সংক্ষিপ্ত

শাসক দলের বিরুদ্ধে বিরোধীদের টক্কর জোরদার হলেও দলের অন্দরের খামতির জন্য পিছিয়ে পড়তে হচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকেই। এই পরিস্থিতিতে স্বয়ং নরেন্দ্র মোদীর মুখে প্রশংসাবাক্য বাড়িয়ে দিতে পারে রাজ্যনেতৃত্বের আত্মবিশ্বাস। 

পশ্চিমবঙ্গে কঠিন লড়াই দিয়েও বিধানসভা নির্বাচনে পরাজিত হয়েছিল বিজেপি। তার পর রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বারবার ‘সন্ত্রাস’-এর অভিযোগ তুলেছে গেরুয়া শিবির। তৃণমূলের এই ‘হিংসা’-র পরেও পশ্চিমবঙ্গের বিজেপির ক্রমাগত লড়াই চালিয়ে যাওয়াকে প্রভূত প্রশংসা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার দিল্লিতে আয়োজিত বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে রাজ্যের সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সংগঠনের কাজ নিয়ে কথা বলা শুরু করলে নরেন্দ্র মোদী তাঁকে থামিয়ে দেন এবং কিছু কথা বলতে চান।

মোদী বলেন, পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন পরবর্তী সন্ত্রাস যে আকার নিয়েছিল, তার পরেও এই রাজ্যের সংগঠন যে লড়াইয়ের ময়দান ছেড়ে বেরিয়ে যায়নি এবং ক্রমাগত তার মোকাবিলা করে করে একেবারে পূর্ববর্তী পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে, সেটার প্রশংসা করতেই হবে। এই বক্তব্যের পরে মোদী সুকান্তকে তাঁর নিজের বক্তব্য শুরু করতে বলেন। তবে, দলনেতা পঞ্চায়েত ভোটের আগে পশ্চিমবঙ্গের পদ্ম শিবিরকে উৎসাহ দেওয়ার চেষ্টা করলেও সংগঠনের জোর যে মজবুত নয়, শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে তা স্বীকার করছেন রাজ্য নেতৃত্বরা। দলের অন্দরের কোন্দল যে চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে এবং তার প্রভাব পড়তে পারে ইভিএমে, এই বিষয়েই আশঙ্কায় রয়েছেন তাঁরা।

২০২৪ সালে ভারতে রয়েছে লোকসভা নির্বাচন। তার আগে বেশ কতগুলি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন আসন্ন। লোকসভার পথ প্রশস্ত করতে প্রত্যেকটি রাজ্যেই জয়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে বিজেপি নেতৃত্ব। জয়ের রণকৌশল ঠিক করতে দিল্লিতে চলছে বিজেপির দু’দিনের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক। বৈঠকে হিমাচল প্রদেশে বিজেপির পরাজয়ের কারণ হিসেবে তুলে ধরা হয় দলীয় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ও বিক্ষুব্ধ নেতাদের ভোটের ময়দানে স্বতন্ত্রভাবে লড়াই করে দলীয় প্রার্থীদের ভোট কেটে দেওয়ার বিষয়গুলি। হিমাচল প্রদেশের হার থেকে শিক্ষা নিয়ে ভোটমুখী রাজ্যগুলিতে বিজেপি নেতাদের প্রস্তুতির উপরে জোর দেন জে পি নাড্ডা। ভোটমুখী রাজ্যগুলিতে অতি দ্রুত গোষ্ঠী কলহের সমাধান করে সর্বসম্মত প্রার্থী দেওয়া লক্ষ্য নির্ধারিত হয়েছে চলতি বৈঠকে।

বিজেপি নেতৃত্বের মতে, গুজরাত বিধানসভা নির্বাচনে দলের সাফল্যের মূল কারণ হল বুথভিত্তিক কমিটি। একেবারে নিম্ন স্তর থেকে সক্রিয় ছিল এই কমিটি, যার ফলে দারুণ জয় এসেছে বলে দাবি করেন নাড্ডা। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনগুলিতে তাই ভোটমুখী রাজ্যের নেতৃত্বকে গুজরাতের মডেল মেনে এগোনোর উপরে নির্দেশ দেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গের জন্যেও একই বার্তা দেওয়া হয় শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে। এ রাজ্যে শাসক দলের বিরুদ্ধে বিরোধীদের টক্কর জোরদার হলেও দলের অন্দরের খামতির জন্য পিছিয়ে পড়তে হচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকেই। এই পরিস্থিতিতে স্বয়ং দলের প্রধান নেতা নরেন্দ্র মোদীর মুখে প্রশংসাবাক্য শোনার পর রাজ্যনেতৃত্বের আত্মবিশ্বাস বেড়ে গিয়ে দোনোমনা নেতাদের মধ্যে ঐক্য ফের জোরালো হয় কিনা, তার অপেক্ষায় রয়েছে শীর্ষ নেতৃত্ব।