এপার ও ওপার বাংলায় এক মাস ধরে পালিত হত টুসু, বাংলার ঐতিহ্যবাহী এই উৎসব আজ বিলুপ্তির পথে

  • টুসু উৎসব বাংলার এক ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন উৎসব
  • অগ্রহায়ণ থেকে পৌষ সংক্রান্তি পর্যন্ত চসত এই উৎসব
  • টুসু দেবীর উদ্দেশ্যে চিঁড়ে, গুড়, বাতাসা, মুড়ি, ছোলা ইত্যাদি ভোগ নিবেদন
  • ভোগ হিসেবে নানারকম মিষ্টান্ন, ছোলাভাজা, মটরভাজা, মুড়ি, জিলিপি দেওয়া হয়

রাঢ় বাংলার প্রাচীন লোক সংস্কৃতি উৎসব টুসু। পুরো পৌষ মাস ধরে টুসু কে আরাধনা পর পৌষ সংক্রান্তিতে টুসু কে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় বাংলার ঐতিহ্যের এই উৎসব। বর্তমানে উন্নত সমাজ ব্যবস্থায়ও টুসু গানে বা চর্চায় ভাটা পরলেও উৎসবে ভাটা পরেনি এতোটুকুও। আজও পৌষ সংক্রান্তির সকালে বাঁকুড়া বিষ্ণুপুরের দলবদ্ধ হয়ে টুসু শিল্পীরা চৌডাল নিয়ে টুসু উৎসবে মেতে উঠতেন।  পৌষ সংক্রান্তির সকালে বাঁকুড়া বিষ্ণুপুরের দলবদ্ধ হয়ে টুসু শিল্পীরা চৌডাল নিয়ে টুসু উৎসবে মেতে উঠতেন। টুসু উৎসব পালনের সময় পৌষ মাসের শেষ চারদিন চাঁউড়ি, বাঁউড়ি, মকর এবং আখান নামে পরিচিত। চাঁউড়ির দিনে গৃহস্থ বাড়ির মেয়েরা উঠোন গোবরমাটি দিয়ে নিকিয়ে পরিষ্কার করে চালের গুঁড়ো তৈরি করা হয়। 

আরও পড়ুন- আজ মকর সংক্রান্তিতে গঙ্গাসাগরে চলছে পুর্ণার্থীদের স্নান, কড়া নজর রাখছে নৌবাহিনী

Latest Videos

মেয়েরা জাগরণের ঘর পরিষ্কার করে ফুল, মালা ও আলো দিয়ে সাজায়। এই রাতে কিশোরী কুমারী মেয়েরা ছাড়াও গৃহবধূ ও বয়স্কা মহিলারাও টুসু গানে অংশগ্রহণ করেন। এই রাতে টুসু দেবীর ভোগ হিসেবে নানারকম মিষ্টান্ন, ছোলাভাজা, মটরভাজা, মুড়ি, জিলিপি ইত্যাদি নিবেদন করা হয়। বাঁউড়ির দিন অর্ধচন্দ্রাকৃতি, ত্রিকোণাকৃতি ও চতুষ্কোণাকৃতির পিঠে তৈরি করে তাতে চাঁছি, তিল, নারকেল বা মিষ্টি পুর দিয়ে ভর্তি করা হয়। স্থানীয়ভাবে এই পিঠে গড়গড়্যা পিঠে বা বাঁকা পিঠে বা উধি পিঠে ও পুর পিঠা নামে পরিচিত। বাঁউড়ির রাত দশটা থেকে টুসুর জাগরণ অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। 

আরও পড়ুন- মকর সংক্রান্তিতে এই নিয়মগুলি মেনে, সংসার ভরিয়ে তুলুন সুখ ও সমৃদ্ধিতে

