শাস্ত্র মতে, সৃষ্টির পূর্বে একমাত্র শিবই বর্তমান ছিলেন। তিনিই লীলাচ্ছলে ব্রহ্মারূপে সৃষ্টি করেন, বিষ্ণুরূপ ধারণ করে পালন করেন আবার রুদ্ররূপ ধারন করে সংহার করেন। ব্রহ্মা-বিষ্ণু-হর তারই সৃষ্টি-স্থিতি-লয়ের তিনটি রূপভেদ মাত্র। তাই এই তিন রূপের মধ্যে সত্বার কোন পার্থক্য নেই। তবু সনাতন রূপ পরম শিবরূপই মূলস্বরূপ।
আরও পড়ুন- আর্থিক সমস্যায় ভুগছেন, ফাল্গুন পালন করুন এই নিয়মগুলি
শিব হলেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সর্বোচ্চ দেবতা। সনাতন ধর্মের শাস্ত্রসমূহে তিনি পরমসত্ত্বা রূপে ঘোষিত। শিব সৃষ্টি-স্থিতি-লয়রূপ তিন কারনের কারন, পরমেশ্বর- এটা তার প্রণাম মন্ত্রেই বার বার উঠে এসেছে। তিনি জন্মরহিত, শাশ্বত, সর্বকারণের কারণ; তিনি স্ব-স্বরূপে বর্তমান, সমস্ত জ্যোতির জ্যোতি; তিনি তুরীয়, অন্ধকারের অতীত, আদি ও অন্তবিহীন। এছাড়াও বেদান্ত অনুসারে তিনিই র মহা ঈশ্বর । শ্বেতাশ্বতর উপনিষদে বলা হয়েছে - "যদাহতমস্তন্ন দিবা ন রাত্রির্নসন্ন চাসচ্ছিব এব কেবলঃ।"
আরও পড়ুন- এই মাসে অর্থপ্রাপ্তির যোগ রয়েছে এই রাশিগুলির, জেনে নিন সেই তালিকা
অর্থাৎ যখন আলো, অন্ধকারও, দিন -রাত্রি, সৎ-অসৎ ছিল না- তখন কেবলমাত্র ভগবান শিবই ছিলেন। বেদান্ত বৈদিক সনাতন ধর্মের ভিত্তি তথা বেদের শিরোভাগ। সম্পূর্ণ বেদান্তে শিব ব্যতীত কারও সম্পর্কে ব্যাখা করা হয়নি। শুধুমাত্র শিবের ক্ষেত্রেই বলা হয়েছে "শিব এব কেবলঃ"। সুতরাং সৃষ্টির পূর্বে একমাত্র শিবই বর্তমান ছিলেন। তিনিই লীলাচ্ছলে ব্রহ্মারূপে সৃষ্টি করেন, বিষ্ণুরূপ ধারণ করে পালন করেন আবার রুদ্ররূপ ধারন করে সংহার করেন। ব্রহ্মা-বিষ্ণু-হর তারই সৃষ্টি-স্থিতি-লয়ের তিনটি রূপভেদ মাত্র। তাই এই তিন রূপের মধ্যে সত্বার কোন পার্থক্য নেই। তবু সনাতন রূপ পরম শিবরূপই মূলস্বরূপ। তাই ভগবান শিব সৃষ্টির প্রাক্ষালে শ্রীবিষ্ণুকে বলেন-
আরও পড়ুন- সকল ব্রতের সর্বশ্রেষ্ঠ মহাশিবরাত্রি ব্রত, রইল শিব চতুর্দশী পালনের নির্ঘন্ট
"অহং ভবানয়ঞ্চৈব রুদ্রোহয়ং যো ভবিষ্যতি।
একং রূপং ন ভেদোহস্তি ভেদে চ বন্ধনং ভবেৎ।।
তথাপীহ মদীয়ং শিবরূপং সনাতনম্।
মূলভূতং সদা প্রোক্তং সত্যং জ্ঞানমনন্তকম্।।"(-জ্ঞানসংহিতা)।
অর্থাৎ আমি, তুমি, এই ব্রহ্মা এবং রুদ্র নামে যিনি উৎপন্ন হবেন, এই সকলই এক। এদের মধ্যে কোনও ভেদ নাই, ভেদ থাকলে বন্ধন হত। তথাপি আমার শিবরূপ সনাতন এবং সকলের মূল স্বরূপ বলে কথিত হয়, যা সত্য জ্ঞান ও অনন্ত স্বরূপ। এজন্য ভগবান বিষ্ণু এবং তার বিভিন্ন অবতারগণ সর্বদা শিব উপাসনাই করতেন। তাই শ্রীকৃষ্ণেরও আরাধ্য ছিলেন পরমেশ্বর শিব। ভগবান শিবের বরেই বিষ্ণু বা কৃষ্ণের ভগবত্বা। তাই হিন্দুধর্মের মূল স্তম্ভ ত্রিশক্তির (ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব) মধ্যে শিবই প্রধান। তিনি সমসাময়িক হিন্দুধর্মের তিনটি সর্বাধিক প্রাচীন সম্প্রদায়ের অন্যতম শৈব সম্প্রদায়ের প্রধান দেবতা। এছাড়া শিব স্মার্ত সম্প্রদায়ে পূজিত ঈশ্বরের পাঁচটি প্রধান রূপের গণেশ, শিব, সূর্য, বিষ্ণু ও দুর্গা একটি রূপ। তার বিশেষ রুদ্ররূপ ধ্বংস, সংহার ও প্রলয়ের দেবতা।