সংক্ষিপ্ত

পুজোয় ক্লাবগুলিকে রাজ্য সরকারের দেওয়া আর্থিক অনুদান নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। এই মুহূর্তে বঙ্গ রাজনীতির এক অন্যতম হট টপিক এই পুজো অনুদান। যা নিয়ে বারবার সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।

পুজোয় ক্লাবগুলোকে যে আর্থিক অুদান দেওয়া হয় তা আসলে বাংলার অর্থনীতির চাবিকাঠি। বাংলার অর্থনীতির ঊর্ধ্বগামিতা এতেই জুড়ে রয়েছে। এমনই ভাষায় পুজোয় ক্লাবগুলোকে আর্থিক অনুদান দেওয়া নিয়ে ফের একবার প্রকাশ্যে মুখ খুললেন ফিরহাদ হাকিম। আর সেই সঙ্গে এর জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একশো শতাংশ কৃতিত্ব দিয়েছেন কলকাতা শহরের মহানাগরিক ফিরহাদ হাকিম। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় টাউন হলে দুর্গাপুজোকে ইউনেস্কোর হেরিটেজ তকমার বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল ফোরাম ফর দুর্গোৎসব কমিটি। সেখানেই ফিরহাদ হাকিম বক্তব্য রাখতে গিয়ে এমন মন্তব্য করেন।

আসলে পুজোয় ক্লাবগুলোকে অনুদান দেওয়া নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। আঞ্চলিক সংবাদমাধ্যম থেকে জাতীয় সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে বারংবার ঠাঁই পেয়েছে পুজোয় ক্লাবগুলোকে রাজ্য সরকারের আর্থিক অনুদান দেওয়া বিতর্ক। একাধিক মিডিয়া রিপোর্টে উঠে এসেছে, এই আর্থিক অনুদানের মধ্যে দিয়ে কীভাবে অর্থ-নয় ছয় হয়েছে সেই বিষয়গুলি। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও এই নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল কংগ্রেসকে নিশানা করতে কোনও কসুর বাদ রাখেনি। এমনকী সাধারণ জনমানসেও এর তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে। কারণ এই আর্থিক অনুদান দিতে গিয়ে বছর বছর রাজ্য সরকারের কাঁধে অতিরিক্ত কয়েক শো কোটি টাকার ভার কাঁধে চেপেছে। সাধারণ মানুষের যুক্তি ছিল যে ঋণের দায় মেটাতে যখন রাজ্য সরকারের ভাড়ে মা ভবানীর মতো অবস্থা, সেখানে এই অতিরিক্ত আর্থিক বোঝা কেন?

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে তাঁর দল তৃণমূল কংগ্রেসের বড় বড় নেতারাও এই অনুদানের পক্ষেই সওয়াল করেছেন। তাঁদের প্রত্যেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কন্ঠে সুর মিলিয়ে বলেছেন যে এত প্রান্তিক মানুষরা উপকৃত হচ্ছেন।

বৃহস্পতিবার টাউন হলে ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের অনুষ্ঠানে মহানাগরিক ববি হাকিমের গলাতেও ফের একবার শোনা গেল পুজোর অনুদান নিয়ে মমতাপ ভূয়সী প্রশংসা। তিনি বলেন, “পুজোকে বাংলার সৃষ্টি সংস্কৃতির জায়গায় নিয়ে আসা, পুজোকে এই উচ্চতায় নিয়ে আসা, পুজোর মধ্যে দিয়ে এই বিশাল মিলন উৎসব, এইটা চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি ক্রমশ উৎসাহ দিয়ে দিয়ে বাংলার এই উৎসবকে এগারো বছর ধরে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন।”

পুজোর অনুদান নিয়ে বিতর্কে রীতিমতো বিরোধীদের দিকে আক্রমণ শানিয়ে ফিরহাদ হাকিম বলেন, “অনেকে সমালোচনা করেছেন। পঞ্চাশ হাজার টাকা অথবা ষাট হাজার টাকা করে সরকারের তরফে দেওয়া হচ্ছে। এই পুজো করে কী হবে? কিন্তু, তাঁরা বুঝছেন না, বাংলার অর্থনীতির যে চাবিকাঠি, সেটা আটকে রয়েছে এই পুজোর মধ্যে।”

২০২২ সালের দুর্গাপুজোর আগে খড়্গপুর আইআইটি-র গবেষণাকে উদ্ধৃত করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে হাজার হাজার কোটি টাকার ব্য়বসা হয়। এ বার একই সুর শোনা গেল রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতা পৌরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের গলাতেও। পুজোকে ঘিরে বাংলার অর্থনীতি প্রভূত চাঙ্গা হয়েছে বলে মন্তব্য করলেন তিনি। তাঁর কথায়, বঙ্গে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয় দুর্গাপুজোর কারণেই। এই পুজো দ্বারা দারুণ উপকৃত হন গ্রাম বাংলার প্রত্যন্ত এলাকার মানুষজনও। এই আর্থিক চক্রটা বাংলার অর্থনীতির জন্য খুব জরুরি। এটা মুখ্যমন্ত্রী অনুধাবন করেছেন। তাই ছোট পুজো হলেও, সেই পুজোটাও যাতে বন্ধ না হয়, সেখানেও যাতে চারটে ঢাকি ঢাক বাজাতে পারেন, দুটো শ্রমিক কাজ করতে পারেন, তাঁদের রুজিরুটি যাতে নিশ্চিত হয়, সেই জন্যই তাঁর পঞ্চাশ অথবা ষাট হাজার টাকা অনুদান ব্যবস্থা।

সরকারি অনুদানের মাধ্যমেই একটা চেইন সিস্টেমে গ্রামের একেবারে প্রান্তিক মানুষজন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি। সমস্ত পুজো উদ্যোক্তাদের দুর্গাপুজোর উদ্দেশ্যে পঞ্চাশ বা ষাট হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়ার প্রভূত প্রশংসা করলেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী। এর পাশাপাশি ধন্যবাদ জানালেন বঙ্গের দুর্গাপুজোকে ইউনেস্কোর দরবারে পৌঁছে দেওয়া গবেষক প্রফেসর তপতী গুহ ঠাকুরতাকেও। তাঁর সঙ্গে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলার স্বাস্থ্য মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং দক্ষিণ কলকাতার সাংসদ মালা রায়। টাউন হলে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বঙ্গের দুর্গাপুজোর সাথে যুক্ত বেশ কয়েকজন প্রবাদ প্রতিম ব্যক্তিত্বকে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়। বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এক সঙ্গে একটি আলোচনাতেও অংশ নেন।

আরও পড়ুন-
বাংলার মোশারফের পর কর্নাটকের বিজয়লক্ষ্মী, ধর্ষণরোধী জুতো বানিয়ে তাক লাগিয়ে দিলেন দশম শ্রেণীর ছাত্রী
অমিতাভ বচ্চনের বক্তব্য টেনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ অমিত মালব্যর, পালটা নিশানা করলেন সাংসদ নুসরত
শুক্রবার রাতেই কলকাতায় অমিত শাহ, ভাইস চেয়ারম্যান পদে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়