পৌষ সংক্রান্তির আগের দিন রাতে চৌ ডাল সাজিয়ে তাকে গোল করে ঘিরে রকমারি গান গেয়ে জাগরন করে। টুসু আরাধনার পর ভোর থেকেই মকর সংক্রান্তিতে টুসুকে শুরু হয় টুসু বিসর্জনের পালা। ঝাড়খণ্ড রাজ্য ও পুরুলিয়া জেলার অধিকাংশ স্থানে পুরাতন প্রথা অনুযায়ী টুসু উৎসবে পালন করা হয়। পুরুলিয়া জেলার বান্দোয়ান থানা এবং বাঁকুড়া জেলার খাতড়া থানার পোরকুলে টুসু মেলায় টুসু মূর্তির প্রচলন রয়েছে। চৌ ডাল নিয়ে টুসু গান আর তার সঙ্গে নাচতে নাচতে বিষ্ণুপুর শহরের  বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজির হয় প্রাচীন যমুনা বাঁধে । যমুনা বাঁধের জলে টুসু এবং চৌডালা কে বিসর্জন দিয়ে সম্পন্ন হয় এই উৎসব। এই ভাবেই পরম্পরা টুসু ভাসান কে ঘিরে বিষ্ণুপুরে উৎসবের আমেজ।

আরও পড়ুন- মকর বা পৌষ সংক্রান্তিতে আজ কোন রাশির উপর কেমন প্রভাব পড়বে জেনে নিন

টুসু বিসর্জনের পরে মেয়েরা নদী বা পুকুরে স্নান করে নতুন বস্ত্র পরেন। ছেলেরা খড়, কাঠ, পাটকাঠি দিয়ে ম্যাড়াঘর বানিয়ে তাতে আগুন লাগান। এইভাবেই ঐতিহ্য বজায় রেখে ঝাড়খণ্ড ও পুরুলিয়ার অধিকাংশ গ্রামে পুরাতন প্রথা অনুযায়ী টুসু উৎসবে পালিত হয়। পৌষ সংক্রান্তি বা মকরের ভোরবেলায় মেয়েরা দলবদ্ধভাবে গান গাইতে গাইতে টুসু দেবীকে বাঁশ বা কাঠের তৈরী রঙিন কাগজে সজ্জিত চৌডল বা চতুর্দোলায় বসিয়ে নদী বা পুকুরে নিয়ে যান। সেখানে প্রত্যেক টুসু দল একে অপরের টুসুর প্রতি বক্রোক্তি করে গান গাইতে দেবী বিসর্জন করে থাকেন।  বিভিন্ন ভঙ্গীতে অশ্ব বাহিনী বা ময়ূর বাহিনী মূর্তিগুলির গায়ের রঙ হলুদ বর্ণের ও শাড়ি নীল রঙের হয়ে থাকে। মূর্তির হাতে কখনও শঙ্খ, পদ্ম, পাতা বা কখনো বরাভয় মুদ্রা দেখা যায়। এই উৎসবের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হল টুসু সংগীত। এই সংগীতের মূল বিষয়বস্তু লৌকিক ও দেহগত প্রেম। 

Share this article
click me!

Latest Videos

'জঙ্গিরা ধরা তো পড়ছে, তাহলে আর চিন্তার কি আছে?' হাসতে হাসতে উত্তর রচনার | Rachna Banerjee News
Suvendu Adhikari Live : বিধানসভার বাইরে বিস্ফোরক শুভেন্দু অধিকারী, সরাসরি | Bangla News
'মমতা পশ্চিমবঙ্গে ১ কোটি রোহিঙ্গা ঢুকিয়েছে', বিস্ফোরক মন্তব্য Suvendu Adhikari-র
'তৃণমূলের শান্তির ছেলেরা প্রমাণ লোপাট করেছে' | Suvendu Adhikari | #shorts #suvenduadhikari #rgkar
এ যেন লুকোচুরি খেলা! ক্ষণে ক্ষণে স্থান পরিবর্তন, এখনও অধরা বাঘিনী যমুনা | Jhargram Tiger News