সংক্ষিপ্ত
শহর ও আশপাশের গ্রামের মহিলারা স্বনির্ভর গোষ্ঠীদের সঙ্গে জোট বেঁধে তাদের উদ্যোগেই মদের ভাটি উচ্ছেদ ও মদ বিক্রি বন্ধ করতে অভিযান চালাল দিনভর। এলাকার বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালিয়ে মাদক দ্রব্য উদ্ধার এবং মাদক তৈরির কাঁচামাল উদ্ধার করে তা নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।
মুর্শিদাবাদের বুকেই রমরমিয়ে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় চলছে চোলাই মদের ভাটি। দীর্ঘদিন ধরে মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জ শহরের পুরো এলাকা মুকুন্দবাগের বড় নগর, মাহাত পাড়া সহ বিভিন্ন স্থানে ফাঁদ পেতে বসেছে একদল কারবারি। এমনই অভিযোগ স্থানীয়দের। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত এলাকার প্রমিলা বাহিনীর প্রতিরোধের কাছে রীতিমতো পিছু হটতে বাধ্য হল ওই সব চোলাই কারবারিরা।
শহর ও আশপাশের গ্রামের মহিলারা স্বনির্ভর গোষ্ঠীদের সঙ্গে জোট বেঁধে তাদের উদ্যোগেই মদের ভাটি উচ্ছেদ ও মদ বিক্রি বন্ধ করতে অভিযান চালাল দিনভর। এলাকার বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালিয়ে মাদক দ্রব্য উদ্ধার এবং মাদক তৈরির কাঁচামাল উদ্ধার করে তা নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। পরে মাদক বর্জনে জনমত গঠন করতে এলাকায় মিছিলও করেন মহিলারা। চমকে যান সকলে। ঘটনার খবর পেয়ে টনক নড়ে পুলিশ প্রশাসনের। পরিস্থিতি যাতে হাতের বাইরে বেরিয়ে না যায় সেকথা মাথায় রেখে ফাঁড়ির পুলিশ ওই এলাকায় টহলদারি শুরু করে। এদিকে পুলিশের সামনেই পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তোলেন বাসিন্দারা।
এই বিষয়ে জিয়াগঞ্জ আজিমগঞ্জ পুর প্রশাসক প্রসেনজিৎ ঘোষ মনু বলেন, “পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করে এলাকার পরিবেশ কীভাবে শান্ত করা যায় তার ব্যবস্থা করা হবে। তাছাড়া একালায় অবৈধ মদ তৈরি ও বিক্রি বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।" বিশেষ সূত্র থেকে জানা গিয়েছে, জিয়াগঞ্জ আজিমগঞ্জ পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের, মুকুন্দবাগ ও বড় নগর এলাকার মধ্যে পড়ে মাহাত পাড়া। মূলত আদিবাসী এবং চ্যাঁই মণ্ডল সম্প্রদায়ের বাস এই মাহাত পাড়ায়। এখানকার বেশিরভাগ মানুষই দিন মজুর ও কিছু মানুষ সবজি বিক্রি করেন। ফলে দিনের বেলায় এলাকায় পুরুষ মানুষের আনাগোনা লক্ষ করা যায় না। কিন্তু, দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতেই চোলাইয়ের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয় এই এলাকা।
স্থানীয় মহিলাদের অভিযোগ, সারা দিনে ৩০০ টাকা রোজগার করলে বাড়ির পুরুষরা ২০০ থেকে ২৫০ টাকার মদ খেয়ে বাড়ি ফেরেন। বাড়িতে ফিরে পরিবারের উপর শুরু হয় শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার। নিত্য দিনের এই চেনা ছবি থেকে নিস্তার পেতে এলাকার মহিলারা একাধিকবার জিয়াগঞ্জ থানায় এবং আজিমগঞ্জ ফাঁড়িতে আবেদন করেছেন। কিন্তু, পুলিশ কোনও পদক্ষেপ না করাই এদিন প্রমীলা বাহিনী সম্মিলিতভাবে মাদক উচ্ছেদ অভিযানে নামেন। ভেঙে ফেলা হয় এলাকার মদের ভাঁটি। আর যাদের বাড়িতে মদ জমা করে রাখা ছিল তাদের বাড়িতে ঢুকে বের করে নষ্ট করা হয় মদের বোতল।
প্রসঙ্গত, বছর তিনেক আগে এলাকার প্রমীলা বাহিনী মদের ভাঁটিতে আগুন লাগিয়ে দিয়ে এলাকা শান্ত করেছিল। কিন্তু, তারপর ফের ওই এলাকায় মদের রমরমা বেড়ে চলেছে। আর তার জেরেই এই অভিযান চালানো হয়। এই গ্রামের মহিলারা বলেন, "পরিবারের পুরুষদের মদের নেশায় রাতের ঘুম উঠে গিয়েছে মহিলাদের। তার উপর আছে শারীরিক অত্যাচার। এসব থেকে রেহাই পেতে আমরা নিজেরাই পথে নামলাম। চোলাই এর জন্য মানুষকে নানান বিপর্যয়ের সম্মুখীনও হতে হয়েছে। পুলিশকে বলেও কোনও কাজ হয়নি। তাদের সঙ্গে এই সকল কারবারিদের একাংশের যোগসাজশের জেরে রমরমিয়ে চলছে চোলাইয়ের ঠেক। আমরা সাধ্যমতো প্রতিরোধ গড়ে তুললাম। আগামী দিনে এতেও যদি প্রশাসনের অবস্থানের পরিবর্তন না হয় তাহলে জেলাজুড়ে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারাসহ সমাজের অন্যান্যদের নিয়ে এই চোলাই এর বিরুদ্ধে পথে নামব আমরা।" এলাকার মহিলাদের চাপে ১ জনকে গ্রেফতার করেছেন পুলিশ। পাশাপাশি চোলাই তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জামও উদ্ধার করা হয়েছে।