সংক্ষিপ্ত
রাজ্যের নয়া শিল্প নীতি। এই রাজ্যে বিনিয়োগ টানতে আর শিল্প সংস্থাকে কোনওরকম ইনসেনটিভ দেবে না নবান্ন (Nabanna)।
Industry Incentive: গত ১৯৯১ সাল থেকে, বিনিয়োগ টানতে দেশের একাধিক রাজ্যে শিল্পক্ষেত্রে ইনসেনটিভ দেওয়া শুরু করেছিল। পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর সময় পশ্চিমবঙ্গে নতুন শিল্পনীতি লাগু হওয়ার পর, ১৯৯৩ সাল থেকে ইনসেনটিভ দেওয়ার প্রক্রিয়ার কাজ শুরু হয়।
তারপর বুদ্ধবাবুর সময়তেও তা বজায় ছিল। বলা ভালো, রাজ্যের শিল্পে জোয়ার তখন। এমনকি, গত ২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পরেও সেই নীতিই অনুসরণ করা হয়। গত ২০২১ সালেও রাজ্য সরকার ফের একবার ইনসেনটিভ স্কিমের পথে হাঁটে।
কিন্তু বিধানসভায় বুধবার, নতুন এক বিল পাশ করে প্রায় সাড়ে তিন দশক ধরে চলে আসা সেই ইনসেনটিভ স্কিম বন্ধ করে দিল রাজ্যের তৃণমূল সরকার।
এই ইনসেনটিভ স্কিম আসলে কী? শিল্পসংস্থাকে রাজ্য সরকার যে কোনও আর্থিক সহায়তা, ভর্তুকি, ঋণের ইন্টারেস্ট ওয়েভার, কর–ছাড়, ডিউটি ওয়েভার, বিদ্যুতের দামে ছাড়, স্পেশাল প্যাকেজ প্রদান ইত্যাদি পদক্ষেপকে ইনসেনটিভ বলা হয়ে থাকে।
গত ১৯৯৩ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত রাজ্য সরকার মোট দশবার ইনসেনটিভ স্কিম ঘোষণা করেছে। এখন তৃণমূল জমানায় ২০১৩, ২০১৫ এবং ২০২১ সালে এই স্কিম দেওয়া হয়েছে। গত ২০০৫ সালে, শুধুমাত্র বিদ্যুৎশিল্পের জন্য বামফ্রন্ট সরকার বিশেষ একটি ইনসেনটিভ ঘোষণা করে। রাজ্যের বণিক সংগঠনগুলির একাধিক কর্তা-ব্যক্তিদের কথায়, হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালের ক্ষেত্রেও বিশেষ প্যাকেজের সঙ্গে ইনসেনটিভ দেওয়া হয়েছিল।
এমনকি, হলদিয়াতে মিৎসুবিশি সংস্থাও ইনসেনটিভ পেয়েছে। পেপসিকো গোষ্ঠী হাওড়াতে তাদের ফ্রি-টোলের কারখানা গড়ে তোলার সময়েও ইনসেনটিভ পেয়েছে। সেইসঙ্গে, সিঙ্গুরে টাটাদের ন্যানো গাড়ির কারখানার জন্য তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার বিভিন্ন ইনসেনটিভ ঘোষণা করেছিল।
আসলে শিল্পে লগ্নি টানতে মূলত চার ধরনের প্রক্রিয়াতে ইনসেনটিভ দেয় রাজ্য। প্রথমত, ক্যাপিটাল ইনভেস্টমেন্ট সাবসিডি। সেখানে মূলধনী লগ্নির উপরে প্রকল্পের উপর ভিত্তি করে ১৫, ২০ ও ২৫ শতাংশ ইনসেনটিভ দেওয়া হয়। কোনও প্রকল্পে উৎপাদন চালু হওয়ার পরেও ইনসেনটিভ হিসেবে ইলেকট্রিসিটি ডিউটির ৩০ শতাংশ পাঁচ বছর ফেরত পায় সংশ্লিষ্ট সংস্থা।
ঠিক একইভাবে সেলস ট্যাক্সের উপর দেওয়া সেসের ৩০ শতাংশ পাঁচ বছর ফেরত দেয় রাজ্য। এছাড়াও রয়েছে এমপ্লয়মেন্ট সাবসিডি। কোনও সংস্থা ১০০ জনের উপরে যত কর্মী নেবে, সেইসব কর্মীর মোট বেতনের ৩০ শতাংশ আবার রাজ্য ইনসেনটিভ হিসেবে ফেরত দেয়।
সূত্র মারফৎ জানা গেছে, একাধিক শিল্পসংস্থার সবমিলিয়ে কয়েক হাজার কোটি টাকা ইনসেনটিভ হিসেবে পাওনা রয়েছে। মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, তেলঙ্গানার মতো শিল্পে অগ্রণী রাজ্যগুলি যেখানে এখনও ইনসেনটিভ দেওয়ার রেওয়াজ চালু রেখেছে, সেখানে পশ্চিমবঙ্গ হটাৎ কেন এই নীতি থেকে সরে এল?
এদিন শশী পাঁজা জানান, “আমরা দেখছি, ইনসেনটিভ পাওয়ার পরে বহু সংস্থা ব্যবসা চালাতে পারেনি। এমনকি, কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক সংস্থা দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে। এখন ইনসেনটিভ ছাড়াই প্রচুর বিনিয়োগ আসছে।”
তাঁর মতে, সার্বিক শিল্পায়নে এর কোনও প্রভাব নেই। নির্দিষ্ট কিছু কর্পোরেট সংস্থা শুধু এর সুবিধা ভোগ করে। আর নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকায় এই ইনসেনটিভ দেওয়া হয়। যার ফলে, শিল্পক্ষেত্রে বৈষম্য তৈরি হয়। আবার ইনসেনটিভ দিতে গিয়ে রাজ্যের কোষাগার থেকে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ বেরিয়ে যায়, সেই টাকা দিয়ে প্রান্তিক মানুষের জন্য বিভিন্ন আর্থসমাজিক প্রকল্পও গ্রহণ করা যায়।
যদিও শিল্প মহলের একাংশের মতে, বাংলা থেকে বেশি ইনসেনটিভ পাওয়ায় রাজ্যের একটি নামী রং প্রস্তুতকারক সংস্থা এবং একটি ব্যাটারি সংস্থা যথাক্রমে আসাম এবং কর্নাটকে নতুন কারখানা গড়ে তুলেছে। রাজ্যের একটি বণিকসভার এক শীর্ষ কর্তা বলছেন, “ইনসেনটিভ তুলেই দিল! এরপরে তাহলে আর বাংলায় কেন আসবে লগ্নি? কেন অন্য রাজ্য থেকে শিল্পসংস্থাগুলি বাংলায় আসার আগ্রহ দেখাবে?”
আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।