায় সমাধান প্রকল্প থেকে ওই এলাকায় ড্রেনের কাজ শুরু হয়। যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। অভিযোগ সত্য নয়। মমতা ব্যানার্জির সরকার সকলের জন্যই কাজ করে। বৃষ্টির জন্য কাজ আটকে রয়েছে। বর্ষা শেষ হলেই কাজ সম্পূর্ণ হবে।"
শুধু হরিশ্চন্দ্রপুর নয় রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় এমন অভিযোগ উঠে আসছে। বিরোধীদল করার জন্য বা বিরোধী দলকে ভোট দেওয়ার জন্য তারা সরকারি সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে না।এই অভিযোগ যদি সত্যি হয় প্রশাসনকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। সরকার এবং জন-প্রতিনিধিদের মাথায় রাখতে হবে যে তাদের সকলের জন্যই কাজ করতে হবে। গণতান্ত্রিক পরিকাঠামো তে এই ধরনের সংস্কৃতি খুব নিন্দনীয়।