নাগরিকত্ব বিল ২০১৯-এর একটা সবচেয়ে বড় গুরুত্বপূর্ণ অংশ বাংলাদেশী শরণার্থী। কারণ, যে সব দেশের শরণার্থীদের কথা ভেবে এই বিলে সংশোধনী আনা হয়েছে তারমধ্যে বাংলাদেশের নামও সর্বাগ্রে রয়েছে। কারণ এই দেশে থেকে আসা অমুসলিম শরণার্থীরা ভারতে আশ্রয় নিলে নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ পাবেন। কিন্তু, যে সব অমুসলিম শরণার্থীরা ভারতে বসবাসের বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারবেন না তাদের স্থান ডিটেনশন ক্যাম্পে হবে, এমনটাও আশঙ্কা করছেন অনেকে।
আরও পড়ুন- নাগরিকত্ব বিলের ধাক্কা, প্রশ্নের মুখে মোদী-আবে শীর্ষ বৈঠক
বলতে গেলে এনআরসি এবং নাগরিকত্ব বিল ২০১৯-এর জোড়াফালায় ভারতে বসবাসকারী মুসলিমদের মধ্যে একটা আতঙ্কের পরিবেশও তৈরি করেছে বলে মনে করছে বিভিন্ন মুসলিম সংগঠন। বিশেষ করে উত্তর-পূর্ব ভারতের সীমান্ত এলাকাতেও এর অত্যন্ত প্রভাব পড়তে বাধ্য বলেও মনে করা হচ্ছে। কারণ, ইতিমধ্যেই নাগরিকত্ব বিল নিয়ে অসম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, মণিপুরে জোর বিক্ষোভ চলছে। স্বাভাবিকভাবেই আতঙ্কে রয়েছে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ। উত্তর-পূর্ব ভারতের সীমান্তে একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে বাংলাদেশের বর্ডার। সুতরাং, ইসলামিক রাষ্ট্র বাংলাদেশেও ভারতের নাগরিকত্ব বিল ২০১৯ এবং এনআরসি প্রভাব ফেলার সম্ভাবনা এক্কেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
আরও পড়ুন- মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে ভাঙচুর, রেলস্টেশনে আগুন, অগ্নিগর্ভ অসমে রাতেই নামল সেনা
এমতাবস্থায় নাগরিকত্ব বিল নিয়ে কিছুটা হলেও অবস্থান স্পষ্ট করেছে বাংলাদেশ। সেদেশের বিদেশমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন সংবাদমাধ্যমকে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে বলেছেন, 'বাংলাদেশের মতো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি খুব কম দেশেই রয়েছে। যদি তিনি (অমিত শাহ) বাংলাদেশে এসে কয়েক মাস বসবাস করেন, তাহলেই তিনি প্রত্যক্ষ করতে পারবেন যে কী পরিমাণ সৌভ্রাতৃত্বের বন্ধনে একে অপরের সঙ্গে সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষ জুড়ে রয়েছেন।' এই প্রসঙ্গে আরও মন্তব্য করতে গিয়ে আব্দুল মোমেন জানান, ভারতের নিজের দেশের মধ্যেই বহু সমস্যা রয়েছে, সেই সব সমস্যার সমাধান কী ভাবে হবে তা তারাই ঠিক করবে। বাংলাদেশ এই নিয়ে চিন্তুত নয়। তবে, প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশ আশা করে যে ভারত এমনকিছু করবে না যা দুই দেশের সম্পর্কে প্রভাব ফেলতে পারে। এমন মন্তব্য করেন মোমেন।
আরও পড়ুন- '৪৭-এর পর আরও এক স্বাধীনতার রাত, সদ্যজাত পাক হিন্দুর নাম হল 'নাগরিকতা
এনআরসি ও নাগরিকত্ব বিল ২০১৯ নিশ্চিতভাবেই সরাসরি না হলেও অপ্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলবে বাংলাদেশে। কারণ, ভারতের উদ্বাস্তু-র বেশিরভাগ সমস্যাটাই এই বাংলাদেশি উদ্বাস্তুদের নিয়ে। অসমে এনআরসি লাগু হওয়ার পিছনেও বাংলাদেশি উদ্বাস্তুদের সমস্যাকেই দায়ী করা হয়ে থাকে। যদিও, এনআরসি-র জেরে তৈরি হওয়া বিতর্কে এর আগে তাদের অবস্থান যথেষ্ট কড়াভাবেই পরিষ্কার করেছিল ঢাকা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সরাসরি দিল্লি-কে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, এনআরসি জেরে নাগরিকত্ব হারানোদের কোনওভাবে বাংলাদেশি বলে চালানোর চেষ্টা হলে তা ঢাকা মেনে নেবে না। যার ফলে, এনআরসি-র চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হওয়ার পর যে ১২ লক্ষ মানুষ নাগরিকত্ব হারিয়েছেন তাদের ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখার কথা বলা হলেও ভারত সরকার এখনও সরাসরি তাদের বাংলাদেশি বলে ঘোষণা করেনি। সন্দেহ নেই এনআরসি বিতর্কের পিঠোপিঠি নাগরিকত্ব বিল ২০১৯ নিয়ে তরজাও বাংলাদেশের বিদেশনীতিতে একটা প্রভাব ফেলতে চলেছে।