সংক্ষিপ্ত
২০২০ ও ২০২১ সালে গাছ ঘরই ছিল বরুণের ভরসা। ধীরে ধীরে গ্রামের অনেক পড়ুয়াই অনলাইন ক্লাস করার জন্য আসতে থাকে বরুণের এই গাছ ঘরে।
কথায় আছে ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়। সেই ইচ্ছেশক্তির জোড় যে কতটা তার জ্বলন্ত চিত্রই ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ি ব্লকের জয়পুর গ্রামে বরুণ দাস। করোনা প্রকপে যখন দেশজুড়ে লকডাউন চলছে, বেলপাহাড়ির এই ছোট্টো গ্রামে তখন পড়াশোনা করা হয়ে উঠেছিল প্রায় অসম্ভবেরই মতো। লকডাউনের কারণে স্কুল, কলেজ বন্ধ থাকায় অনলাইন ক্লাসই একমাত্র ভরসা। কিন্তু জঙ্গলে ঘেরা এই গ্রামে বেশিরভাগ সময়ই নেটওয়ার্ক না থাকায় বিপাকে পড়তে হয় ছাত্রছাত্রীদের। একপ্রকার অসম্ভবই হয়ে উঠেছিল ক্লাস করা। কিন্তু হাল ছাড়ার বান্দা নয় বরুণ। নেওয়ার্ক কী ভাবে পাওয়া যায় ভাবতে ভাবতে গাছের উপরেই বানিয়ে ফেললেন আস্ত একটা স্টাডি রুম। ২০২০ ও ২০২১ সালে গাছ ঘরই ছিল বরুণের ভরসা। ধীরে ধীরে গ্রামের অনেক পড়ুয়াই অনলাইন ক্লাস করার জন্য আসতে থাকে বরুণের এই গাছ ঘরে।
ঝাড়গ্রাম জেলার বেলপাহাড়ি ব্লকের জঙ্গলে ঘেরা গ্রাম জয়পুর। ৮০০ স্কোয়ার ফুটের বাড়িকে ঘিরে রেখেছে কমপক্ষে ৭০ টি গাছ। এখানেই বেড়ে ওঠা বরুণ দাসের। জয়পুর হাই স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর শিলদা কলেজ থেকে বিএসসি পাশ করে বর্তমানে বিএড পড়ছেন তিনি। পাশাপাশি নিচ্ছেন সরকারি চাকরির প্রস্তুতিও। এখন গ্রামে একটি তেলেভাজার দোকানও চালান বরুণ। এছাড়া অবসরে টিউশনি পড়ান তিনি। ছোট থেকেই গাছগাছালির মধ্যে শান্ত পরিবেশে বেড়ে ওঠা তাঁর। ছোট বেলায় কার্টুনে প্রথম দেখেছিলেন ট্রি-হাউজ জিনিসটা। সেই থেকেই গাছের ঘর বানিয়ে থাকার বড় সাধ ছিল বরুণের। অবশেষে তাঁর সেইব সাধ পূরণ হল কঠিন সময় এসে। বিপদের দিনে ছোটবেলার বন্ধু গাছই হয় দাঁড়াল তাঁর মুশকিল আসান।
আজকের ডিজিটাল পৃথিবীতে চাকরি থেকে পড়াশোনা, সবক্ষেত্রেই অনিবার্য ইন্টারনেট। বিশেষত ২০২০ ও ২০২১ সালে করোনাকালীন পরিস্থিতিতে ইন্টারনেট আমাদের জীবনের এক অংশই হয়ে উঠেছিল। কিন্তু বাংলার বহু ছোট ছোট গ্রামে টাওয়ার ব্যবস্থা ঠিক না থাকায় নেটওয়ার্কের অসুবিধায় ভুগতে হয় বাসিন্দাদের। জয়পুর গ্রামও তার ব্যাতিক্রম নয়। সারা পৃথিবীতে যখন পড়াশোনার একমাত্র উপায় অনলাইন ক্লাস, জয়পুরের পড়ুয়ারা তখন নেটওয়ার্কের সমস্যার কারণে বিপাকে পড়েছিল। কিছু ইচ্ছে থাকলে ঠেকায় কে? বিএসসি-এর ছাত্র বরুণ দাস পড়াশোনার জন্য গাছের উপরই বানিয়ে ফেললেন স্টাডিরুম। নিম গাছ এমনিতেই শক্ত পোক্ত গাছ। তিনটি মোটা গাছের ডালের উপর বাঁশ , কাঠ পরপর বেঁধে এর উপর খড় , চাটাই , ত্রিপল দিয়ে তৈরি হল বরুণের গাছ ঘর। বাঁশের সিঁড়ি লাগিয়ে হল ঘরে ঢোকার ব্যবস্থা। লকডাউন উঠে গেলেও এখনও রয়ে গিয়েছে বরুণের স্বপ্নের গাছ ঘর।
আরও পড়ুন -
মাইক্রোসফট, অ্যামাজনের পথেই পা বাড়াল গুগুল, রাতারাতি চাকরি গেল ৪৫৩ জন ভারতীয় কর্মীর