লাজুক কলেজ পড়ুয়া থেকে জামাত জঙ্গি, কীভাবে মেয়েটার এত বদল ভেবে পাচ্ছে না ধনেখালি

শুক্রবার ধনেখালির এক যুবতী ঢাকায় ধরা পড়েছে সন্ত্রাসবাদী হিসাবে

চার বছর ধরে জেএমবি-র সদস্য ছিল সে

এই কথা বিশ্বাসই হচ্ছে না ধনেখালির বাসিন্দাদের

ধর্মান্তরিত হওয়ার আগে কেমন ছিল মেয়েটা

 

amartya lahiri | Published : Jul 20, 2020 11:22 AM IST / Updated: Jul 21 2020, 11:00 AM IST

এমনিতে শাড়ির জন্য সুপরিচিত ধনিয়াখালি বা ধনেখালি। কিন্তু হুগলী জেলার এই এলাকাটির নাম সম্প্রতি সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছে সম্পূর্ণ অন্য এক কারণে। গত শুক্রবার এখানকারই মেয়ে আয়েশা জন্নত মোহনা-কে, সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছে ঢাকায়। জানা গিয়েছে গত চার বছর ধরে সে সন্ত্রাসবাদী দল জামাত-উল-মুজাহিদিন বা  জেএমবি-র সদস্য। তাদের হয়ে দলে লোক জোগার করার কাজ করে। অবশ্য ধনেখালির বাসিন্দারা এই কথা বিশ্বাসই করতে পারছেন না। সুন্দর করে চুল বেঁধে হাসিমুখে সকলকে শুভেচ্ছা জানাতে জানাতে সাইকেলে করে যে মেয়েটা রোজ কলেজে যেত, সে কী করে সন্ত্রাসবাদী হয়? অবশ্য, সেটা বেশ কয়েকদিন আগের কথা, তখন তার নাম ছিল প্রজ্ঞা দেবনাথ।

আয়েশা জন্নত মোহনা বা প্রজ্ঞা দেবনাথ যেদিন বাড়ি ছেড়েছিলেন, সেই দিনটার কথা তর মা গীতা দেবনাথ-এর এখনও স্পষ্ট মনে আছে। তিনি জানিয়েছেন দিনটা  ছিল ২০১৬ সালের ২৫ শে সেপ্টেম্বর, দুর্গাপূজার ঠিক আগে। প্রজ্ঞা সেসময় কলেজের তৃতীয় বর্ষে পড়ত। 'একটু আসছি' বলে সকালে বের হয়েছিল মেয়েটা। বেশ কয়েক ঘন্টা পরও বাড়ি না ফেরায় পরিবারের লোকেরা তাকে ফোন করেছিল। কিন্তু, তার মোবাইল ফোনটা বন্ধ ছিল। পাগলের মতো এদিক ওদিক খোঁজাখুঁজি করে প্রজ্ঞাকে কোথাও না পেয়ে তাঁরা পুলিশে খবর দিয়েছিলেন। কিন্তু, পুলিশও তার সন্ধান পায়নি।

দুদিন পর দুপুরের দিকে গীতা দেবনাথকে ফোন করে প্রজ্ঞা জানিয়েছিল সে বাংলাদেশে আছে। আর সে আর প্রজ্ঞা দেবনাথ নেই, ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে হয়েছে আয়েশা জন্নত মোহনা। সেদিনও মায়ের আশীর্বাদ চেয়েছিল আয়েশা। সেই শেষবার মা বা বাড়ির কারোর সঙ্গে কথা হয়েছিল লাজুক মৃদুভাষী কলেজ পড়ুয়া থেকে জেএমবি জঙ্গি হওয়া মেয়েটি। গীতা জানিয়েছেন, কথা বলতে বলতে হঠাৎ ফোন কেটে দিয়েছিল মেয়ে। তারপর থেকে ওই নম্বরে তিনি অনেকবার ফোন করেছেন, কিন্তু, সেই ফোন আর বাজেনি।

তবে কীভাবে মেয়েটির এত বদল ঘটল, তা বুঝে পাচ্ছেন না আয়েশা বা পপ্রজ্ঢার মা-বাবা থেকে শুরু করে পাড়া-প্রতিবেশীরাও। গীতা জানিয়েছেন তাঁর মেয়ে প্রতিদিন সকালে এক কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে কলেজে যেত। বিকেলে ঠিক সময়ে ফিরে আসত। তার আচার-আচরণে অস্বাভাবিক কিচ্ছু ছিল না। দিনমজুরের কাজ করা প্রজ্ঞার বাবা-ও জানিয়েছেন মেয়ের মনে কী চলছে তার কোনও হদিশ তিনি পাননি। আর প্রতিবেশীরা বলেছেন বড় লাজুক স্বভাবের ছিল প্রজ্ঞা। এমনকী বেশি বন্ধু-বান্ধবও ছিল না। তাদের চোখে সে একজন সরল কলেজ পড়ুয়া মেয়ে ছিল। রাস্তায় চেনা-পরিচিতদের দেখলেই সবসময় মিস্টি করে হাসত। তাদের কুশল জিজ্ঞেস করত। সেই মেয়ের এই পরিবর্তন অবাক করেছে তাদের। গীতা দেবনাথ অবশ্য বলছেন, এইবদল যতই অবাক করা হোক, তিনি চান আইন অনুযায়ী শাস্তি পাক তাঁর মেয়ে।

 

Share this article
click me!